উচ্চশিক্ষায় জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের দায়
মো. আমিন মিয়া
প্রকাশ: ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
আর কিছুদিন পর ২১ অক্টোবর জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার ৩২ বছর পূর্ণ হতে যাচ্ছে। দীর্ঘ ৩২ বছরে বিশ্ববিদ্যালয়টির অধিভুক্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৩৫ লাখে এবং সরকারি ও বেসরকারি মিলে শিক্ষক আছেন এক লাখের কাছাকাছি। প্রতিষ্ঠার এত বছর পরও নামসর্বস্ব কলেজে অনার্স-মাস্টার্স চালু, বিষয়প্রতি ২০০-৩০০ জন শিক্ষার্থী অনুমোদন, নিয়মিত ক্লাস, একই প্রশ্ন বারবার পরীক্ষায় আসা, উত্তরপত্র মূল্যায়নের মান, সময়োপযোগী কারিকুলাম, যথাযথ একাডেমিক মনিটরিং এবং সর্বোপরি উচ্চশিক্ষার মান নিশ্চিতে বিশ্ববিদ্যালয়টি সমালোচনার ঊর্ধ্বে উঠতে পারেনি।
গত ১৩ সেপ্টেম্বর রাতে হবিগঞ্জ প্রেস ক্লাবে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে উপাচার্য অধ্যাপক ড. এএসএম আমানুল্লাহ বলেছেন, ‘জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের আওতায় ৩৫ লাখ শিক্ষার্থীর জন্য প্রায় এক লাখ শিক্ষক-কর্মচারী রয়েছেন। বছরে প্রায় এক কোটি সার্টিফিকেট বিতরণ করা হয়। কিসের সার্টিফিকেট দেওয়া হচ্ছে, কী লেখাপড়া হচ্ছে একমাত্র আল্লাহই জানেন। এর ভেতর দিয়েই আমাকে দায়িত্বভার গ্রহণ করতে হয়েছে।’
জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হিসাবে আমার প্রশ্ন, গত ৩২ বছর যাবৎ যে কাঠামোতে পরিচালিত হয়ে বিশ্ববিদ্যালয়টি তার প্রতিষ্ঠার কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্য অর্জন করতে পারেনি, নতুন বাংলাদেশে যেখানে নানামুখী সংস্কারের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে, সেখানে বিশ্ববিদ্যালয়টি যদি আগের মতোই পরিচালিত হয়, উচ্চতর বোর্ড থেকে এটা যদি বিশ্ববিদ্যালয় হতে না পারে, প্রাগ্রসর একাডেমিক উন্নয়নে যদি অনক্যাম্পাস কার্যক্রমকে অগ্রাধিকার না দেওয়া হয়, উচ্চশিক্ষার মানোন্নয়নের মূল উপাদানগুলোকেই যদি অগ্রাহ্য করা হয়, শিক্ষাসংশ্লিষ্ট কাজের দায়িত্ব যদি বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব শিক্ষকদেরই দেওয়া না হয়, বিশ্ববিদ্যালয়ের আইনের ১ম সংবিধি (যা চ্যান্সেলরের অনুমোদন ছাড়া সংশোধন বা বাতিল করা যায় না) পাশ কাটিয়ে নিজস্ব বিধি দিয়ে যদি অধিভুক্ত কলেজগুলোর ছাত্র ভর্তি, পরীক্ষা গ্রহণ ও একাডেমিক মনিটরিংয়ের যাবতীয় কার্যক্রম পরিচালনা করা হয়, তাহলে আগামী ৩২ বছরেও কি এ বিশ্ববিদ্যালয়টি উচ্চশিক্ষার ৭৫ শতাংশ শিক্ষার্থীর গুণগত ও সময়োপযোগী শিক্ষা নিশ্চিত করতে পারবে? যদি তা না হয়, তাহলে আগামীর বাংলাদেশ কি এই শিক্ষার্থীদের দায়ভার বহন করতে পারবে?
মো. আমিন মিয়া : সহকারী অধ্যাপক, ফিন্যান্স অ্যান্ড ব্যাংকিং বিভাগ, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়