Logo
Logo
×

অল্পকথা

নারীর জন্য নিরাপদ হোক গণপরিবহণ

Icon

নুসরাত সুলতানা

প্রকাশ: ১২ নভেম্বর ২০২৪, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

অনেক গণপরিবহণে লেখা থাকে : ‘আপনার যাত্রা নিরাপদ হোক’। কিন্তু বাস্তবে গণপরিবহণে যাত্রা নারীদের জন্য কতটা নিরাপদ? বর্তমানে নারীরা শিক্ষা, চাকরিসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে পুরুষের সঙ্গে তাল মিলিয়ে অগ্রসর হচ্ছে। কর্মক্ষেত্র কিংবা শিক্ষাঙ্গনে যাতায়াতে তাদের ব্যবহার করতে হচ্ছে গণপরিবহণ। এদিকে গণপরিবহণে প্রায় প্রতিদিনই কোনো না কোনো নারী শিকার হচ্ছে যৌন নিপীড়ন বা হয়রানির।

নারী শান্তি ও নিরাপদ সূচক ২০২১-এ বিশ্বে ১৭০টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ১৫২তম; যেখানে প্রতিবেশী দেশ ভারত, নেপাল, ভুটান, শ্রীলংকা বাংলাদেশের চেয়ে এগিয়ে। দেশের গণপরিবহণে নারী মৌখিক বা ইশারা-ইঙ্গিতে যৌন হয়রানির শিকার হয়; পাশাপাশি নির্যাতন ও হত্যাকাণ্ডের মতো ঘটনাও ঘটছে। সম্প্রতি ব্র্যাকের ‘নারীর জন্য যৌন হয়রানি ও দুর্ঘটনামুক্ত সড়ক’ শীর্ষক প্রতিবেদনে দেখা যায়, দেশে ৯৪ শতাংশ নারী মৌখিক, যৌন বা অন্য কোনো কারণে হয়রানির শিকার হচ্ছে। নারীরা ৪১ থেকে ৬০ বছর বয়সের পুরুষ দ্বারা হয়রানির শিকার হচ্ছে বেশি।

শিক্ষা, কর্মক্ষেত্র এবং নানা উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ডে নারীর অবদান অনস্বীকার্য। বাংলাদেশের অন্যতম প্রধান রপ্তানি খাত হলো পোশাকশিল্প, যেখানে ৮০ শতাংশ কর্মীই নারী। কিন্তু নারীদের জন্য নেই গণপরিবহণে পর্যাপ্ত নিরাপত্তা, নেই কোনো আলাদা পরিবহণ ব্যবস্থা। এর জন্য প্রতিনিয়ত নিরাপত্তা ঝুঁকি নিয়ে নারীকে ব্যবহার করতে হচ্ছে গণপরিবহণ। সম্প্রতি যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ছাত্রী চলন্ত বাসে যৌন হয়রানির শিকার হয়েছেন। যাত্রীর ভিড়ে কিংবা নির্জনে এমন অনেক ঘটনা ঘটছে প্রতিনিয়ত। বাংলাদেশের সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনীতে ১৯(৩) অনুচ্ছেদের আলোকে জাতীয় জীবনের সর্বস্তরে নারীর অংশগ্রহণ ও সুযোগ সমতা রাষ্ট্র নিশ্চিত করবে, এমন অঙ্গীকার রয়েছে। নারী অধিকার রক্ষায় এবং নিরাপত্তায় অনেক আইন কিংবা নীতিমালা রয়েছে। কিন্তু শুধু আইন বা নীতি প্রণয়ন করলেই হবে না, করতে হবে এর বাস্তবায়ন। পাশাপাশি আমাদের হতে হবে সচেতন। নারীর প্রতি বিরূপ মানসিকতার পরিবর্তন ঘটাতে হবে। সচেতনতামূলক সেমিনারের আয়োজন করতে হবে এবং যৌন হয়রানিবিরোধী প্রচারণা চালাতে হবে। যৌন হয়রানি করা ব্যক্তির দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে। নারীর জন্য আলাদা পরিবহণ ব্যবস্থার পাশাপাশি আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে সার্বক্ষণিক পর্যবেক্ষণের ব্যবস্থা করতে হবে। কোনো নারী যৌন হয়রানির শিকার হলে তাকে ৯৯৯ নম্বরে কিংবা নারী ও শিশু নির্যাতন হেল্পলাইন ১০৯ নম্বরে কল করতে হবে।

দেশের প্রায় অর্ধেক জনসংখ্যা নারী। নারীদের পিছিয়ে রেখে তাই দেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন সম্ভব নয়। উন্নয়নের অগ্রযাত্রায় নারীর অংশীদারত্ব নিশ্চিত করতে গণপরিবহণকে নারীর জন্য ঝুঁকিমুক্ত রাখতে হবে। নারীর জন্য নিরাপদ হবে গণপরিবহণ, এটাই কাম্য।

নুসরাত সুলতানা : শিক্ষার্থী, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : সাইফুল আলম

প্রকাশক : সালমা ইসলাম