Logo
Logo
×

সাহিত্য সাময়িকী

ফ্যাসিস্ট পতনে লেখকদের অবদান

Icon

সাইফুর রহমান

প্রকাশ: ০৪ অক্টোবর ২০২৪, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

১৭১৫ খ্রিষ্টাব্দ। চতুর্দশ লুইয়ের মৃত্যুর পর রাজপুত্র নাবালক হওয়ায় ফ্রান্সের রাজদণ্ড কার্যত তখন রিজেন্টের হাতে। রিজেন্ট মানে রাজ-অমাত্যগণের মধ্য থেকে মনোনীত রাজপ্রতিনিধি। রাজখরচা কিছুটা সাশ্রয় করার উদ্দেশ্যে রিজেন্টের আদেশে রাজ আস্তাবল থেকে বিক্রি করা হলো অর্ধেক ঘোড়া। তেইশ বছরের তরুণ ফ্রাঁসোয়া মারি আরুয়ে (তখনো তিনি তার ভলতেয়ার ছদ্মনামটি গ্রহণ করেননি) টিপ্পনী কেটে পদ্য লিখলেন, ঘোড়াগুলো বিক্রি না করে এর বদলে রাজসভা থেকে অর্ধেক গাধাকে বিদায় করলেই বুদ্ধির পরিচয় দেওয়া হতো না কি? স্বভাবতই লেখাটি পড়ে অগ্নিমূর্তি ধারণ করল রিজেন্ট। একদিন এক পার্কে এ তরুণ লেখকের সাক্ষাৎ পেলেন জনৈক রিজেন্ট সদস্য এবং তাকে উদ্দেশ করে বললেন, মসিঁয়ে আরুয়ে, আপনার তো দেখছি বেশ দারুণ হাত হয়েছে লেখার। চমৎকার সব লেখা উপহার দিচ্ছেন আমাদের। তা পুরস্কার হিসাবে আপনাকে কী দেওয়া যায় ভাবছি। আপনাকে নতুন একটি জায়গা দেখতে পাঠালে কেমন হয়? আরুয়ে বললেন, ধন্যবাদ মসিঁয়ে, কিন্তু জায়গাটা কোথায়? রিজেন্ট অগ্নিভ চেহারায় বললেন, বাস্তিল দুর্গের মধ্যে। পরদিন ১৭১৭ খ্রিষ্টাব্দের ১৬ এপ্রিল, আরুয়েকে সত্যি সত্যি পাঠানো হলো বাস্তিল কারাগারে। আর বাস্তিল কারাগারে থাকবার সময়ই ফ্রাঁসোয়া মারি আরুয়ে ভলতেয়ার ছদ্মনাম গ্রহণ করে লিখতে শুরু করলেন একটির পর একটি জ্বালাময়ী লেখা।

আমেরিকার স্বাধীনতা বিপ্লব, ফরাসি বিপ্লব ও রুশ বিপ্লব থেকে শুরু করে সব বিপ্লবেই লেখক সাহিত্যিকরা রেখেছে অসামান্য অবদান। আমেরিকার স্বাধীনতা বিপ্লব শুরু হয়েছিল সতেরশ পঁচাত্তর সালে। আর এ বিপ্লবে বিখ্যাত সব রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বর পাশাপাশি অসামান্য ভূমিকা রেখেছিলেন তখনকার সাহিত্যিকরা। তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য স্যামুয়েল অ্যাডামস, আলেকজান্ডার হ্যামিল্টন, সাংবাদিক থমাস পেইন, প্রাবন্ধিক ফিলিপ ওয়েটলে, কবি মার্সি ওটিস ওয়ারেনসহ সহস্রাধিক ব্যক্তিত্ব যারা তাদের কণ্ঠস্বর ও লেখনী দিয়ে এ বিপ্লবকে এগিয়ে নিয়ে গিয়েছিলেন। সে সময় তাদের বলা হতো ‘প্যাট্রিয়ট’ (এই উপাধিটি অনেকটা আমাদের দেশের মুক্তিযোদ্ধা উপাধিটির মতো)। এ প্যাট্রিয়ট উপাধিটি অবশ্য প্রথম ব্যবহার শুরু করেন আমেরিকান রাষ্ট্রপতি বেঞ্জামিন ফ্রাঙ্কলিন, ১৭৭৩ সালে তার প্রেরিত বিভিন্ন চিঠিপত্রে। তিনি নিজেও তার সময়ের একজন অন্যতম সেরা লেখক, সাহিত্যিক ও বিজ্ঞানী ছিলেন। স্যামুয়েল অ্যাডামস ছিলেন একজন রাজনৈতিক দার্শনিক, লেখাপড়া করেছেন হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে। অ্যাডামস ১৭৬৪ সালে আরোপিত ‘সুগার অ্যাক্টের’ বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়েছিলেন। তিনি মনে করতেন এটা আমেরিকার জনগণের অধিকারের ওপর নগ্ন হস্তক্ষেপ।

অন্যদিকে ফিলিপ ওয়েটলে যুদ্ধ ও দাসপ্রথার ওপর প্রচুর কবিতা লিখে আমেরিকার জনগণকে উদ্বুদ্ধ করেছিলেন এবং মার্সি ওটিস ওয়ারেন আমেরিকার বিপ্লবের ওপর লেখা তার তিন খণ্ডের এক অনবদ্য রচনা প্রকাশ করেন আর সেই লেখা আমেরিকার জনগণের মধ্যে ব্যাপক বিপ্লবী জাগরণের সৃষ্টি করে। এবার দৃষ্টিপাত করা যাক ফরাসি বিপ্লবের দিকে। ফরাসি বিপ্লবেও অসামান্য ভূমিকা রেখেছিলেন তখনকার লেখক সাহিত্যিকদের একটি বৃহৎ অংশ এবং সেই সুশীল সমাজের সদস্যরাই ফরাসি ইতিহাসে আলোকিত যুগের সূচনা করেছিলেন। তাদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন ভলতেয়ার, জ্যাক রুশো, ভিক্টর হুগো, মন্টেস্কু, ডিট্রোটসহ অনেকে। লেখক, দার্শনিক ভলতেয়ার যদিও ফরাসি বিপ্লবের মূল পর্ব অর্থাৎ ১৭৮৯ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত বেঁচে ছিলেন না কিন্তু তার লেখনী, মুক্তচিন্তা, দর্শন এক অভূতপূর্ব অবদান রেখেছিল। ভলতেয়ারের মূল দর্শন ছিল বাক-স্বাধীনতা, ব্যক্তি-স্বাধীনতা, ধর্মীয় স্বাধীনতা ও সংবাদপত্রের স্বাধীনতা যার জন্য আমরা আজো লড়াই করে যাচ্ছি। তখনকার লেখকদের মধ্যে জ্যাক রুশো ছিলেন অন্যদের তুলনায় অপেক্ষাকৃত মৌলিক দার্শনিক। তার দর্শনের বিষয়বস্তু ছিল ব্যক্তিবৈষম্য, সামাজিক অসমতা ও প্রভেদ। তিনি বিশ্বাস করতেন, রাজা ষোড়শ লুইয়ের সময়ে ব্যক্তিবৈষম্য ও সামাজিক অসমতা অনেক বেড়ে গিয়েছিল আর তাই তার লেখনী সোচ্চার হয়েছিল এসবের বিরুদ্ধে। দার্শনিক মন্টেস্কু প্রথম রাষ্ট্রের বিভিন্ন অঙ্গ যেমন-বিচার বিভাগ, বিধানসভা ও নির্বাহী বিভাগের মধ্যকার ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরণ এবং এগুলোর মধ্যে ‘চেকস অ্যান্ড ব্যাল্যান্স’-এর তত্ত্ব দিয়েছিলেন। রুশ বিপ্লবেও কবি লেখকদের ছিল অভূতপূর্ব অবদান। তখন অনেকেই সে সময়ের অসীম ক্ষমতাশালী জার দ্বিতীয় নিকোলাসের বিরুদ্ধে তাদের লেখনী দ্বারা রুশ জনগণকে প্রভাবিত করেছিলেন। যেমন ম্যাক্সিম গোর্কি তার বিশ্ববিখ্যাত ‘মা’ উপন্যাসটি রচনা করেন রুশ বিপ্লবের প্রেক্ষাপটে। বিপ্লবীরা গোর্কির এ লেখনী দ্বারা অসম্ভব রকম প্রভাবিত হয়েছিলেন। বিপ্লবাত্মক সাহিত্য রচনা করতে করতে গোর্কি নিজেই এক সময় জড়িয়ে পড়েন রাজনীতির সঙ্গে। তিনি একটি পত্রিকা প্রকাশ করে বিপ্লবের বাণী প্রচার করতে লাগলেন। ফলে একটা সময়ে সরকারের কুনজরে পড়ে কারারুদ্ধ হন।

অন্যদিকে কালজয়ী লেখক লিও তলস্তয়ও তার লেখনী দ্বারা রুশ বিপ্লবকে অনুপ্রাণিত করেছিলেন। যদিও তলস্তয় পরলোকগমন করেন ১৯১০ সালে, অর্থাৎ রুশ বিপ্লবের ৭ বছর আগে, কিন্তু তার লেখা রুশ বিপ্লবকে এতটাই উৎসাহিত করেছিল যে স্বয়ং লেনিন তলস্তয় সম্পর্কে বলেছিলেন-‘লিও তলস্তয় হলেন রুশ বিপ্লবের আয়না’।

জার শাসনামলে যে কোনো লেখা ছাপাখানায় যাওয়ার আগে সম্রাটের দপ্তরে পাঠানোর নিয়ম ছিল। সম্রাটের বিরুদ্ধে কিছু লেখা হয়েছে কিনা সেটা বিবেচনা করার জন্য। তারই ধারাবাহিকতায় বিখ্যাত রুশ কবি পুশকিনের ‘জনগণের পিতা’ গ্রন্থটি নিষিদ্ধ হয়ে যায়। নিকোলাসের এসব কর্মকাণ্ডে কবি সাহিত্যিকরা ভীত হয়ে পড়েছিলেন। এ কথাও রটে যায় যে, সম্রাটের লোকজন লেখকদের বাড়িতে অভিযান চালাতে পারে। সে সময় সেসব লেখকদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন ইউজিন ওয়ানগিন। সম্রাটের ভয়ে তার অনেক লেখা তিনি নিজেই পুড়িয়ে ফেলেছিলেন। এ কারণে পাঠক বঞ্চিত হয়েছিল তার বহু সাহিত্যসৃষ্টি থেকে। রুশ বিপ্লবের অন্যতম নায়ক লেনিন দারুণভাবে অনুপ্রাণিত হয়েছিলেন দস্তয়েভস্কির ‘কষ্ট অব ক্লান্ট’ বইটি পড়ে। তবে যে লেখক সম্ভবত লেনিনের ওপর সবচেয়ে বেশি প্রভাব ফেলেছিলেন তিনি ছিলেন-নিকোলে চেরনিশেভস্কি। চেরনিশেভস্কি ছিলেন পুরোহিতের পুত্র, সেসঙ্গে একজন বস্তুবাদী দার্শনিক এবং সমাজতান্ত্রিক। তার ইউটোপিয়ান উপন্যাস ‘হোয়াট ইজ টু বি ডন’? সেন্ট পিটার্সবার্গের পিটার এবং পল নামক একটি জেল দুর্গে বসে লেখা হয়েছিল, যেখানে তাকে তার রাজনৈতিক বিশ্বাসের কারণে কারারুদ্ধ করা হয়েছিল। ভাবতেও অবাক লাগে কীভাবে একটি বই একটি নতুন প্রজন্মের কাছে বাইবেল হয়ে উঠেছিল।

চিলির নোবেলবিজয়ী কবি পাবলো নেরুদাকে বলা হয় লাতেন আমেরিকার বিপ্লবী কবি। তিনি শুধু লাতেন আমেরিকারই নয় সব বিশ্বেই পরিচিতি পেয়েছিলেন বিপ্লবী কবি হিসাবে। লাখো কোটি মানুষের প্রেরণার প্রতিভূ হিসাবে চিহ্নিত হয়েছেন। ১৯৩৮ সালে প্রকাশিত হয় তার নতুন কবিতাগুচ্ছ ‘স্পেন আমার হৃদয়ে’। এসব কবিতায় ধীরে ধীরে ফুটে উঠল একটা নতুন সুর নিভৃতে স্বগতোক্তি নয়, নেরুদা এবার জোর গলায় তার কবিতাকে শ্রোতাদের কানে তুলে দিলেন। শুধু কলম দিয়ে লেখা নয়, মুখ ফুটে বলা যাতে কানের ভেতর দিয়ে মর্মে প্রবেশ করে, শ্রোতার মনে যাতে সাড়া জাগে। এর বারো বছর পর ১৯৫০ সালে প্রকাশিত হয় ‘কান্তো হেনেরাল’ (‘কাণ্ড সর্বময়’)। এটিকে বলা হয় চিলির মহাকাব্য। এ বারো বছর নেরুদার জীবনের এক স্মরণীয় পর্ব। শুধু দাঁড়িয়ে দেখা নয়, এবার তিনি কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে লড়াইয়ে শরিক।

একবার নেরুদা ট্রেনে চড়ে তার শহর ছেড়ে গেছেন অন্য এক মফস্বল শহরে। সেখানে তিনি ট্রেন থেকে নামার আগেই জানালা দিয়ে লক্ষ করলেন শ্রমিকসহ সাধারণ মানুষের ঢল। নেরুদাকে এক পলক দেখার জন্য এবং তাদের শহরে নেরুদাকে স্বাগত জানানোর জন্যও ওইসব মানুষ এসেছিলেন শুধু মালা নিয়ে নয়, তারা এসেছিলেন তাদের স্মৃতিতে রাখা নেরুদার অবিনাশী কবিতা নিয়ে। শ্রমিকের প্লাটফর্মে দাঁড়িয়েই নেরুদাকে তারা শুনিয়েছিলেন নেরুদারই কবিতা।

পাবলো নেরুদার বিপ্লবাত্মক হয়ে ওঠার পেছনে তাকে দারুণভাবে অনুপ্রাণীত করেছিলেন মূলত দুজন কবি। নেরুদা তার আত্মজীবনীতে লিখেছেন-ওয়ল্ট্ হুইট্ম্যান বা মায়াকোভ্স্কির ভেতরে যে ‘সদর্থক বীরপুরুষ’ পাই তা আমার ভালো লাগে, কারণ যন্ত্রণার মধ্য দিয়ে জন্ম লাভ করে তাদের কাটাতে হয়েছিল দুর্দশাগ্রস্ত জীবন। বীরপুরুষ হওয়ার জন্য আমাদের এ দৈনন্দিন জীবনের সঙ্গে সখ্য স্থাপন করতে হয়েছিল তাদের এবং আমাদের সঙ্গে বসে রুটি আর স্বপ্ন সমভাগ করে নিতে হয়েছিল।

যে গতিতে মানুষের প্রয়োজনীয় বস্তুর মূল্যায়ন হয় না, সমাজবাদী সমাজকে সে গতিপথের অবসান করতেই হবে। একজন সাহিত্যিক সব সময়ই চান অন্তত একটা ভালো বই লিখতে। ওয়ল্ট্ হুইট্ম্যান বা মায়াকোভ্স্কি যেসব প্রকৃত বীরপুরুষ সৃষ্টি করেছিলেন সেসব বীরপুরুষ গৃহযুদ্ধের বিভীষিকাময় রাতকে অতিক্রান্ত করে তবেই ঊষালগ্নে নায়ক হতে পেরেছিলেন। নেরুদা যখন মৃত্যুশয্যায়, তখন ১১ সেপ্টেম্বর প্রথমে নৌবাহিনী, তারপর সেনাবাহিনী বিদ্রোহ করল। আক্রান্ত লা মোনেদা প্রাসাদে বীরের মৃত্যুবরণ করলেন প্রেসিডেন্ট আলেন্দে। তার বারো দিন পর ২৩ সেপ্টেম্বর মারা গেলেন পাবলো নেরুদা। তার শবযাত্রাই হলো চিলির ফ্যাসিস্ট শাসনের বিরুদ্ধে দেশবাসীর প্রথম বিক্ষোভ মিছিল। তার জবাবে ভাড়া করা গুন্ডার দল নেরুদার সান্তিয়াগোর বাড়ির দরজা ভেঙে ভেতরে ঢুকে তার বই আর কাগজপত্র নষ্ট করে। মৃত্যুশয্যাতেও নেরুদার কলম কখনো থামেনি। কবিতায় তিনি শত্রুর বিরুদ্ধে সমানে ছুড়েছেন মর্মঘাতী বাণ।

স্পেনের বিখ্যাত কবি লোরকাও ফ্যাসিস্ট ফ্রাঙ্কোর বিরুদ্ধে দুর্বার হয়ে উঠেছিলেন। স্বৈরাচারী ফ্রাঙ্কোর বিরুদ্ধে নড়তে গিয়ে প্রথমে গুম ও পরে খুনের স্বীকার হতে হয় তাকে। দুনিয়ার আর এক সেরা কবি নেরুদা লোরকার মৃত্যু-সংবাদে পরম বিপন্ন-কণ্ঠে বলে উঠেছিলেন, ‘স্পেনের সেরা ফুলটি আজ ঝরে গেল।’ বস্তুত স্পেন তার আর কোনো কবি-শিল্পী-বুদ্ধিজীবীকে লোরকার মতো এত আবেগ আর প্রেম দিয়ে বুকে টেনে নেয়নি। রুশ কবি মায়াকভস্কি ও চিলির কবি নেরুদার মতোই হাজার হাজার মানুষের সামনে দাঁড়িয়ে গলা খুলে কবিতা পড়তে ভালোবাসতেন লোরকা। জনসাধারণের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগের তাগিদেই তিনি তার সৃষ্টির অপর মাধ্যম হিসাবে নাটককে গ্রহণ করেছিলেন।

মৃত্যুর অব্যবহিত আগে লোরকা কিছু সনেট লিখেছিলেন। এগুলো পড়ে তার প্রিয় কবি-বন্ধু ভিনসেন্ট আলেকজান্দার চিৎকার করে উঠে বলেছিলেন, ‘ফেদেরিকো, মানুষকে কী দারুণ ভালোবেসেছ তুমি, কী অসম্ভব কষ্ট পেয়েছ!’ স্পেনের গৃহযুদ্ধের রক্তস্রোতে সেই অসম্ভব কষ্ট আর ভালোবাসা দিয়ে লেখা সনেটগুলো কোথায় হারিয়ে গেছে। পৃথিবীর সব কবির বিপন্ন অস্তিত্বের প্রতীক হিসাবে লোরকা আমাদের কাছে অপ্রতিরোধ্যভাবে চিহ্নিত হয়ে আছেন।

সদ্য জুলাই বিপ্লবে জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামও অংশ নিয়েছিলেন। জীবনের পরপারে চলে গেছেন যিনি ৪৮ বছর আগে সেই তিনিই ছিলেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মিছিলে। গেয়েছেন ‘কারার ঐ লৌহকপাট/ভেঙে ফেল কর রে লোপাট/রক্ত জমাট শিকল পূজার পাষাণ-বেদী’। নজরুল মানেই বিদ্রোহ। নজরুল মানেই প্রতিবাদ।

সেই কত বছর আগের কথা-তরুণদের তিনি আহ্বান জানিয়েছিলেন সশস্ত্র সংগ্রামে প্রাণ বিসর্জন দিতে, ‘ওরে তরুণের দল, তোমাদের মধ্যে কি এমন কেউ নেই যে বলতে পারে, যতক্ষণ আমার প্রাণে ক্ষীণ রক্তধারা বয়ে যাবে ততক্ষণ আমি তা দেশের জন্য পাত করব।’ আজ চাই মহারুদ্রের ভৈরব গর্জন, /প্রলয় ঝঞ্ঝার দুর্বার তর্জন, বিপুল রণউন্মাদ।/ বাজুক রুদ্রতালে ভৈরব/দুর্জয় মহা-আহ্বান তব, বাজাও/নট মল্লার দীপক রাগে/দাসত্বের এ ঘৃণ্য তৃপ্তি/ভিক্ষুকের এ লজ্জা বৃত্তি/বিনাশো জাতির এ দারুণ লাজ, দাও তেজ, দাও মুক্তি-গরব/দাও স্বাধীনতা সত্য বিভব। ‘রক্তাম্বর ধারিণী মা’, ‘আগমনী’, ‘ম্যায় ভুখা হু’ এসব রচনার মধ্য দিয়ে বিপ্লবের অসাধারণ চিত্র এঁকেছিলেন তিনি।

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : সাইফুল আলম

প্রকাশক : সালমা ইসলাম