Logo
Logo
×

অল্পকথা

প্রবীণরা বোঝা নয়, ভরসা

Icon

কে এম ছালেহ আহমদ

প্রকাশ: ২৩ জানুয়ারি ২০২৫, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

পরিবারের একেকজন প্রবীণ সদস্য, আমাদের জন্য একেকটি বটবৃক্ষ। এ বটবৃক্ষের ছায়াতলে দীর্ঘসময় আশ্রয় পেতে প্রয়োজন তাদের পর্যাপ্ত সেবা, যত্ন ও মনোযোগ। প্রবীণ বয়স জীবনের এমনি একটি অধ্যায়, যখন কর্মস্পৃহা হ্রাস পায় এবং নানা ধরনের স্বাস্থ্যগত সমস্যা ও জটিলতা দেখা দেয়। তখন স্বজনদের সেবা, যত্নই হচ্ছে মূল হাতিয়ার। এ কথা সত্য, বর্তমান সমাজ ও পরিবারে প্রবীণরা ভালো নেই। স্বজনরা মনোযোগী নন তাদের প্রতি। বরং ক্ষেত্রবিশেষে করছেন তাদের সঙ্গে নিষ্ঠুর আচরণ। দিন যত গড়াচ্ছে, দেশের যৌথ পরিবারগুলো ভেঙে তৈরি হচ্ছে একক পরিবার, এতে পরিবার থেকে ছিটকে পড়া প্রবীণরা অসহায় হয়ে পড়ছেন। ফলে কেউ বা আশ্রয় নিচ্ছেন বৃদ্ধাশ্রমে, আবার কেউ বা রাস্তায়। কেউ বা ভিক্ষার ঝুলি হাতে নিয়ে ঘুরছেন, আবার কেউ বা দুঃখ-পরিতাপে দগ্ধ হয়ে বেছে নিচ্ছেন আত্মহননের পথ। বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে। বাড়ছে আমাদের প্রবৃদ্ধি, বাড়ছে মাথাপিছু আয়। পাশাপাশি স্বাস্থ্যসেবা খাতের উন্নয়নের ফলে আমাদের গড় আয়ু বৃদ্ধি পাচ্ছে। গড় আয়ু বৃদ্ধি পাওয়ার সঙ্গে প্রবীণের সংখ্যাও বৃদ্ধি পাচ্ছে। কিন্তু উন্নত বিশ্বের মতো বাংলাদেশে প্রবীণদের জন্য পর্যাপ্ত স্বাস্থ্য সুবিধা ও সামাজিক নিরাপত্তা কার্যক্রম না থাকায় দেশের প্রবীণ জনগোষ্ঠী পারিবারিক, সামাজিক, অর্থনৈতিক ও শারীরিক সমস্যায় প্রতিনিয়তই ভুগছেন। এক সমীক্ষায় জানা যায়, পারিবারিক সহায়তা, পেনশন ও বয়স্ক ভাতার আওতাধীন প্রবীণ ছাড়াও দেশের প্রায় দুই-তৃতীয়াংশ প্রবীণ জনগোষ্ঠী অযত্ন-অবহেলার শিকার। এ জনগোষ্ঠী তাদের জীবনের ন্যূনতম প্রয়োজন মেটাতে অক্ষম। অধিকাংশ প্রবীণের কর্মক্ষমতা লোপ পাওয়ায় পরিবারের সন্তান বা অন্য সদস্যের ওপর নির্ভরশীল হওয়ায় তারা প্রতিনিয়ত মানসিক যন্ত্রণার শিকার হচ্ছেন। যারা সরকারি চাকরিতে নিয়োজিত ছিলেন, অবসর গ্রহণের পর পেনশনের টাকার ওপর নির্ভরশীল হয়ে তাদের জীবন কাটাতে হয়। নিজের ইচ্ছা-অনিচ্ছার কোনো মূল্য থাকে না। অনেক সময় পছন্দের খাবার খেতে ইচ্ছা করলেও লজ্জায় মুখে কিছু বলতে পারেন না। এটি অনেক পরিবারের সদস্য বুঝতে চেষ্টা করেন না বা করলেও না বোঝার ভান করে এড়িয়ে যান। একসময় তারা পরিবার ও সমাজকে অনেক কিছু দিয়েছেন। আজ তারা দিতে পারছেন না বলে তাদের অবহেলা করার কোনো সুযোগ নেই। এ অবস্থায় সবাইকে একদিন আসতে হবে। এটাই চরম বাস্তবতা। পৃথিবীর অন্যান্য দেশ অপেক্ষা আমাদের দেশে পারিবারিক বন্ধন অত্যন্ত সুদৃঢ়। কিন্তু কালের পরিক্রমায় বন্ধনগুলো যেন ধীরে ধীরে ঢিলে হয়ে যাচ্ছে। একান্নবর্তী পরিবারগুলো ভেঙে ছোট হয়ে যাচ্ছে। ফলে প্রবীণরা আরও বেশি একাকিত্বের যন্ত্রণা ও অবহেলার শিকার হচ্ছেন। বাবা-মায়ের প্রতি সন্তানদের যে দায়িত্ব-কর্তব্য তা অধিকাংশ সন্তানই পালন করে না। আমাদের স্বজন, পরমহিতৈষী। তাদের ত্যাগ-সংগ্রাম আর পরিশ্রমের কারণেই সন্তানরা সমাজে প্রতিষ্ঠিত, কেউ স্বনামধন্য, জাতীয় ব্যক্তিত্ব, ধনকুবের। মনে রাখতে হবে, প্রবীণরা পরিবারের বোঝা নয়-ভরসা, ছায়া, পরামশর্দাতা ও অভিভাবক।

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম