শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের জন্য অনন্য বই
নৃবিজ্ঞানের তত্ত্ব ও মতবাদ
বই আলোচনা
![নৃবিজ্ঞানের তত্ত্ব ও মতবাদ](https://cdn.jugantor.com/assets/news_photos/2025/02/07/Salim-67a5a94068f60.jpg)
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ২৪তম উপাচার্য হিসাবে ২ বছর দায়িত্ব পালন করেছিলেন বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ ও মানববিজ্ঞানী ড. আনোয়ারউল্লাহ চৌধুরী। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয় ও যুক্তরাজ্যের সাসেক্স বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সমাজবিজ্ঞানে উচ্চতর শিক্ষা ও গবেষণা সম্পন্ন করেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে তার সুদীর্ঘ ৪২ বছরের শিক্ষকতা জীবনে তিনি সমাজবিজ্ঞান বিভাগের চেয়ারম্যান, সামাজিক অনুষদের ডীন হিসাবে দায়িত্ব পালন করেছিলেন। ১৯৯২ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে নৃবিজ্ঞান বিভাগ প্রতিষ্ঠা করে এ বিভাগের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করেন।
অধ্যাপক আনোয়ারউল্লাহ চৌধুরী সমাজবিজ্ঞান ও নৃবিজ্ঞান বিষয়ে ২০টি বই ও অর্ধশতাধিক গবেষণাপ্রবন্ধ দেশ-বিদেশের পত্রিকা ও জার্নালে প্রকাশিত হয়েছে।
শিক্ষকতা জীবনের দীর্ঘ অধ্যায়ের অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগানোর অপূর্ব সুযোগ হাতছাড়া করেননি গুণী এ শিক্ষক। হাতেকলমে শিক্ষা দিতে গিয়ে অনুভব করেছেন-নৃবিজ্ঞানের শিক্ষার্থীদের জন্য ইংরেজি বইয়ের ওপর নির্ভর করে কোর্স সম্পন্ন করতে হয়। সেসব ইংরেজি বই থেকে নৃবিজ্ঞানের আদিঅন্ত আত্মস্থ করতে বেগ পেতে হয় এ বিভাগের শিক্ষার্থীদের। তখনই নৃবিজ্ঞানের তত্ত্ব ও মতবাদ নিয়ে বাংলা সহজবোধ্য ভাষায় একটি পূর্ণাঙ্গ বই প্রকাশের তাগিদ অনুভব করেন আনোয়ারউল্লাহ চৌধুরী। ২০২৪ সালের সেপ্টেম্বর মাসে তার বহুদিনের লালিত স্বপ্নের বাস্তব রূপ দেন অনন্যা প্রকাশনীর স্বত্বাধিকারী মনিরুল হক।
চারটি মূল অধ্যায়ে বিভক্ত এ বই। প্রথম অধ্যায়ে বিবর্তনবাদী মতবাদ, দ্বিতীয় অধ্যায়ে ব্যাপ্তিবাদী মতবাদ, তৃতীয় অধ্যায়ে ক্রিয়াবাদী মতবাদ এবং চতুর্থ অধ্যায়ে সংস্কৃতি ও ব্যক্তিত্ব মতবাদ নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে। নৃবিজ্ঞানের তত্ত্ব ও চিন্তার বিকাশের ইতিহাস বিধৃত হয়েছে বইটিতে। সংগত কারণেই বিষয় বিবেচনায় নৃবিজ্ঞানের শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও গবেষকদের জন্য বইটি হবে অনন্য এক সহায়ক গ্রন্থ। এ বইয়ের লেখক জানিয়েছেন, নৃবিজ্ঞান সংক্রান্ত চলতি ইংরেজি বইগুলো থেকে প্রাপ্ত তথ্য, উপাত্ত ও জ্ঞান আত্মস্থ করে তা রচনা ও প্রকাশ করা এক দুরূহ কাজ ছিল- যা করতে তাকে অনেক বেগ পেতে হয়েছে। এ বইয়ের শেষে উল্লিখিত রেফারেন্স ও গ্রন্থপঞ্জির তালিকা দেখলে স্পষ্ট হয়ে যায়- কতটা পড়াশোনা ও পরিশ্রম করে বইটি রচনা করেছেন তিনি। এ কারণে তিনি মনে করেন, এই গ্রন্থ রচনার মধ্য দিয়ে তিনি একটি সামাজিক দায়িত্বও পালন করেছেন। আর এ বইটি নৃবিজ্ঞানের সঙ্গে সম্পৃক্তদের কাজে লাগলে পরিশ্রমের সার্থকতা খুঁজে পাবেন তিনি। বইটির বিভিন্ন অধ্যায়ে স্থান পাওয়া কয়েকটি আকর্ষণীয় পরিচ্ছেদের মধ্যে রয়েছে- ধ্রুপদী বিবর্তনবাদী তত্ত্ব ধ্রুপদী বিবর্তনবাদী প্রকল্পের মৌলিক স্বতঃসিদ্ধ, সাংস্কৃতিক বিবর্তন তত্ত্বে টেইলরের অবদান, বিবর্তনবাদী তত্ত্বের উদাহরণ : বিবাহের বিবর্তন, সাংস্কৃতিক পরিণতি এবং সাংস্কৃতিক তীব্রতা বিষয়ে ক্রোবারের ধারণা, ধর্ম ও জাদুবিদ্যার মধ্যে সাদৃশ্য ও পার্থক্য, সামাজিক জীবনের কাঠামোগত বৈশিষ্ট্য, সংস্কৃতি গবেষণায় মনোগতিবিদ্যার প্রভাব, সাংস্কৃতিক বিবর্তনে ধারাবাহিকতা বিষয়ে মীডের অভিমত, বাংলাদেশ ও ভারতীয় পরিপ্রেক্ষিতে মৌলিক ব্যক্তিত্বের উদাহরণ প্রভৃতি।
নৃবিজ্ঞানের শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও গবেষকদের বইটি উৎসর্গ করে তিনি তাদের উদ্দেশে লিখেছেন- তোমাদের অর্জিত জ্ঞান মানবকল্যাণে ব্যবহৃত হোক। পুরু অফসেট কাগজে ৪১৬ পৃষ্ঠায় মুদ্রিত বইটির মূল্য রাখা হয়েছে মাত্র ৬০০ টাকা। বইটির প্রচ্ছদ এঁকেছেন ধ্রুব এষ।