আজ ঢাকা কলেজের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী। সক্রেটিসের বিখ্যাত উক্তি ‘নিজেকে জানো’ মূলমন্ত্রে ১৮৪১ সালের ২০ নভেম্বর ঢাকা কলেজ প্রতিষ্ঠিত হয়। একটি আধুনিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান হিসাবে ঢাকা কলেজ উপমহাদেশের শিক্ষার মানোন্নয়নে ব্যাপক ভূমিকা রেখেছে। সেই সঙ্গে ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু করে ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধে এবং বাঙালি জাতির বিভিন্ন ক্রান্তিলগ্নে ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থীরা অগ্রণী ভূমিকা রেখেছেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সৃষ্টির পেছনেও বড় ভূমিকা রেখেছিল ঢাকা কলেজ। তৎকালীন কার্জন হল, শহীদুল্লাহ্ হল, জমি এবং নিজস্ব শিক্ষক-ছাত্র ইত্যাদি প্রদানের মাধ্যমে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠায় ঢাকা কলেজ বিশেষ ভূমিকা পালন করে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার আগে ঢাকা কলেজে অনার্স-মাস্টার্স কোর্স চালু ছিল। তবে বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার পর পর্যাপ্ত শিক্ষার্থী নিশ্চিত করার জন্য ঢাকা কলেজে উচ্চশিক্ষা বন্ধ করে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটিকে ইন্টারমিডিয়েট কলেজে রূপান্তর করা হয়। পরবর্তীকালে আবার অনার্স-মাস্টার্স কোর্স চালু হয়। বায়ান্নর ভাষা আন্দোলনে ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থীদের ভূমিকা ব্যাপক। ‘আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি’ গানের রচয়িতা অবদুল গাফ্ফার চৌধুরী ছিলেন ঢাকা কলেজের ছাত্র। ২১ ফেব্রুয়ারি ১৪৪ ধারা ভঙ্গকারী প্রথম দলের অন্যতম নেতৃত্বদানকারী ইকবাল আনসারী খান ছিলেন ঢাকা কলেজের ছাত্র। পরবর্তীকালে ১৯৭১ সালে তিনি মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছিলেন। মুক্তিযুদ্ধে ঢাকা কলেজের বেশ কয়েকজন ছাত্র শহিদ হয়েছেন। তারা হলেন-নজরুল ইসলাম, আব্দুস শিকদার, মোয়াজ্জেম হোসেন, নিজামুদ্দিন সাজ্জাদ, আজিজুল ইসলাম বাবুল, এম কাইয়ুম প্রমুখ। বিভিন্ন অঙ্গনে ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থীদের অবদান অনস্বীকার্য। আধুনিক যুগের কবি-সাহিত্যিকদের মধ্যে ঢাকা কলেজের কীর্তিমান শিক্ষক ও শিক্ষার্থী ছিলেন-আখতারুজ্জামান ইলিয়াস, মুহাম্মদ মনসুর উদ্দীন, শওকত ওসমান, দীনেশচন্দ্র সেন, কাজী মোতাহার হোসেন, আবুল কালাম শামসুদ্দীন, আবুল মনসুর আহমেদ, বুদ্ধদেব বসু, সৈয়দ আলী আহসান, সৈয়দ ওয়ালী উল্লাহ, শামসুর রাহমান, আলাউদ্দিন আল আজাদ, আবু জাফর ওবায়দুল্লাহ, আবদুল গাফ্ফার চৌধুরী, আবু হেনা মোস্তফা কামাল, হুমায়ুন আজাদ, হুমায়ূন আহমেদ, রুদ্র মুহাম্মদ শহিদুল্লাহ, আব্দুল মান্নান সৈয়দসহ আরও অনেকে। বর্তমানে ঢাকা কলেজে মাধ্যমিক, স্নাতক ও স্নাতকোত্তর শ্রেণিতে প্রায় ২৫ হাজার শিক্ষার্থী অধ্যয়ন করছেন। উচ্চমাধ্যমিক পর্যায়ে দেশের শ্রেষ্ঠ কলেজগুলোর অন্যতম ঢাকা কলেজ। বর্তমানে এখানে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর পর্যায়ে ১৯টি বিষয়ে শিক্ষাদান কার্যক্রম চালু রয়েছে। শিক্ষার্থীদের আবাসন সুবিধার জন্য রয়েছে আটটি ছাত্রাবাস। জ্ঞানপিপাসু ছাত্রদের জন্য রয়েছে গ্রন্থাগার। ১৮৪১ সালে প্রতিষ্ঠিত প্রাচীন এই বিদ্যাপীঠ বিভিন্ন সমস্যার মধ্যেও ১৮৩ বছর ধরে তার ঐতিহ্য ও শ্রেষ্ঠত্ব ধরে রেখেছে। তবে ঢাকা কলেজের কিছু সমস্যা বিশেষভাবে লক্ষণীয়। যেমন, পর্যাপ্ত একাডেমিক ভবনের সংকট থাকায় শিক্ষার কার্যক্রম বাধাগ্রস্ত হয়। গবেষণার জন্য প্রয়োজনীয় উপকরণের সীমাবদ্ধতা রয়েছে। গ্রন্থাগারে রয়েছে পর্যাপ্ত আসনের অভাব। এছাড়া ছাত্রাবাসগুলোতে রয়েছে পর্যাপ্ত সিটের অভাব। ঢাকা কলেজের সমস্যাগুলোর সমাধানে কর্তৃপক্ষের সুদৃষ্টি কামনা করছি। ঢাকা কলেজ আজ ১৮৪ বছরে পা দিচ্ছে। শুভ হোক সামনের দিনগুলো। ঐতিহ্য ও গৌরব নিয়ে টিকে থাকুক যুগ যুগ।
মো. রবিন ইসলাম : শিক্ষার্থী, ঢাকা কলেজ