বুড়িগঙ্গা রক্ষার উদ্যোগ নিন
উর্মি আক্তার ঝিনুক
প্রকাশ: ২১ নভেম্বর ২০২৪, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
বুড়িগঙ্গার তীরে প্রায় ৪০০ বছর আগে গড়ে উঠেছিল ঢাকা শহর, যা এখন বাংলাদেশের রাজধানী। ২৯ কিলোমিটার দীর্ঘ এ নদীকে একসময় বলা হতো ঢাকার প্রাণ। বর্তমানে দখল-দূষণে বুড়িগঙ্গা একটি প্রাণহীন নদী। জানা যায়, জলযান আর গৃহস্থালি থেকে প্রতিদিন প্রায় ২১,৬০০ ঘনমিটার কঠিন বর্জ্য বুড়িগঙ্গায় এসে পড়ে। অতীতকাল থেকেই বুড়িগঙ্গা বিভিন্নভাবে দূষিত হয়ে আসছে। আগে শুধু ময়লা-আবর্জনা ফেলে নদীটি দূষিত করা হতো; বর্তমানে এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে অপরিশোধিত শিল্প ও পয়ঃবর্জ্য। দখল-দূষণের কবলে পড়ে বুড়িগঙ্গার আজ বেহাল দশা।
বস্তুত বুড়িগঙ্গাভিত্তিক ঢাকা শহরের বিকাশ যখন থেকে শুরু, তখন থেকে দূষণের ইতিহাসও শুরু। তবে নদীতীরের দূষণ গত চার দশকে তীব্র হয়েছে। বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, বুড়িগঙ্গা দূষণের ৮৮ শতাংশ কারণ হলো ঢাকার বর্জ্য নদীতে ফেলা। এছাড়া দুই পাড় চলে যাচ্ছে প্রভাবশালীদের দখলে। শুধু তীর নয়, নদীর মাঝ পর্যন্ত দখল করা হয়েছে। এখন অবস্থা এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে, বিশ্বের দূষিত নদীর তালিকায় বুড়িগঙ্গার নাম উঠে এসেছে। এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিশ্বের যে ১০টি নদী এখন সবচেয়ে বেশি দূষিত, তার মধ্যে বুড়িগঙ্গার অবস্থান ছয় নম্বরে। পরিবেশ ইস্যুতে কাজ করা কনজার্ভ এনার্জি ফিউচারের তথ্য অনুযায়ী, বিশ্বের সবচেয়ে দূষিত নদীগুলোর মধ্যে ঢাকার এ নদীটির অবস্থান পঞ্চম। দূষণের মাত্রা বিবেচনায় বুড়িগঙ্গা এখন সংকটাপন্ন। নদীটির পানিতে দ্রবীভূত অক্সিজেন পৌঁছেছে শূন্যের কোঠায়। ফলে একসময় যে নদীতে ঝাঁকে ঝাঁকে মাছ পাওয়া যেত, সে নদীতে আর মাছের দেখা মেলে না। উল্লেখ্য, পরিবেশ সংরক্ষণ আইন-২০০৭ অনুযায়ী মৎস্য ও জলজপ্রাণীর জন্য প্রতি লিটার পানিতে দ্রবীভূত অক্সিজেন থাকা প্রয়োজন পাঁচ মিলিগ্রাম বা তার বেশি।
২০১১ সালের ১ জুন হাইকোর্টের এক রায়ে বলা হয়েছিল, বুড়িগঙ্গার পানি দূষণ এমন এক পর্যায়ে পৌঁছেছে যে, এ পানিকে আর পানি বলা যাবে না। ওই সময় বুড়িগঙ্গা নদীর সঙ্গে যুক্ত সব পয়ঃপ্রণালি এবং শিল্প-কারখানার বর্জ্য নিষ্কাশন লাইন বন্ধ করতে ওয়াসার চেয়ারম্যানকে নির্দেশ দেন আদালত। কিন্তু এসব নির্দেশের বাস্তবায়ন হয়নি। বরং নদীদূষণ দিন দিন আরও ভয়াবহ হচ্ছে। বুড়িগঙ্গা নদীর দূষণ রোধে একাধিকবার জরিমানাসহ নানা ধরনের শাস্তি দেওয়া হয়েছে নদীর পাড়ে গড়ে ওঠা শিল্প-কারখানাগুলোকে। কিন্তু এত কিছু সত্ত্বেও নদীদূষণ বন্ধ করা যাচ্ছে না। বুড়িগঙ্গা দূষণমুক্ত করার জন্য বিভিন্ন সময় ড্রেজিং, হাজারীবাগের ট্যানারি স্থানান্তর করা হয়েছে। এরপরও বুড়িগঙ্গায় পানি প্রবাহ না থাকায় পানি কালচে রঙ ধারণ করে ছড়াচ্ছে দুর্গন্ধ। বুড়িগঙ্গার পাড় দিয়ে চলাচল করাই দুঃসাধ্য হয়ে উঠেছে। বিশেষ করে শীতকালে এর পানি থেকে তীব্র দুর্গন্ধ ছড়ায়। এ পানিতে সৃষ্টি হচ্ছে নানা রোগজীবাণু।
বুড়িগঙ্গা রক্ষায় সংশ্লিষ্ট আইনগুলো কঠোরভাবে বাস্তবায়ন করতে হবে এবং কর্তৃপক্ষের জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে হবে। এছাড়াও পয়ঃবর্জ্য পরিশোধনাগার স্থাপন, গৃহস্থালির বর্জ্য ফেলা থেকে বিরত থাকা, নৌযানের ডিজাইনে বর্জ্য সংরক্ষণ বা ধারণ করার স্থায়ী কাঠামো গড়ে তোলা, নৌযানের বর্জ্য ও তেল নদীতে ফেলা থেকে বিরত থাকা ইত্যাদি পদক্ষেপ নিতে হবে।
উর্মি আক্তার ঝিনুক : শিক্ষার্থী, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা