Logo
Logo
×

সাহিত্য সাময়িকী

যখন আপনি আপনার জীবনকে গল্পের মতো দেখেন, তখন এটি পরিচালনা করা সহজ হয়ে যায়: স্টুয়ার্ট মারডক

Icon

মেজবাহ উদ্দিন

প্রকাশ: ০৪ অক্টোবর ২০২৪, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

স্টুয়ার্ট মারডকের লেখাগুলো পড়তে পড়তে মনে হয় ঠিক যেন পাশে বসে কেউ কথাগুলো বলছেন। বিদ্যায়তনিক গাম্ভীর্য সরিয়ে রেখে পাঠকের সঙ্গে এই লেখক যেন একেবারে ব্যক্তিগত আলাপন রচনা করেছেন। স্মৃতি, অভিজ্ঞতা, পর্যবেক্ষণ, উপলব্ধি, মন্তব্য সব মিলিয়ে লেখা মারডকের বইগুলো বহু সংখ্যক পাঠকের কাছে পৌঁছে দিচ্ছে তাকে। তাঁর শৈলীর জাদুতেই তিনি কথার স্থাপত্যের ভার কমিয়ে দিয়েছেন। অসম্ভবের এই সম্ভাব্য রূপটিই হয়তো আজকের পাঠককে টেনে নিয়ে যায় স্টুয়ার্ট মারডকের কাজের দিকে। লেখক, সঙ্গীতশিল্পী, চলচ্চিত্র নির্মাতা এবং ইন্ডি পপ ব্যান্ড বেলে এবং সেবাস্টিয়ানের প্রধান গায়ক ও গীতিকার স্টুয়ার্ট মারডক ১৯৬৮ সালে স্কটল্যান্ডের দক্ষিণ-পশ্চিম উপকূলের শহর আয়ারে জন্মগ্রহণ করেন। ৮০’র দশকের শেষ দিকে তিনি মায়ালজিক এনসেফালোমাইলাইটিস (এমই)/ ক্রনিক ফ্যাটিগ সিন্ড্রোমে আক্রান্ত হন এবং সাত বছর অসুস্থ ছিলেন। ১৯৯৫ সালের দিকে তিনি অনেকটা সুস্থ হয়ে ওঠেন এবং ইনডি পপ ব্যান্ড বেলে অ্যান্ড সেবাস্টিয়ান গঠণ করেন, যা এখনও পর্যন্ত ১২টি অ্যালবাম প্রকাশ করেছে। মারডক ২০১০ সালে একটি স্মৃতিকথা প্রকাশ করেন এবং ২০১৪ সালে ‘গড হেল্প দ্য গার্ল’ নামে একটি চলচ্চিত্র লিখেন ও পরিচালনা করেন। সম্প্রতি তিনি একটি আত্মজীবনীমূলক উপন্যাস ‘নোবডি’স এম্পায়ার’ লিখেছেন। এই বই নিয়েই দ্য গার্ডিয়ানের সাথে তাঁর কথোপকথন অনুবাদ করেছেন মেজবাহ উদ্দিন

আপনি ‘নোবডি’স এম্পায়ার’-এ যে গল্প বলেছেন এটা অনেকটা আপনার ২০ বছর বয়সের শুরুর দিকে এমই নিয়ে সংগ্রাম করা এবং গীতিকার হয়ে ওঠার সাথে মিলে। কেন আপনি এমন একটি গল্পকে স্মৃতিকথা হিসেবে না লিখে উপন্যাস হিসেবে লিখতে চেয়েছিলেন?

: আমার মনে হয় এটি আমার প্রাকৃতিক গল্প বলার ভঙ্গি- এটি আমার কাছে ন্যাচেরাল হয়ে গেছে, হয়তো আমি জন্মগতভাবে একজন মিথ্যাবাদী বা এমন কিছু। যখন আপনি একটি গান লিখেন, তখন আপনি একটি নির্দিষ্ট মুডে থাকেন এবং আপনি অন্য অনেক কিছু থেকে পালাতে পারেন- গান বাস্তবতা থেকে কিছুটা দূরে এবং আমি সেই জগতে বেশি আরামদায়ক ছিলাম। তবে তার কিছু ব্যবহারিক কারণও ছিল: এটি অনেক দিন আগের এবং আমি কথোপকথনগুলো তৈরি করেছিলাম।

আপনার কৈশর এবং যৌবণের প্রথম দিকের সময়টা এমই’র কারণে খুব কঠিন ছিল। সেই সময়গুলোকে রোমন্থন করা কি আপনার জন্য কঠিন ছিল?

: আমি মাইকেলের সঙ্গে চিঠিপত্র আদানপ্রদান করছিলাম, যার সাথে আমি সেই বছরগুলো একসাথে কাটিয়েছিলাম (বইটির চরিত্র রিচার্ড কিছুটা তার ওপর ভিত্তি করে তৈরি)। আমরা একমত ছিলাম যে- এগুলো ছিল কষ্টের সময়, তবে আমি তাকে বলেছিলাম: ‘এটা মজার ব্যাপার, আমি সেই সময়গুলো মনে করে খুব আনন্দ পেয়েছি।’ এটা হতে পারে রঙিন চশমার কারণে, কিন্তু আমি মনে করি যখন আপনি আপনার জীবনের একটি অধ্যায়কে একটি গল্প বা সিনেমার মতো দেখেন, তখন এটি পরিচালনা করা অনেক সহজ হয়ে যায়। কারণ কিছু ক্ষেত্রে, আপনি এটি আয়ত্ত করেছেন।

‘নোবডি’স এম্পায়ার’ বইটি ইঙ্গিত দেয় যে, এমই’র কারণে ধীর জীবনযাপন করতে বাধ্য হওয়ার ফলে কিছু ভালো জিনিসও এসেছে। আমি অনুভব করি যে- আপনি যখন আপনার জীবনে থাকেন, এমনকি যদি এটি বেশ হতাশাজনকও হয়; আপনার যা আছে তা দিয়ে কাজ করুন এবং সবসময় সেখান থেকে লাভ খোঁজার চেষ্টা করুন। আর আমার জন্য, এই কঠিন সময়ের মধ্য দিয়ে যাওয়ার দুটি বড় ইতিবাচক দিক ছিল- বিশ্বাস অর্জন করা এবং সঙ্গীত তৈরি করা। আমি কখনও পেছনে ফিরে তাকাইনি।

বইটির নায়ক স্টিফেন খুবই সতর্কভাবে গান লেখা শুরু করে। আপনার ক্ষেত্রেও কি এমনই ছিল?

: হ্যাঁ। প্রথমে কিছুটা অনুপ্রেরণা পেয়েছিলাম, যখন আমার মায়ের বাড়িতে পিয়ানোতে একটি সুর এসেছিল, আর আমি ভাবছিলাম, এটা কোথা থেকে এলো? এটি হঠাৎ আসা একটি মুহূর্ত ছিল, আমি দুই বা তিন মিনিটের কথা বলছি যা আমার পুরো জীবন পাল্টে দিয়েছিল। কিন্তু তার পরের অগ্রগতি ছিল খুব ধীর। ১৯৯৫ সাল পর্যন্ত আমার গান লেখার গতি বাড়েনি, আর তখনই আমি ব্যান্ডের জন্য প্রস্তুুত ছিলাম। বেল অ্যান্ড সেবাস্টিয়ান আমার জীবনে সবচেয়ে চমৎকার ঘটনা ছিল। আমি সাত বছর ধরে অসুস্থ ছিলাম বলে এটি আরও বেশি অনুভূত হয়েছিল- যেমন, আপনি অন্ধকার গুহায় একটি দরজা দেখতে পান এবং যত দ্রুত সম্ভব সেদিকে ছুটে যান।

আপনি বিশ্বাসের কথা উল্লেখ করেছেন। আপনি কি এখনও প্রার্থনা করেন?

: হ্যাঁ, এটা কখনও হারিয়ে যায়নি, বরং আরও বেড়েছে। আমি অনেকবার চার্চে যাই। আমি একটি কোরাসে গান গাই- সেই একই কোরাসে যেখানে আমি (১৯৯০-এর দশকের শুরুতে) প্রবেশ করেছিলাম। এটা আমার আরেকটি পরিবারের মতো।

এখন আপনার জীবনে এমই’র প্রভাব কতটা?

: মুখ্য বিষয় হল এটি মোকাবিলা করা। ৯০-এর দশকে আমার বেসলাইন শক্তি ক্রমাগত বাড়ছিল, এবং ২০০০ সালের দিকে আমি বেশ ভালো ছিলাম, তবে সব সময় নিজের সুরক্ষার কাথা চিন্ত করতাম। আমি নিজের চারপাশে এমন কিছু তৈরি করেছিলাম যা আমি করতে পারি, যেমন ব্যান্ড। আমি সব সময় পালিয়ে যেতাম, লুকিয়ে থাকতাম আর বিশ্রাম নিতাম। তারপর বিয়ে ও সন্তানের কারণে আমাকে একটু চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে হয়েছিল এবং আমি একটু পিছিয়ে পড়েছিলাম। অবশ্যই আমি এমই-তে আক্রান্ত অন্য অনেক মানুষের চেয়ে অনেক বেশি সক্রিয়, আর আমি মাঝে মাঝে অনুভব করি যে এই বইটি এমই-এর ট্রেনস্পটিংয়ের (স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্যগুলো লক্ষ্য করার বিশেষ একটি শখ) মতো হবে। আমি এমন কিছু লিখতে চেয়েছিলাম যা সেইসব মানুষের জন্য অনুপ্রেরণা হবে যারা এই অবস্থায় আটকে আছে। তাই আমি আশা করি মানুষ এই বইটিকে শুধু বিনোদন হিসেবেই নয়, কিছুটা সহানুভূতির সঙ্গে গ্রহণ করবে।

আপনার স্ত্রী ফ্লোরিডার, এবং স্টিফেনের প্রেমিকা জ্যানিও ফ্লোরিডার। দু’জনের মধ্যে কোনো সংযোগ আছে?

: আছে। জ্যানি চরিত্রটি আংশিকভাবে আমার স্ত্রীর ওপর ভিত্তি করে তৈরি হয়েছে, এবং এটিই বইটিকে কিছুটা যৌন দৃশ্যের কাছাকাছি নিয়ে গেছে। আমি জানি না এটি আমার স্ত্রীকে বিব্রত করে কিনা। সে আমাকে বলেছিল: ‘বইটিতে কোনো যৌন দৃশ্য রেখো না। ছেলেরা কখনও যৌনতা সম্পর্কে ভালোভাবে লিখতে পারে না, তারা সবসময় বিশৃঙ্খল হয়।’

আপনি কোথায় লিখতে ভালবাসেন?

: এখানে আমার কিছু প্রিয় জায়গা আছে- সম্ভব হলে বাইরের কোথাও, অথবা আমি কোনো ক্যাফেতে বসে লিখি। এবং প্রায়শই আমি আমার ফোনে লিখি। এতে আপনি অণ্যের চোখে পড়বেন না। সবাই তাদের ফোনে ব্যস্ত থাকে। এবং আমার একটা পদ্ধতি আছে যেখানে আমি এক আঙুলে প্রেডিক্টটিভ টেক্স লিখতে পারি। আমি আমার স্ত্রীকে বলেছিলাম: ‘দেখো, আমার একটা সুপারপাওয়ার আছে, আমি তোমার কথা বলার গতিতে লিখতে পারি।’ সে বেশ মুগ্ধ হয়েছিল।

আপনি সম্প্রতি কোনো ভালো বই পড়েছেন?

: আমি একজন দুর্বল পাঠক, বিশেষ করে উপন্যাসের ক্ষেত্রে। অনেক আগে আমি সেটা ছেড়ে দিয়েছিলাম। একই কথা রেকর্ড শোনার ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য। যে সময় আমি পড়ার জন্য ব্যবহার করতে পারতাম, তা সাধারণত ধ্যান বা অন্যান্য আধ্যাত্মিক বিষয় করার জন্য ব্যবহার করি। সম্ভবত আমার প্রিয় বই, বা সেই বই যেটাতে আমি গত বছর ধরে বারবার ফিরে যাই, তা হল ‘দ্য মাইন্ডফুল ওয়ে থ্রু ডিপরেশন’ (মার্ক উইলিয়ামস, জন টিসডেল, জিনডেল সেগাল এবং জন কাবাট-জিন’র লেখা)। এটা সবার পছন্দের ব্লাকবাস্টার হবে না, তবে কিছু মানুষের জন্য এটা খুবই সহায়ক। এর বাইরে, গত কয়েক বছরে আমার ছোট্ট আনন্দগুলোর একটি হল- আমার বাচ্চাদের বই পড়ে শোনানো বা তাদের সঙ্গে অডিওবুক শোনা।

আপনি কি তরুণ বয়সে আরও বেশি বই পড়তেন?

: আমার কিশোর বয়সের শেষের দিকে এবং যৌবণের প্রথম দিকে এমই’র সময়টায় পড়া ছিল- মাংস ও পানীয়র মতো আমার প্রতিদিনের আহার। আমি অনুভব করতাম এটি সবসময় আমাকে নতুন কিছু জানাচ্ছে এবং বদলাচ্ছে। আমি গ্লাসগোতে ক্যালিডোনিয়া বুকস নামে একটি দোকানে আমার সমস্ত টাকা খরচ করতাম।

কোন লেখকরা আপনাকে প্রভাবিত করেছেন?

: আমি মনে করি সাধারণভাবে ভিক্টোরিয়ান এবং এডওয়ার্ডিয়ান লেখকরা- জেন অস্টেন, টমাস হার্ডি, সামারসেট মম। তারা আমার কথা বলার ধরন বদলেছিল, আমাকে বদলে দিয়েছিল।

নতুন বই লেখার কোনো পরিকল্পনা আছে?

: আমি এটা করতে ভালোবাসি, কিন্তু এর জন্য আমার জীবন ও পরিস্থিতির সঙ্গে সেই একই ওজন এবং গুরুত্ব থাকতে হবে, যেমনটি ‘নোবডি’স এম্পায়ার’র ক্ষেত্রে ছিল। আমি আগ্রহী যে এরপর কী হয় (নোবডি’স এম্পায়ার-এর ঘটনাগুলোর পর), কারণ তারপর গানগুলো আসে এবং বেলে অ্যান্ড সেবাস্টিয়ান শুরু হয়, এবং এটা একটা চমৎকার উত্থান কাহিনী। আমি এটি নিয়ে স্টিভি এবং ক্রিসের (জ্যাকসন এবং গেডস, ব্যান্ডের সদস্য) সঙ্গে কথা বলেছিলাম, এবং তারা বলেছিল: ‘যাও, করো।’

সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : সাইফুল আলম

প্রকাশক : সালমা ইসলাম