Logo
Logo
×

অল্পকথা

কুসংস্কারের বেড়াজালে জলাতঙ্ক

Icon

ডা. মো. আবু সাঈদ

প্রকাশ: ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

রেবিস বা জলাতঙ্ক নিয়ে আমাদের দেশে কুসংস্কারের অভাব নেই। পাগলা কুকুর কামড়ালে পেটে কুকুরের বাচ্চা হয়, একথাটি আসলে ঠিক নয়। রেবিস আক্রান্ত প্রাণীর মস্তিষ্কে ভাইরাস আক্রান্তের ফলে মস্তিষ্ক ফুলে যায় এবং প্রদাহ হয়, তাই সে পাগলামি করে। রেবিড প্রাণী কামড়ালে প্রত্যন্ত এলাকায় অনেকে কবিরাজের শরণাপন্ন হয়ে কলা পড়া/পানি পড়া গ্রহণ করে, তাতে প্রকৃতপক্ষে পোস্টবাইট ভ্যাকসিন দেওয়ার সময়টা চলে যায়। অনেক জেলায় গৃহপালিত কুকুরকে মাইলন (মানুষের দুধ) খাওয়ানো হয়। তাদের বিশ্বাস এতে গৃহপালিত কুকুর কামড়ালে জলাতঙ্ক হবে না। এটিও এক ধরনের কুসংস্কার। রেবিস আক্রান্ত কেউ পানির কাছে গেলে যে প্রাণী তাকে কামড়েছে, পানিতে তার ছবি দেখতে পায়-এটিও এক ধরনের কুসংস্কার। প্রকৃতপক্ষে রেবিস আক্রান্ত ব্যক্তির গলার মাংসপেশী প্যারালাইস্ড হয়ে যায়; ফলে সে পানি বা অন্য খাবার গিলতে পারে না। তাই পানি দেখলে প্রচণ্ড পীপাসায় পানির কাছে গিয়ে পানি খাওয়ার চেষ্টা করলেই গলায় প্রচণ্ড ব্যথা হয়। তাই পানি দেখে দূরে সরে আসে।

আজ ২৮ সেপ্টেম্বর বিশ্ব জলাতঙ্ক দিবস। প্রাণঘাতী রেবিস বা জলাতঙ্ক সম্পর্কে জনসচেতনতা সৃষ্টি এবং এ রোগের ভ্যাকসিন আবিষ্কারক লুই পাস্তুরের মৃত্যুদিবসকে স্মরণীয় করে রাখার জন্য ২০০৭ সালের ২৮ সেপ্টেম্বর থেকে বিশ্ব জলাতঙ্ক দিবস পালিত হয়ে আসছে। এ বছর দিবসটির প্রতিপাদ্য ‘Breaking Rabies Boundaries’, যার অন্তর্নিহিত অর্থ হলো জলাতঙ্ক রোগ ব্যবস্থাপনায় বাধা দূর, আন্তঃবিভাগীয় সহযোগিতা বৃদ্ধি, বৈজ্ঞানিক উদ্ভাবনকে উৎসাহিত করে এবং জনসচেতনতা বাড়িয়ে ২০৩০ সালের মধ্যে বিশ্বব্যাপী জলাতঙ্ক নির্মূলে সংশ্লিষ্ট সবাইকে উদ্ধুদ্ধ করা।

এবার জলাতঙ্ক সম্পর্কে কিছু তথ্য তুলে ধরছি। মানুষ ছাড়াও গরু, ছাগল, ভেড়া, মহিষ, শূকর ও ঘোড়া জলাতঙ্কে আক্রান্ত হয়। অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড ও ব্রিটেন এ রোগ থেকে মুক্ত। আক্রান্ত প্রাণীর কামড়ে সুস্থ প্রাণীতে রোগটি ছড়ায়। আবার চামড়ার ক্ষতস্থানে রেবিড প্রাণীর সদ্য নিঃসৃত লালা লাগলেও রেবিস হতে পারে। রেবিড প্রাণীর লালা সংবেদনশীল প্রাণীর চোখ, নাক ও মুখের সংস্পর্শে এলেও জলাতঙ্ক হতে পারে। কুকুর, বিড়াল, শিয়াল, বেজি এবং এক ধরনের রক্তচোষা বাদুড় জলাতঙ্কের পোষক হিসাবে কাজ করে। আমাদের দেশে গৃহপালিত গবাদিপশুও পোষক হিসাবে কাজ করতে পারে।

বাংলাদেশে জলাতঙ্কে প্রতিবছর ২১০০ থেকে ২৩০০ মানুষ এবং ৫০০০ থেকে ৬০০০ গবাদিপশু মারা যায়। এ রোগের সুপ্তিকাল নির্ভর করে কী পরিমাণ ভাইরাস শরীরে ঢুকেছে এবং মাথার কত কাছাকাছি রেবিড প্রাণী কামড় দিয়েছে তার ওপর। সাধারণত সুপ্তিকাল ৩ সপ্তাহ। তবে সুপ্তিকাল ২ সপ্তাহ থেকে কয়েক মাস পর্যন্ত হতে পারে (সুপ্তিকাল হলো জীবাণু শরীরে প্রবেশের পর থেকে রোগের লক্ষণ প্রকাশ পাওয়ার মধ্যবর্তী সময়)।

রোগের লক্ষণ : শরীরের তাপমাত্রা স্বাভাবিক অথবা ১০৩ থেকে ১০৪ ডিগ্রি ফারেনহাইট পর্যন্ত হতে পারে। কেন্দ্রীয় স্নায়ুতন্ত্র আক্রান্ত হয়ে অস্বাভাবিক আচরণ পরিলক্ষিত হয়। সাধারণত ৩ ধরনের ক্লিনিক্যাল লক্ষণ প্রকাশ পায়-প্রোডারমাল, এক্সোটেটিভ ও প্যারালাইটিক। ক্লিনিক্যাল লক্ষণ প্রকাশ পেলে এ রোগের কোনো চিকিৎসা নেই। তবে রেবিড প্রাণী কামড় দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ক্ষতস্থান সাবান পানি, পভিডন আয়োডিন অথবা ডিটারজেন্ট দিয়ে ভালোভাবে ধুয়ে পোস্টবাইট রেবিস ভ্যাকসিন নিলে রোগটি আর হয় না। যেহেতু এ রোগের চিকিৎসা নেই এবং রোগের লক্ষণ প্রকাশ পেলে মৃত্যুই একমাত্র পরিণতি, তাই সর্বাধিক গুরুত্ব দিয়ে এ রোগ প্রতিরোগের ব্যবস্থা করতে হবে। প্রতিরোধের জন্য ভেটেরিনারিয়ানসহ জনস্বাস্থ্য বিভাগে কর্মরত সবাইকে প্রিবাইট রেবিস ভ্যাকসিন সরকারিভাবে নিশ্চিত করতে হবে। গৃহপালিত কুকুর, বিড়াল ও বেওয়ারিশ কুকুরকেও প্রিবাইট রেবিস ভ্যাকসিন দিতে হবে।

ডা. মো. আবু সাঈদ : জেলা ভেটেরিনারি অফিসার, বরগুনা

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : সাইফুল আলম

প্রকাশক : সালমা ইসলাম