উন্নত নৈতিকতা চর্চার গুরুত্ব
মোহাম্মদ শাহ আলম
প্রকাশ: ২৪ জানুয়ারি ২০২৫, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
প্রতিদিন গণমাধ্যমে প্রকাশিত দুর্নীতির তথ্যগুলো বিবেচনায় নিলেই স্পষ্ট হয়, দেশে নৈতিক মূল্যবোধের অবক্ষয় কতটা ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। দেশে শিক্ষার হার বাড়ছে, সারা দেশের মানুষের মধ্যে প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার প্রতি আগ্রহও বাড়ছে। এ প্রবণতা আমাদের আশাবাদী হতে উদ্বুদ্ধ করে। আমরা লক্ষ্য করছি, যুগ যুগ ধরে দেশের প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষায় নৈতিকতা ও মূল্যবোধের চর্চাকে গুরুত্ব প্রদানে উৎসাহিত করা হয়েছে। দেশে শিক্ষার প্রতি মানুষের আগ্রহ বৃদ্ধির প্রেক্ষাপটে আমরা আশা করেছিলাম, সমাজে উচ্চ নৈতিকতা ও উন্নত মূল্যবোধের চর্চায় আগ্রহী মানুষের সংখ্যা বাড়বে। আমাদের এ প্রত্যাশা পূরণ না হওয়ার বিষয়টি দুঃখজনক। প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষায় শিক্ষিতদের অনেকে তাদের আচরণে উন্নত নৈতিকতার পরিচয় দিতে অক্ষম হচ্ছেন। প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা গ্রহণ করা এবং বাস্তব জীবনের আচরণে এর প্রয়োগ-এ দুয়ের মধ্যে ব্যাপক পার্থক্যের বিষয়টি দুঃখজনক। এটা স্পষ্ট যে, সমাজে উচ্চ নৈতিকতা ও উন্নত মূল্যবোধের চর্চায় গুরুত্ব না বাড়ালে শুধু প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষায় আমাদের প্রত্যাশা পূরণ হবে না।
শিক্ষার প্রাথমিক স্তরে শিক্ষার্থীরা যা কিছু আত্মস্থ করে, পরবর্তী জীবনে এর বড় প্রভাব থাকে। গুণিজনরাও এ বিষয়ে একমত। এ প্রেক্ষাপটেই সমগ্র বিশ্বে প্রাথমিক শিক্ষায় গুরুত্ব বাড়ানো হয়েছে। আমাদের দেশেও একই প্রবণতা লক্ষ্য করা যাচ্ছে। আশা করা যাচ্ছে, প্রাথমিকের প্রতি এ গুরুত্ব আগামীতে কাঙ্ক্ষিত মাত্রায় সুফল দেবে। আমরা মনে করি, প্রাথমিকের বিভিন্ন শ্রেণিতে শিক্ষার্থীদের যদি আরও গুরুত্বের সঙ্গে উচ্চ নৈতিকতা ও উন্নত মূল্যবোধের চর্চায় আগ্রহী করে তোলা যায়, আগামীতে এর সুফল পাওয়া যাবে। বিশেষ করে প্রাক-প্রাথমিকের শিক্ষার্থীদের সামনে যদি উচ্চ নৈতিকতা ও উন্নত মূল্যবোধের চর্চার গুরুত্ব যথাযথভাবে তুলে ধরা হয়, আশা করা যায় আগামীতে আরও সুফল মিলবে।
সমাজে উচ্চ নৈতিকতা ও উন্নত মূল্যবোধের চর্চায় গুরুত্ব বাড়ানোর জন্য ইতোমধ্যে সরকারি-বেসরকারিভাবে বিভিন্ন উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। আমরা আশাবাদী, এসব উদ্যোগের সুফল মিলবে। অনেক বিশেষজ্ঞ মনে করেন, প্রাথমিক ও প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষার্থীদের বিষয়ে এ বিষয়ক প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হলে বেশি সুফল মিলবে। কাজেই দেশের সরকারি-বেসরকারি সব প্রাথমিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে এ বিষয়ে গুরুত্ব বাড়ানো দরকার। উপ-আনুষ্ঠানিক শিক্ষার ক্ষেত্রেও উচ্চ নৈতিকতা ও উন্নত মূল্যবোধ চর্চার বিষয়ে যথাযথ গুরুত্বারোপ করা দরকার। শিক্ষার প্রতিটি স্তরে উচ্চ নৈতিকতা ও উন্নত মূল্যবোধ চর্চার বিভিন্ন দিক শিক্ষার্থীদের সামনে তুলে ধরা দরকার। প্রত্যেকে যদি জীবনব্যাপী শিক্ষাবিষয়ক কর্মকাণ্ডের সঙ্গে যুক্ত থাকে, তাহলে এ বিষয়ে কাঙ্ক্ষিত মাত্রায় সুফল মিলবে। বস্তুত সমাজের সর্বস্তরে উচ্চ নৈতিকতা ও উন্নত মূল্যবোধের চর্চায় যথাযথ গুরুত্ব না দিলে শুধু প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষাবিষয়ক প্রকল্প বাস্তবায়ন করে এ বিষয়ে কাঙ্ক্ষিত সুফল মিলবে কি না সন্দেহ। বাস্তব পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে আলোচিত বিষয়ে সময়োপযোগী পদক্ষেপ নেওয়া দরকার। ইসলামিক ফাউন্ডেশনের একজন কর্মকর্তা হিসাবে দেশের বিভিন্ন এলাকায় দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে আমার যে অভিজ্ঞতা হয়েছে তাতে এটা স্পস্ট হয়েছে, প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষায়ও মানুষের আগ্রহ বাড়ছে। মানুষের এ আগ্রহ থেকেই স্পষ্ট, সন্তানের নৈতিক শিক্ষার বিষয়েও তারা কতটা আগ্রহী। মানুষের এই আগ্রহ কাজে লাগানোর পদক্ষেপ নেওয়া দরকার। উল্লেখ্য, ইসলামিক ফাউন্ডেশনের প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষা কর্মসূচিতে শিশুদের নৈতিক শিক্ষার ওপর বিশেষ গুরুত্ব আরোপ করা হয়।
বর্তমানে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের ব্যাপক প্রভাব বিস্তার-এক ভয়াবহ ভাইরাসের তাণ্ডবের সঙ্গে তুলনা করা যায়। এ মাধ্যমের চলমান প্রভাব যদি অব্যাহত থাকে, তাহলে আলোচিত বিষয়ে যত বৃহৎ প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হোক না কেন, সুফল মিলবে কিনা সন্দেহ। এ বিষয়ে প্রতিটি পরিবারকে বিশেষভাবে সতর্ক-সচেতন থাকতে হবে। যেসব শিশু এসব বিষয়ে পরিবারে যথাযথ শিক্ষার সুযোগ থেকে বঞ্চিত হয় তারা যাতে প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষায় সে অভাব পূরণ করতে পারে, এজন্য যথাযথ উদ্যোগ নেওয়া দরকার।