
প্রিন্ট: ১৮ এপ্রিল ২০২৫, ১২:১৪ পিএম

যুগান্তর প্রতিবেদন, ঢাকা উত্তর
প্রকাশ: ১২ এপ্রিল ২০২৫, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ

আরও পড়ুন
সাভারের সিএন্ডবি এবং ব্যাংক টাউন এলাকায় শুক্রবার দিনদুপুরে দুটি চলন্ত বাসে ডাকাতি হয়েছে। দুই ঘটনায় ২০ লক্ষাধিক টাকার মালামাল লুট হয়েছে বলে যাত্রীরা জানিয়েছেন। এ নিয়ে সাভারে গত ২ মাসে তৃতীয়বারের মতো একই দিনে দুটি চলন্ত বাসে ডাকাতির ঘটনা ঘটল। তবে থানায় অভিযোগ না দেওয়ায় ছিনিয়ে নেওয়া মালামালের অঙ্ক পুলিশ জানাতে পারেনি। এ ঘটনার পর মহাসড়কে চলাচলরত যাত্রীদের মাঝে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। তারা মহাসড়কে পুলিশি টহল জোরদার করার দাবি জানিয়েছেন।
শুক্রবার বেলা সাড়ে ১১টায় সিএন্ডবি এলাকায় চলন্ত যাত্রীবাহী বাসে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা ডাকাতদের কবলে পড়েন। প্রত্যক্ষদর্শী জাবি ৫৩ ব্যাচের শিক্ষার্থী জান্নাতুল ফেরদৌস বলেন, বেলা সাড়ে ১১টায় টিউশন করিয়ে রেডিও কলোনি থেকে ক্যাম্পাসে আসার পথে সিএন্ডবির আগে রাজধানী বাসে হঠাৎ করে তিনজন ছিনতাইকারী উঠে। তিনজনের কাছেই চাকু ছিল। একজন ড্রাইভারকে চাকু দেখিয়ে বাস থামায়। বাকি দুজন যাত্রীদের চাকু দেখিয়ে ভয় দেখাতে থাকে। তাদের মুখ সম্পূর্ণ খোলা ছিল। আমার পাশে বসা মহিলার গলা থেকে সোনার চেইন নিয়ে যায়। পেছনে বসা আরেকজন মহিলার গলার চেন কেড়ে নেয় এবং একজনের পকেট থেকে ২০ হাজার টাকা নেয়। দিনের বেলায় চলন্ত বাসভর্তি লোকজনের মধ্যে এভাবে ছিনতাই কিভাবে হয়? আমরা কিভাবে যাতায়াত করব? আমাদের তো দিনের বেলায়ও কোথাও যাওয়া নিরাপদ নয়।
ছাত্ররা জানান, মহাসড়কের সিএন্ডবিতে রাজধানী পরিবহণে তিন ডাকাত উঠে ছুরির ভয় দেখিয়ে যাত্রীদের কাছে থেকে নগদ টাকা-পয়সা ও স্বর্ণালংকার লুটে নিয়ে যায়। পরে সাভার মডেল থানা পুলিশকে বিষয়টি জানানো হয়।
অপরদিকে সাভার ব্যাংক টাউন এলাকায় ডাকাতি হওয়া বাসের যাত্রীরা জানান, শুক্রবার দুপুর ১২টার দিকে ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের সাভারের ব্যাংক টাউন এলাকায় সাভার পরিবহণ (ঢাকা মেট্রো-১৩-০৭০৬) নামের একটি চলন্ত যাত্রীবাহী বাসে বেশ কয়েকজন ডাকাত ধারালো ছুরি দেখিয়ে যাত্রীদের কাছ থেকে সর্বস্ব কেড়ে নেয়।
এক তিনি বলেন, বাসে অস্ত্রের মুখে ডাকাতির সময় যাত্রীদের মোবাইল ফোন, নগদ টাকা, স্বর্ণালংকারসহ কয়েক লাখ টাকা লুটের ঘটনা ঘটেছে। যাত্রীরা জানান, ডাকাতি শেষে ডাকাতরা এবং বাসের লোকজন নম্বর প্লেটটি খুলে যাত্রীদের নামিয়ে ঢাকার দিকে পালিয়ে যায়।
প্রত্যক্ষদর্শী বাসযাত্রী সাভার প্রেস ক্লাবের সদস্য তায়েফুর রহমান বলেন, আমি সাভার পরিবহণের একটি বাসে পরিবার নিয়ে ঢাকায় যাচ্ছিলাম। বাসটি ব্যাংক টাউন বাসস্ট্যান্ডে থামানো হলে তিন যুবক গাড়িতে উঠে। পরে গাড়িটি ব্যাংক টাউন ব্রিজের ওপর পৌঁছালে মহিলা যাত্রীদের অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে তাদের সঙ্গে থাকা মোবাইল ফোন, গলার চেইন, কানের দুলসহ স্বর্ণালংকার ও নগদ টাকা ছিনিয়ে নিয়ে নেমে যায়। তিনি আরও বলেন, ছিনতাইকারীরা আমার স্ত্রীর গলায় থাকা লক্ষাধিক টাকা মূল্যের লকেটসহ এক ভরি ওজনের সোনার চেইন নিয়ে গেছে। এ সময় অন্যান্য নারী যাত্রীদের কাছ থেকে একইভাবে নগদ টাকা, স্বর্ণালংকার ও মোবাইল ফোন ছিনিয়ে নিয়ে গেছে।
তিনি বলেন, ডাকাতির পর বাসটি রাজধানীর কল্যাণপুরে নিয়ে গিয়ে বাস ফেলে তারা চলে যায়। তিনি ধারণা করছেন, বাসটির চালক ও সহকারী ছিনতাইকারীদের সঙ্গে জড়িত রয়েছে। তাদের আইনের আওতায় আনা হলে ছিনতাইকারীদের তথ্য পাওয়া যেতে পারে।
আরেক যাত্রী বায়েজিদ বলেন, এর আগেও সাভার থেকে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় পর্যন্ত ছিনতাই ও ডাকাতির ঘটনা ঘটেছে। ছাত্রছাত্রীরা ছিনতাইয়ের কবলে পড়লে বেশ কিছু বাস আটক করা হয়। কিন্তু ছিনতাই রোধ করা সম্ভব হচ্ছে না। পুলিশ নির্বিকার।
সাভার মডেল থানার ওসি জুয়েল মিঞা বলেন, ছিনতাইকারীদের ধরতে আমাদের সার্বক্ষণিক টহল টিম রয়েছে। ঘটনার সময়ও গেন্ডা এলাকায় আমাদের সদস্যরা কাজ করছিলেন। সাভার পরিবহণের বাসে ছিনতাইয়ের ঘটনা জানতে পেরে ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠিয়েছি। ছিনতাইকারীদের ধরতে আমাদের অভিযান অব্যাহত রয়েছে। এসব ঘটনা রুখতে কয়েকটি অতিরিক্ত চেকপোস্ট বসানো হয়েছে। সিভিল পোশাকে ডিবি পুলিশ মোতায়েন করা হচ্ছে।
এ বিষয়ে সাভার সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার শাহীনুর কবির যুগান্তরকে বলেন, আগের দুটি বাসের যাত্রীদের ছিনতাইয়ের ঘটনায় ৫ জনকে গ্রেফতারও করা হয়েছিল। তবে শুক্রবারের দুটি ঘটনায় কোনো অভিযোগ না পাওয়ায় এখন পর্যন্ত কোনো মামলা রেকর্ড করা হয়নি। তিনি বলেন, এটাকে ডাকাতি বলা যাবে না। এটা এক ধরনের ছিনতাই। আমরা জড়িতদের বিরুদ্ধে কঠিন ব্যবস্থা নেব।
এর আগেও সাভারের ব্যাংক টাউন ও সিএন্ডবি এলাকায় বেশ কয়েকটি চলন্ত বাসে ডাকাতির ঘটনা ঘটেছে।