ছিনতাই দমনে পুলিশের সক্রিয় ভূমিকা চাই
সাকিবুল হাছান
প্রকাশ: ২৯ অক্টোবর ২০২৪, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
সাম্প্রতিক সময়ে রাজধানীতে ছিনতাইয়ের ঘটনা শুনলেই একটা নির্দিষ্ট জায়গার নাম মাথায় আসে; আর সেটা হচ্ছে মোহাম্মদপুর, যেখানে দিনদুপুরে ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটছে অহরহ। রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে হাজারেরও বেশি ছিনতাই, চুরি ও অপহরণ করে একটি চক্র।
পুলিশের খাতায় নাম উঠলেও ছিনতাইকারীরা প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়ায়। ছিনতাইয়ের কাজও চালিয়ে যায় অবলীলায়। এ অপরাধ দমনে পুলিশ তথা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী কী ভূমিকা রাখছে? ছিনতাই রোধে ভুক্তভোগীরা পুলিশকে সক্রিয় ভূমিকায় দেখতে চান।
দণ্ডবিধির ৩৮৩ ধারায় বলা হয়েছে, যে ব্যক্তি ইচ্ছাকৃতভাবে কোনো ব্যক্তিকে ভয় দেখিয়ে তার নিকট কোনো সম্পত্তি বা মূল্যবান জামানত কিংবা জামানত হিসাবে ব্যবহারযোগ্য সিলমোহরভুক্ত কোনো বস্তু প্রদানে বাধ্য করে, তাহলে সে ব্যক্তি বলপূর্বক আদায়ের দোষে দোষী অর্থাৎ ছিনতাইকারী হিসাবে সাব্যস্ত হবে।
ঢাকা শহরে ছিনতাইকারীদের বিভিন্ন চক্র রয়েছে। যেমন, মলম পার্টি। এরা যাত্রীদের টার্গেট করে ছিনতাইয়ের শিকার ব্যক্তির চোখে মলম লাগিয়ে দেয়। ওই ব্যক্তি কিছুক্ষণ চোখে দেখে না। অজ্ঞান পার্টি আছে, যারা বাস, লঞ্চ ও ট্রেনে সক্রিয় থাকে।
বর্তমানে হ্যান্ডশেক পার্টির তৎপরতাও দেখা যায়। বস্তুত ছিনতাইকারীরা বিভিন্ন কায়দায় ছিনতাই করে থাকে। যখন কেউ নির্জন রাস্তা দিয়ে একা একা রিকশায় যান, তখন আরেকটি রিকশায় দুজন তরুণ অন্য রিকশাটির পাশে এসে যাত্রীর দুই পাশে দাঁড়িয়ে নিচু গলায় বলে, ‘চিল্লাচিল্লি করবেন না, আমাদের সঙ্গে ছুরি, পিস্তল আছে, টাকা-মানিব্যাগ-মোবাইল, যা আছে, সব দিয়া দেন।’ যাত্রী প্রাণভয়ে বাধ্য হয়ে সব দিয়ে দেয়। বাধা দিতে গেলে প্রাণহানির আশঙ্কাও রয়েছে।
ছিনতাইয়ের শিকার ব্যক্তিরা কেউ বিশিষ্ট নাগরিক, কেউ সাধারণ মানুষ। পুলিশের হিসাবেই ঢাকায় ৬ হাজারের বেশি ব্যক্তি ছিনতাই ও ডাকাতির মতো অপরাধের সঙ্গে জড়িত। তাদের মধ্যে ১ হাজার ৭৩৭ জন জড়িত ছিনতাইয়ের সঙ্গে। পুলিশ সূত্র বলছে, ঢাকায় সাধারণত পথ আটকে অস্ত্রের মুখে টাকা-পয়সা ও মূল্যবান মালামাল নিয়ে নেয় দুর্বৃত্তরা।
পুলিশ কর্মকর্তারা বলছেন, এলাকাভিত্তিক ছিনতাই বেশি হয়। বাড্ডা, মিরপুর, শাহবাগ, মগবাজার, রমনা, মালিবাগ রেলগেট, ঢাকা মেডিকেল কলেজ এলাকা, গুলিস্তান, ধানমন্ডি, নিউমার্কেট, সায়েন্স ল্যাবরেটরি এলাকায় ছিনতাইয়ের ঘটনা বেশি ঘটছে। রাজধানীর ১৪ বছরের ছিনতাইয়ের ঘটনাগুলো বিশ্লেষণ করে দেখা যায়-কিছু ঘটনায় বিচার হলেও অধিকাংশ ক্ষেত্রে কোনো অগ্রগতি নেই। অধিকাংশ ছিনতাইকারী বরাবরই ধরাছোঁয়ার বাইরে রয়ে যায়।
বিশ্লেষকরা বলছেন, ছিনতাইয়ের ঘটনাকে ‘হারানোর ঘটনা’ উল্লেখ করে জিডি গ্রহণ এর অন্যতম কারণ। এতে অপরাধীরা খুব সামান্যই আইনি ব্যবস্থার মধ্যে আসে। অজ্ঞাত আসামি উল্লেখ করে মামলা করায় সাক্ষীও পাওয়া সম্ভব হয় না। এ ছাড়া প্রযুক্তির ব্যাপকতা সত্ত্বেও মামলার তদন্তে প্রযুক্তির ব্যবহারে ঘাটতি রয়েছে।
এ অবস্থার পরিবর্তন জরুরি। ছিনতাইয়ের ঘটনাগুলোকে গুরুত্ব দিয়ে তদন্ত করতে হবে। পাশাপাশি ছিনতাইয়ের ঘটনায় ছিনতাই নামেই মামলা হওয়া উচিত। এ অপরাধ দমন করা অসম্ভব কিছু নয়। পুলিশ কর্মকর্তাদের সক্রিয় হতে হবে। সেই সঙ্গে একটা নির্দিষ্ট দল গঠন করতে হবে, যারা বিভিন্নভাবে ছিনতাই দমনে কাজ করবে। যথাযথ মনিটরিংয়ের মাধ্যমে ছিনতাইকারী সদস্যদের দ্রুত আটক করে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। ছিনতাই দমনে কর্তৃপক্ষের সুদৃষ্টি, সেই সঙ্গে জনসাধারণের সতর্ক হওয়ার বিকল্প নেই।
সাকিবুল হাছান : সমাজবিজ্ঞান বিভাগ, ঢাকা কলেজ
sakibulhasanlearning@gmail.com