কৃষককে মর্যাদা দিন, দেশকে এগিয়ে নিন
মো. আবু রায়হান
প্রকাশ: ১৫ নভেম্বর ২০২৪, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
বাংলাদেশের অর্থনীতি মূলত কৃষির ওপর নির্ভরশীল। আমাদের কৃষকরা শুধু খাদ্য উৎপাদন করেন না, তারা আমাদের সমাজের ভিত্তিও রচনা করেন। তবে অত্যন্ত দুঃখজনক হলো, কৃষকদের অবদান যথাযথভাবে মূল্যায়িত হয় না। বইয়ের পাতায় তাদের গুরুত্বের কথা বলা হলেও বাস্তবে তারা সেই সম্মান ও মর্যাদা পান না, যা তাদের প্রাপ্য। কৃষকদের প্রাপ্য মর্যাদা না দেওয়া একটি বড় সামাজিক সমস্যা, যা দেশের সার্বিক উন্নয়নের পথে বাধা সৃষ্টি করছে।
একটি দেশের উন্নয়ন নির্ভর করে সেই দেশের কৃষির ওপর, আর কৃষি নির্ভর করে কৃষকদের শ্রম ও মেধার ওপর। কৃষকরা প্রতিদিন মাঠে কাজ করে খাদ্য উৎপাদন করেন, যা আমাদের বেঁচে থাকার মূল উপাদান। ধান, গম, সবজি, ফল, দুধ-এ সবকিছুই কৃষকের পরিশ্রমের ফসল। কিন্তু কৃষকরা তাদের এ পরিশ্রমের যথাযথ মূল্য পান না। অর্থনৈতিক বৈষম্য, বাজারের অস্থিতিশীলতা এবং সরকারি সহযোগিতার অভাবে কৃষকরা প্রায়ই দুঃখ-দুর্দশায় দিন কাটান।
রাজনৈতিক ও সামাজিক ক্ষেত্রে কৃষকদের প্রাপ্য সম্মান ও মর্যাদা প্রায়ই উপেক্ষিত হয়। রাজনৈতিক নেতারা বা সমাজের উচ্চবিত্ত শ্রেণির মানুষ কৃষকদের প্রতি উদাসীনতা প্রদর্শন করেন, যা অত্যন্ত পরিতাপের বিষয়। কৃষকরা মাঠে কাজ করে যেসব পণ্য উৎপাদন করেন, সেই পণ্যগুলোর প্রাপ্য মূল্য তারা পান না। বাজারে পণ্যের দামের অস্থিতিশীলতা, মধ্যস্বত্বভোগীদের অবৈধ মুনাফা এবং সঠিক সরকারি নীতিমালার অভাবে কৃষকদের জীবনযাত্রা দিন দিন কঠিন হয়ে পড়ছে। এ অবস্থায় কৃষকদের সহায়তার জন্য যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করা অত্যন্ত জরুরি। উন্নতমানের বীজ, সার এবং আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করতে না পারার কারণে উৎপাদনশীলতা কমে যাচ্ছে। পাশাপাশি পর্যাপ্ত প্রশিক্ষণ এবং বাজারের সুযোগ-সুবিধা না পাওয়ায় তাদের পণ্য ন্যায্য দামে বিক্রি হয় না। ফলে অনেক কৃষক অর্থনৈতিক সংকটে পড়ে তাদের পেশা থেকে সরে আসতে বাধ্য হন, যা কৃষিক্ষেত্রের জন্য একটি বড় আঘাত। তবে শুধু সরকার নয়, আমাদের প্রত্যেকেরই উচিত কৃষকদের প্রতি সম্মান প্রদর্শন করা। আমাদের সমাজে কৃষকদের প্রাপ্য মর্যাদা দেওয়ার জন্য সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তন করতে হবে। কৃষকদের শুধু শ্রমিক হিসাবে নয়, বরং আমাদের জীবনের প্রতিটি প্রাত্যহিক পণ্যের সরবরাহকারী হিসাবে গণ্য করতে হবে। তাদের উন্নতি নিশ্চিত করতে হবে। তাদের শিক্ষা, স্বাস্থ্যসেবা এবং উন্নত জীবনযাত্রার ব্যবস্থা করা প্রয়োজন। যদি আমরা এসব পদক্ষেপ নিতে পারি, তাহলে কৃষকরা তাদের কাজে আরও দক্ষ হয়ে উঠবেন এবং দেশের কৃষি খাত আরও উন্নত হবে।
এছাড়া কৃষিক্ষেত্রে নতুন প্রযুক্তির ব্যবহার বাড়াতে হবে, যাতে উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি পায়। উন্নত সেচব্যবস্থা, ফসলের সুরক্ষা এবং গবেষণার মাধ্যমে কৃষিক্ষেত্রে নতুন উদ্ভাবন এনে কৃষকদের সহায়তা করতে হবে। পাশাপাশি বাজারে মধ্যস্বত্বভোগীদের প্রভাব কমিয়ে সরাসরি কৃষকদের সঙ্গে ভোক্তাদের সংযোগ স্থাপন করা উচিত, যাতে কৃষকরা তাদের পণ্যের ন্যায্য মূল্য পান।
কৃষকদের অবদানকে স্বীকৃতি দেওয়া এবং তাদের সঙ্গে মর্যাদাপূর্ণ আচরণ করা আমাদের নৈতিক দায়িত্ব। যদি কৃষকদের প্রতি আমাদের দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন হয় এবং আমরা তাদের যথাযথ মর্যাদা দেই, তাহলে দেশের অর্থনীতি আরও সমৃদ্ধ হবে। কৃষক আমাদের দেশের প্রাণ, তাদের সম্মানিত করা এবং তাদের সমস্যাগুলোর সমাধান করা ছাড়া আমাদের উন্নয়ন ও অগ্রগতি সম্ভব নয়।
মো. আবু রায়হান : শিক্ষার্থী, রাজশাহী কলেজ