জুলাইয়ের অশেষ পাখিরা

শাহাদাৎ সরকার
প্রকাশ: ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
‘জুলাইয়ের অশেষ পাখিরা’ মঈন শেখ-এর চতুর্থ গল্পগ্রন্থ। দীর্ঘদিন ধরে লিখলেও, দুই বাংলাতে মূলত তিনি আলোচনায় আসেন ‘দেশ’ পত্রিকায় ‘কুসুম কথা’ উপন্যাস প্রকাশিত হওয়ার পর। এরপর কয়েকটি উপন্যাস ও তারপর এ গল্পগ্রন্থ। তবে সময় এবং গল্পের বিষয় আঙ্গিক বিবেচনায় ‘জুলাইয়ের অশেষ পাখিরা’ গ্রন্থের গল্পগুলো মঈনের অন্যান্য গল্প থেকে আলাদা। এর মাঝে আছে এক স্বতন্ত্রতা। গ্রন্থের নাম পড়েই পাঠক ধরে ফেলবেন গল্পগুলো কোন সময় ও বিষয়কে ধরে লেখা। এখানে আছে ২৪ জুলাই আন্দোলন ও এর প্রেক্ষিত তৈরির সময়। আছে নানা শহিদদের নাম ধরে ধরে গল্প। আমরা শিরোনামগুলো খেয়াল করলেই তা দেখতে পাব। যেমন-‘মুগ্ধর জুতা’, ‘আবু সাঈদ ইনফিনিটি’, ‘আগস্টের আহনাফ’, ‘ইয়ামিন ইলিশ মাছের মতো ছিল না’ ইত্যাদি।
‘জুলাইয়ের অশেষ পাখিরা’ গ্রন্থে ১৬টি গল্প রয়েছে। এ গল্পগুলো বিষয়ে লেখকের মন্তব্য কিছুটা শোনা যাক, ‘আমার এ গল্পগুলো অধিকাংশই সময়ের, আবার কিছু অসময়েরও, যার বিষয় ও কাহিনি সবারই জানা। ফলে লেখকের বিড়ম্বনা কিছুটা আছে। যখন গল্পগুলো আগে থেকেই পাঠকের জানা থাকে তখন তা সংগত কারণেই গল্প হিসাবে পানসে ঠেকতে পারে। এগুলোর ক্ষেত্রেও এমনটি ঘটবার সম্ভবনা থাকাটা অসম্ভব নয়। পাঠকসত্তার স্বভাব হলো, বর্তমানে পঠিত গল্পের লেখককে তার লেখা অন্য গল্পের লেখকের সঙ্গে মিলাতে চান। আগের পড়া থেকে উতরানো গল্প হলে লেখক বাহবা পান, আর মনে না লাগলে লেখকের প্রতি ঋণাত্মক ধারণা জন্মে। সেসব ঝুঁকি নিয়েই গল্পগুলো লিখেছি। আর তা লিখছি দায়বদ্ধতা থেকে, জুলাই-আগস্টের সব যোদ্ধা, সহযোদ্ধা ও শহিদদের প্রতি শ্রদ্ধা আর ভালোবাসা থেকে। অধিকাংশ গল্প লেখা হয়েছে জুলাই-আগস্টের শহিদদের নিয়ে। চরিত্রগুলোও হুবহু। সেক্ষেত্রে লেখকের সীমাবদ্ধতা কিছুটা থাকে। ইচ্ছা করলেও লেখক তা অতিক্রম করতে পারেন না। কাজেই লেখকের অন্যান্য গল্পের সঙ্গে এ গল্পের কিছুটা ফারাক ঘটাটাই স্বাভাবিক। গল্পগুলো পড়ে পাঠক বলতে পারেন, এগুলো ঘটনার ধারাবর্ণন কিংবা ইতিহাস, কিংবা রিপোর্টিং। এ বলাতেও আমি সার্থকতা খুঁজব। আবার খুঁজব, না বললেও। আসলে পড়লেই সার্থকতা। তবে আমার বিশ্বাস ২০ বছর পর নতুন পাঠকের কাছে এগুলো পানসে ঠেকবে না, যেমন-ঠেকে না ভাষা আন্দোলনের গল্প, মুক্তিযুদ্ধের গল্প। আবার এমনও হতে পারে, গল্পগুলো পড়ে বিশ বছর পরের প্রজন্ম চমকে উঠবে; তারা এ ঘটনাগুলো স্বচক্ষে দেখেনি কিংবা দেখলেও ভুলতে বসেছে বলে। কারণ আমাদের রক্তে ভুলবার দোষ আছে। লম্বা সময় পর হয়তো লেখক নিজেও চমকে উঠতে পারেন, বাংলাদেশে একবিংশ শতাব্দীতে গণতন্ত্র আর উন্নয়নের ধ্বজাধারীদের দ্বারা এমন হত্যাকাণ্ড কখনো ঘটেছিল বলে!’ ওপরের উদ্ধৃত অংশ থেকে গল্পগুলো রচনার উদ্দেশ্য, লক্ষ ও গন্তব্য বিষয়ে একটা ধারণা পাঠক পেয়েছেন আশা করি। আমাদের গল্পগুলো পড়ে মনে হয়েছে, মঈন লিখেছেন বাংলাদেশের এক দুঃসময়ের ইতিহাস ও তার গল্প। পাঠক মনে যা টিকে থাকবে যুগের পর যুগ। জুলাইয়ের অশেষ পাখিরা : মঈন শেখ। প্রচ্ছদ: আবুল ফাতাহ মুন্না। প্রকাশক : ঐতিহ্য। মূল্য : ৩০০ টাকা। কামরুল ইসলাম