প্লেটো বলেছেন, ভালো রাষ্ট্র গড়তে হলে ভালো নাগরিক চাই। তাই বলে ভালো নাগরিক পাওয়ার ব্যাপারটা ভবিতব্যের ওপর ছেড়ে দিলে চলবে না। ভালো শিক্ষা দিয়ে ভালো নাগরিক তৈরি করতে হবে এবং সে দায়িত্ব রাষ্ট্রের। অথচ আমাদের দেশের রাষ্ট্রব্যবস্থা ও শিক্ষাব্যবস্থা দুটিই বিপরীত দিকে অবস্থান নিয়েছে। দেশের তরুণ নাগরিক হিসাবে গণতন্ত্রের কয়েকটি উন্নয়নের ধাপ দেখেছি।
এমন গণতন্ত্রে যদি রাষ্ট্রব্যবস্থার উন্নতি হতো তাহলে নিশ্চয়ই শিক্ষাব্যবস্থারও উন্নতি হতো। ধরেই নিলাম, অবকাঠামোগত উন্নয়নের মধ্য দিয়ে রাষ্ট্রব্যবস্থার উন্নতি হয়েছে। যদি উন্নতি হয়েই থাকে তাহলে ২০২৩-২৪ অর্থবছরে শিক্ষা খাতে জিডিপির ১ দশমিক ৭৬ শতাংশ বাজেট কেন? তাও আবার গত ১৫ বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন বাজেট। যেখানে শিক্ষা খাতে জিডিপির ৪ থেকে ৬ শতাংশ বরাদ্দ দেওয়ার পরামর্শ ইউনেস্কোর, সেখানে ১ দশমিক ৭৬ শতাংশ দেওয়া হলো কেন?
ছোটবেলা থেকেই জপে আসছি, শিক্ষাই জাতির মেরুদণ্ড। শিক্ষার মেরুদণ্ড শুধু বিশ্বের উন্নত দেশগুলোতেই দেখতে পাই। আমার দেশের শিক্ষার মেরুদণ্ড দেখার এখনো সৌভাগ্য হয়নি। যদি মেরুদণ্ড থাকতই, তাহলে নতুন বছরের শুরুতে শিশুদের হাতে বিনামূল্যে দেওয়া পাঠ্যবই অযত্ন-অবহেলায় নিম্নমানের কাগজে ছাপা হতো না। কাগজের মান আগের বছরের তুলনায় খারাপ হতো না। নতুন পাঠ্যবইয়ে ছবি ঝাপসা, তথ্যে ভুল হতো না। প্রতি বছর অপরিকল্পিতভাবে কারিকুলাম পরিবর্তন করতে হতো না। আমাদের আসলে শিক্ষাব্যবস্থা নিয়ে ভাবা উচিত। তা না হলে আজকের শিশু-কিশোর, তরুণরা শিক্ষার মেরুদণ্ড দেখতে পাবে না। ‘শিক্ষা জাতির মেরুদণ্ড’ এ উক্তি কেবল মুখস্থই করে যাবে।
মানুষ, সমাজ, দেশ, রাজনীতি, অর্থনীতি, শিল্প-সাহিত্য, সংস্কৃতি, জ্ঞান-বিজ্ঞান, প্রযুক্তির উন্নয়ন ঘটাতে হলে আগে শিক্ষার আধুনিকায়ন করতে হবে। শিক্ষা খাতে বাজেট বাড়াতে হবে। বিশ্ববিদ্যালয়ে গবেষণার জন্য পর্যাপ্ত প্রণোদনা দিতে হবে। সর্বস্তরের শিক্ষকদের সময়োপযোগী বেতন বৃদ্ধি করতে হবে। পক্ষান্তরে বিশ্ববিদ্যালয়ে গবেষণামূলক শিক্ষা প্রয়োগ করতে হবে। শিক্ষক-শিক্ষার্থী রাজনীতি থেকে বেরিয়ে এসে গবেষণায় আত্মনিয়োগ করতে হবে। বিশ্ববিদ্যালয়ে অপরাজনীতি, চাঁদাবাজি, দুর্নীতির চর্চা বন্ধ করতে হবে। শিক্ষার্থীদের আবাসন সংকট দূর করে যথাযথ শিক্ষার পরিবেশ তৈরি করে দিতে হবে। তবেই উন্নতি ঘটবে শিক্ষাব্যবস্থার। সেই সুশিক্ষা রাঙিয়ে দিবে রাষ্ট্রব্যবস্থাকে। আর রাষ্ট্র নতুন করে রাঙিয়ে দিবে বিশ্বকে।
মো. আব্দুন নূর , শিক্ষার্থী, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়