
প্রিন্ট: ১৮ এপ্রিল ২০২৫, ১১:২৯ এএম

কিশোরগঞ্জ ব্যুরো
প্রকাশ: ১৩ এপ্রিল ২০২৫, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ

ছবি: সংগৃহীত
আরও পড়ুন
কিশোরগঞ্জের ঐতিহাসিক পাগলা মসজিদের দানবাক্সে এবার রেকর্ড ৯ কোটি ১৭ লাখ ৮০ হাজার ৬৮৭ টাকা পাওয়া গেছে। আরও মিলেছে বৈদেশিক মুদ্রা ও সোনা-রুপার অলংকার। শনিবার সকালে দানবাক্সগুলো খোলা হয়। সন্ধ্যায় গণনা শেষে কিশোরগঞ্জ রূপালী ব্যাংকের প্রধান শাখার সহকারী জেনারেল ম্যানেজার মো. রফিকুল ইসলাম এ তথ্য জানান।
এ ছাড়া প্রতিবারের মতো এবারও পাওয়া গেছে মানুষের মনের বাসনা পূরণের আকুতি নিয়ে নানা চিরকুট। এসব চিরকুটের মধ্যে দুটি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে। এর মধ্যে একটিতে লেখা-‘পাগলা চাচা শেখ হাসিনা কোথায়।’ বেনামি অন্য চিরকুটে লেখা-‘ড. ইউনূস স্যারকে আরও পাঁচ বছর চাই।’ এর নিচে লেখা-‘সাধারণ জনগণ। আল্লাহ তুমি সহজ করে দাও।’
জানা গেছে, সকাল ৭টায় মসজিদের ১১টি লোহার দানবাক্স ও একটি ট্রাঙ্ক খোলা হয়। এতে পাওয়া যায় ২৯ বস্তা দেশি-বিদেশি মুদ্রা ও সোনা-রুপার অলংকার। এ সময় কিশোরগঞ্জের জেলা প্রশাসক ও পাগলা মসজিদ ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি ফৌজিয়া খান, পুলিশ সুপার, জেলা প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ও মসজিদ কমিটির সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন। পরে রূপালী ব্যাংকের ৭৫ কর্মকর্তা-কর্মচারী মেশিন নিয়ে এসব টাকা গণনায় অংশ নেন। তাদের সঙ্গে যোগ দেন মসজিদ কমপ্লেক্সের মাদ্রাসা ও এতিমখানার তিন শতাধিক শিক্ষক-শিক্ষার্থী।
টাকা গণনার কাজের সমন্বয়ক কিশোরগঞ্জ রূপালী ব্যাংকের প্রধান শাখার সহকারী জেনারেল ম্যানেজার মো. রফিকুল ইসলাম বলেন, টাকা গণনার সময় পুলিশ, র্যাব, সেনাবাহিনী ও আনসার সদস্যরা নিরাপত্তা নিশ্চিতে কাজ করছেন। ছিলেন জেলা প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারাও।
চার মাস ১১ দিন আগে গত বছরের ৩০ নভেম্বর এসব দানবাক্স খুলে ৮ কোটি ২১ লাখ ৩৪ হাজার ৩০৪ টাকা এবং স্বর্ণ ও রৌপ্যলংকার পাওয়া গিয়েছিল।
সংশ্লিষ্টরা জানান, এখানে একটি আন্তর্জাতিক মানের দৃষ্টিনন্দন ইসলামিক কমপ্লেক্স প্রতিষ্ঠার কাজ চলছে। ‘পাগলা মসজিদ ইসলামিক কমপ্লেক্স’ নামে নির্মিতব্য এ প্রতিষ্ঠানটির ব্যয় ধরা হয়েছে ১২৫ কোটি টাকা। এই কমপ্লেক্সে একসঙ্গে ৩০ হাজার মুসল্লি নামাজ আদায় করতে পারবেন।
জনশ্রুতি আছে, এক সময় মসনদে আলা বীর ঈসা খাঁর বংশধর জিলকদর খান নামে এক সাধকের বাস ছিল কিশোরগঞ্জ শহরের হারুয়া ও রাখুয়াইলের মাঝ দিয়ে প্রবাহিত নরসুন্দা নদের মধ্যবর্তী স্থানে জেগে ওঠা উঁচু টিলাকৃতি স্থানে। মুসলিম-হিন্দু নির্বিশেষে সব ধর্মের লোকের যাতায়াত ছিল ওই সাধকের আস্তানায়। তার দেহাবসানের পর তার উপাসনালয়টিকে মসজিদ হিসাবে ব্যবহার শুরু করেন এলাকাবাসী। আশ্চর্যজনকভাবে সেখানে দেশের দূর-দূরান্তের লোকজনের ভিড় বাড়তে থাকে। মানত কিংবা দান-খয়রাত করলে মনের বাসনা পূরণ হয়-এমন বিশ্বাস থেকে বিভিন্ন ধর্ম-বর্ণের নারী-পুরুষ ছুটে আসেন এ মসজিদে। তারা নগদ টাকা-পয়সা, সোনা ও রুপার অলংকারের পাশাপাশি গরু, ছাগল, হাঁস-মুরগি দান করেন। প্রতি জুমার নামাজের দিন এ মসজিদে মানত নিয়ে আসা মানুষের ঢল নামে। পাগলা মসজিদের এ ইতিহাস প্রায় আড়াইশ বছরেরও বেশি পুরনো।