না হোক জয়া মাহমুদ নামে কী আসে যায়?
দুলাল মাহমুদ
প্রকাশ: ১৬ আগস্ট ২০২৪, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
জয়াকে কবে থেকে চিনি, তা জয়ার বলতে পারার কথা নয়। তাকে এ নিয়ে জিজ্ঞেস না করাই ভালো। তার প্রেমে এত হাবুডুবু খাচ্ছি, আমিই তো মনে করতে পারছি না। যদিও আমাদের পরিচয়টা খুবই কম্পিলিকেটেড। সম্পর্কের ক্ষেত্রে জটিলতা অস্বাভাবিক কিছু নয়। আমাদের পরিচয়টাকে স্বাভাবিক বলা যাবে কিনা তা নিয়ে যথেষ্ট সন্দেহ রয়েছে। কেউ যদি জয়ার কাছে সম্পর্কের বিষয়ে জানতে চায়, আমি শিউর, এ বিষয়ে সে মুখ খুলতে চাইবে না। সম্পর্কটাকে সে একান্তে রাখতে চায়।
অতীত নিয়ে জানতে চাওয়া হলে জয়া স্পষ্টভাবেই বলেছে, আমার সঙ্গে সহজে কারও সম্পর্ক খারাপ হয় না। একটা সম্পর্ককে বাঁচিয়ে রাখার জন্য আমি সব সময় শেষ পর্যন্ত চেষ্টা করি। অন্য পক্ষ থেকে যদি শেষ না করে দেওয়া হয়, আমি সম্পর্ক ভালো রাখতেই বিশ্বাসী। আমি চাই সম্পর্ককে সারা জীবন লালন করতে। তার এ মনোভাব আমার অত্যন্ত ভালো লেগেছে। মনোমালিন্য তো হতেই পারে। সেজন্য কেন সম্পর্ক চুকিয়ে দেওয়া? ভুল যাতে না হয়, সেজন্যই মনে করিয়ে দেওয়া, এ কথা কিন্তু জয়া আমাকে নিয়ে বলেনি। আমাদের কাবিননামাই নেই, তাহলে ছাড়াছাড়ি হবে কীভাবে?
জয়া যখন মন থেকে বলে, সাফল্যের চেয়েও বেশি গুরুত্বপূর্ণ পাশে থাকার মতো একজন মানুষ। এ কথা শোনার পর তার জন্য আমার খুব মায়া হতে থাকে। কতটা নিঃসঙ্গতা অনুভব করলে এমন কথা বুকের ভেতর থেকে দীর্ঘশ্বাস হয়ে হয়ে আসে। তার পাশে থাকার মানুষ হওয়ার জন্য নীরবে যে ম্যারাথন রেস চলছে, আমিও তাতে প্রতিদ্বন্দ্বী। কে বিজয়ী হবে, সবটাই নির্ভর করে জয়ার মর্জির ওপর। সে তো আর যাকে-তাকে পছন্দ করবে না। তার মনের সঙ্গে মিলতে হবে মন। আর সে যেটা চাইবে, তা পাওয়া তার জন্য মোটেও অসম্ভব নয়।
আর যাই হোক জয়ার কোনো দিকে তো কমতি নেই। দেখতে সুন্দর। কথাটা পরিপূর্ণ হলো না। বরং গানের ভাষায় বললে খানিকটা বোঝানো যাবে, যদি তোমায় আমি চাঁদ বলি/ভুল হবে আমার/তুমি চাঁদের চেয়েও সুন্দর/যদি তোমায় আমি ফুল বলি/ভুল হবে আমার/তুমি ফুলের চেয়েও সুন্দর। বলতে পারেন, যেহেতু জয়াকে ভালোবাসি, তাই বুঝি বাড়িয়ে বলছি। বুকে হাত দিয়ে বলছি, জয়াকে সুন্দর না বলার কোনো কারণ নেই। এ বয়সেও তার শরীরে একটুও মেদ নেই। ফেসবুকারদের ব্যাকরণের বইতে সে স্থান করে নিয়েছে। প্রশ্ন : এক কথায় প্রকাশ করো, যার বয়স বাড়ে না। উত্তর : জয়া আহসান। কথাবার্তায় স্মার্ট। গভীর জীবনদর্শনে বিশ্বাসী। রুচিশীল নারী। নিজেকে আপটুডেট রাখতে পছন্দ করে। যে কোনো পরিবেশে নিজেকে খুব সহজেই মানিয়ে নিতে পারে। মনটা অত্যন্ত নমনীয়। না হলে পোষা প্রাণীর জন্য কি আর মন কাঁদে?
তার একান্ত নিভৃতের সঙ্গী গান, কবিতা, বাগান। আর এখানেই আমার প্লাস পয়েন্ট। না, না, আমি কবি, কণ্ঠশিল্পী কিংবা বাগানবিলাসী নই। তাহলে? আমিও কবিতা, গান, বাগান পছন্দ করি। তারচেয়েও বেশি করি জয়াকে। তাতে কী হলো? জয়াকে পছন্দ করার কারণে তার কোনো কিছুই আমার অপছন্দ নয়। এমনকি তার মাথার খুশকি থেকে পায়ের নখ পর্যন্ত আমার ভালো লাগে। সে যা বলবে, তা করার জন্য আমি বকের মতো এক পায়ে দাঁড়িয়ে থাকতে রাজি। দিব্যি দিয়ে বলছি, কখনো তর্কাতর্কি তো দূরে থাক, রাগারাগিও করব না।
তাহলে কি আমি অনুভূতিশূন্য মানুষ? তা নই। মানুষ ভালোবাসার জন্য কত কিছু করতে পারে। আর আমি জয়ার মন রাখার জন্য এটুকু করতে পারব না? তারপরও যদি ভুল বোঝাবুঝি হয়ে যায়, সেটা জয়া ম্যানেজ করে নিতে পারবে। জয়া দেখতে শুধু সুন্দর নয়, তার মনটাও কিন্তু সুন্দর। জয়া তো বলেছে, আমি সম্পর্কের মূল্যায়ন করতে জানি এবং করতে চাই। ভুল বোঝাবুঝি তো থাকবেই। তবে আমি বিশ্বাস করি, কোনো মানুষকে ভালোবাসলে, তার খারাপটাকেও ভালোবাসব। কোনো মানুষের ভালো সময়ে পাশে থাকলে, খারাপ সময়ও থাকব, এটাই আমার বিশ্বাস। কথাগুলো খুবই তাৎপর্যপূর্ণ। এমন যার মনোভাব, তার সঙ্গে মনের খাপ না খেয়ে পারে না। আমি একটু উলটাসিধা করলেও তাতে তো কোনো সমস্যা নেই।
জয়াকে আমি কতটা গভীরভাবে ভালোবাসি, সেটা আমি জানি। তাকে পলে পলে অনুভব করি। তবে এটাও মনে রাখতে হবে, জয়ার সঙ্গে এমন কোনো আইনগত বন্ধন গড়ে ওঠেনি যে, যখন-তখন আমরা একে অপরের গায়ের ওপর গড়িয়ে গড়িয়ে পড়ব। সমাজ বলতে তো একটা কথা আছে। যা ইচ্ছা তাই করা যায় না। রাতেরবেলার কথা আলাদা। ঘুমের মধ্যে তখন সে আসে চুপিচুপি। আমি ছাড়া কারও টের পাওয়ার প্রশ্নই আসে না। আমাকে আদরে আদরে ভরিয়ে দেয়। ঘুম পাড়িয়ে দেয়। জয়ার আদর-সোহাগের ধরনটাও অন্য রকমের। শুধু রাত কেন, দিনেরবেলাও যে তার সান্নিধ্য একদমই পাই না, তা বলাটা সত্যের অপলাপ হবে। চোখ বুজলেই তাকে অনুভব করি। তার সান্নিধ্যে নিজেকে রাঙিয়ে নিই। সে যদি আমার অন্তরে না থাকত, তাহলে তো এসব হতো না।
তবে জয়াকে এত ভালোবাসলেও সত্য কথা কি, তার অভিনীত ছবি খুব একটা দেখা হয়নি। কালেভদ্রে দেখা হয়ে যায়। বলতে পারেন, এতই যখন ভালোবাসেন, তাহলে ইচ্ছা করলে তো তার সব ছবি দেখতে পারেন। আসলে আমি তো অভিনেত্রী জয়াকে ভালোবাসিনি। তার জন্য তার কত ভক্ত-অনুরাগী আছে। সেই ভিড়ের মধ্যে হুড়োহুড়ি করতে আমার ভালো লাগে না। আমি ভালোবেসেছি নিভৃতের জয়াকে। তাতে তার কমনীয়তা, তার সৌন্দর্য, তার হৃদয়ানুভূতির ভূমিকাও আছে। অভিনয় জয়ার পেশা। পেশার খাতিরে তাকে কত কিছুই করতে হয়। তা আমার ভালো লাগতে পারে, না-ও পারে। আমি তার ব্যক্তিগত বিষয় নিয়ে নাক গলাতে চাই না। সেও নিশ্চয়ই চাইবে না। এর সঙ্গে হৃদয়গত সম্পর্ক মেলানো যাবে না।
তবে ইদানীং জয়াকে এত ব্যস্ত থাকতে হয়, কোথাও দুদণ্ড থিতু হতে পারে না। তার খোঁজখবর যেটুকু পাই, তা ভিডিও রিলের মাধ্যমে। অভিনয়ের তাগিদে তাকে কত দিকে ছুটতে হয়। ঢাকায় জনপ্রিয় তো বটেই, কলকাতাও তাকে দুই হাতে লুফে নিয়েছে। কলকাতায় তাকে বেশির ভাগ সময় থাকতে হয়। যেতে হয় দেশে দেশে। একদমই দম ফেলারও সময় পায় না। কিন্তু একটা সময় তো তাকে স্থিত হতে হবে। তখন অভিনয়ে ব্যস্ততা থাকবে না। বয়স অনেকটাই ঢলে যাবে। টাল খাবে সৌন্দর্যে। গ্ল্যামারও থাকবে না। তাতে কী?
শর্মিলা ঠাকুর কিংবা জয়া বচ্চনও গ্ল্যামারের ঝলমলে জগতে আলোকিত হয়ে ছিলেন। এখন তো সেই কদর নেই। তবে মাঝে মাঝে টুকটাক অভিনয়ের পাশাপাশি নানা কর্মকাণ্ডে নিজেদের জড়িয়ে রেখেছেন। পরিবারের সঙ্গেই বেশি সময় কাটান। সেটারও কিন্তু আলাদা একটা মাধুর্য আছে। জয়ারও যৌবনোচিত রূপ-লাবণ্য থাকবে না। শরীরে তাগদ থাকবে না। তা নিয়ে আমার কোনো আক্ষেপ নেই। তার তো বয়সজনিত সুষমা থাকবে। অন্তরে সৌন্দর্য থাকবে। নমনীয়তাও থাকবে। সবচেয়ে বড় কথা, পাওয়া যাবে নিভৃতের জয়াকে।
নিশ্চয়ই সে সময় পাশে থাকার মতো একান্ত কাউকে তার দরকার হবে। একাকিত্ব জীবনের কষ্ট যে কি, তা তো সে উপলব্ধি করতে পারে। সে সময় সে যদি আমার হাত ধরতে সম্মত হয়, তাহলে দীর্ঘদিনের আকাঙ্ক্ষা পরিপূর্ণতা পাবে। জয় হবে ভালোবাসার। সেই দিন যখনই আসুক, আমি তার অপেক্ষায় থাকব। প্রেমিকা রজকিনীর জন্য কবি চণ্ডীদাস যদি একযুগ প্রতীক্ষায় থাকতে পারে, তাহলে আমি কেন পারব না? সেই মধ্যযুগে যদি সম্ভব হয়, এখন তো না হওয়ার কারণ নেই।
আপনাদের মনে প্রশ্ন আসতেই পারে, কেন জয়া আহসান? বিবাহ বিচ্ছেদের পরও কেন সে আগের স্বামীর নাম বহন করছে, সেটা নিয়ে আমার কোনো ভ্রুক্ষেপ নেই। ইচ্ছা হলে তার নাম জয়া মাহমুদ রাখতে পারে। নাও রাখতে পারে। কোনোটাতেই আমার আপত্তি নেই। মনের সঙ্গে যদি মন মিলে যায়, তাহলে নাম বদলালে কি আর না বদলালেইবা কি। বোঝাপড়াটাই আসল। আর উইলিয়াম শেকসপিয়ার তো কতকাল আগেই লিখেছেন, হোয়াটস ইন অ্যা নেম? নামে কি-ইবা আসে যায়? একান্ত নিভৃতে জয়া আমার পাশে বসে গরম চায়ের কাপে চুমুক দিচ্ছে, জীবনে এর চেয়ে মাধুর্য আর কী আছে? জয়া কিন্তু দুধ-চা পছন্দ করে। আমার পছন্দ দুধ ছাড়া চা। এ নিয়ে হালকা খুনসুটি হতেই পারে। তা না হলে তো জীবনটা কেমন আলুনি আলুনি হয়ে যাবে। গল্পটার মধুরেণ সমাপয়েৎ হলেও জয়ার মনের অতলে কী খেলা করছে, তা তো আর জানা সম্ভব নয়। তার মুচকি মুচকি রহস্যময় হাসি ভাবিয়ে না তুলে পারে না। এমন তো হতেই পারে, জয়ার পাশে বসে চায়ের কাপে চুমুক দেওয়ার যে স্বপ্ন দেখেছিলাম, বাস্তবে সেটাই করছেন ফয়সাল আহসান। তার মুখেও ছড়িয়ে আছে শিশুসুলভ লাজুক লাজুক হাসি। রম্যলেখক মার্ক টোয়েন তো আর এমনি এমনি লেখেননি, ট্রুথ ইজ স্ট্রেঞ্জার দ্যান ফিকশন।