
প্রিন্ট: ১৮ এপ্রিল ২০২৫, ১২:১৪ পিএম
সিদ্ধিরগঞ্জে দুই নারী ও শিশুর বস্তাবন্দি লাশ উদ্ধার

সিদ্ধিরগঞ্জ (নারায়ণগঞ্জ) প্রতিনিধি
প্রকাশ: ১২ এপ্রিল ২০২৫, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ

আরও পড়ুন
নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জে একই পরিবারের দুই নারী ও এক শিশুর বস্তাবন্দি খণ্ড-বিখণ্ড লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। শুক্রবার খবর পেয়ে পুলিশ মিজমিজি পশ্চিমপাড়া বড়বাড়ী পুকুরপাড় এলাকা থেকে ইটের সুরকি ও ময়লা-আবর্জনার স্তূপ থেকে পাঁচটি বস্তায় ভরা লাশগুলো উদ্ধার করে। নিহতরা হলো-মিজমিজি এলাকার আবদুস সামাদের দুই মেয়ে স্বপ্না আক্তার (৩৪) ও লামিয়া আক্তার (২২) এবং লামিয়ার ছেলে আবদুল্লাহ হাবিব (৪)। এ ঘটনায় পুলিশ লামিয়ার মাদকাসক্ত স্বামী ইয়াছিন আলীকে গ্রেফতার করেছে। এদিকে লাশগুলো উদ্ধারের খবরে আশপাশের শত শত মানুষ ঘটনাস্থলে ভিড় করে। অভিযুক্ত ইয়াছিনের ফাঁসি দাবি করে তারা ক্ষোভে ফেটে পড়েন। স্বজন ও পুলিশের ধারণা পারিবারিক কলহে এ হত্যাকাণ্ড ঘটতে পারে। নারায়ণগঞ্জের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার তাসনিম আক্তার জানান, মাদকাসক্তের কারণে সম্প্রতি ইয়াছিনকে পুলিশের ধরিয়ে দেওয়া হয়। এ ক্ষোভ থেকে ইয়াছিন স্ত্রী ও সন্তানসহ তিনজনকে খুন করে থাকতে পারে। তাকে গ্রেফতার করে পুলিশ জিজ্ঞাসাবাদ করছে। সিদ্ধিরগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ শাহীনুর আলম জানান, ময়নাতদন্তের জন্য লাশগুলো নারায়ণগঞ্জ হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে। ঘটনাটি গুরুত্বের সঙ্গে তদন্ত করা হচ্ছে।
জানা গেছে, ১ এপ্রিল মিজমিজি পশ্চিমপাড়ার আক্তার হোসেনের নিচতলার বাসায় ভাড়াটিয়া হিসাবে লামিয়ারা ওঠেন। চার দিন ধরে তিনজন নিখোঁজ ছিল। বাড়িওয়ালার ভাতিজা জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, চার দিন ধরে রুমটি তালাবদ্ধ ছিল। দুপুরে বাড়ির পাশে সড়কে ইট-সুরকি ও ময়লা আবর্জনার নিচ থেকে মৃত একজনের একটি হাত বের হয়ে আসে। কুকুরের মাটি আঁচড়ানোয় হাত বেরিয়ে আসাসহ পচা-দুর্গন্ধ ছড়িয়ে পড়ে। স্থানীয় লোকজন লাশ দেখতে পেয়ে ৯৯৯ নম্বরে ফোন করে পুলিশকে বিষয়টি জানায়। খবর পেয়ে সিদ্ধিরগঞ্জ থানা পুলিশ লাশগুলো উদ্ধার করে।
লামিয়ার বড় বোন শিরিন বেগম বলেন, লামিয়া প্রেম করে বিয়ে করে বখাটে ইয়াছিনকে। কয়েকদিন আগে জেল থেকে ছাড়া পেয়েছে নেশাগ্রস্ত ইয়াছিন। সে অটো চালাত ও মাদক বিক্রি করত। তাদের সংসারে ঝগড়া লেগেই থাকত। স্বপ্না মানসিক ভারসাম্যহীন ছিল। চার দিন ধরে দুই বোন ও ভাগ্নের কোনো খোঁজ পাচ্ছিলাম না। এ হত্যাকাণ্ডের বিচার চাই।
এলাকাবাসী জানায়, লামিয়া গার্মেন্টে কাজ করত। তার স্বামী ইয়াছিন কোনো রোজগার করত না। লামিয়ার কাছ থেকে সে টাকা-পয়সা নিত। কিছুদিন আগে মাদকের মামলায় জেল থেকে ছাড়া পেয়েছে ইয়াছিন। মাদকাসক্ত হওয়ায় তাকে পুলিশে ধরিয়ে দেওয়া হয়েছিল। নেশার টাকার জন্য প্রায়ই লামিয়াকে সে মারধর করত।
লামিয়ার দূরসম্পর্কের আত্মীয় শুক্কুর আলী জানান, ইয়াছিন একজন চিহ্নিত মাদকসেবী ও মাদক ব্যবসায়ী। মাদকের টাকার জন্য সে প্রায়ই স্ত্রীকে মারধর করত। লামিয়া শাশুড়ির কাছে গিয়ে প্রায় স্বামীর অত্যাচারের প্রতিকার চাইত। ইয়াছিন তার সৎ মাকেও মারধর করত। সম্প্রতি তিনি মাদকাসক্ত ছেলেকে পুলিশের কাছে ধরিয়ে দেন। ঈদের দুই দিন আগে জামিনে কারাগার থেকে বের হয়ে আসে ইয়াছিন এবং পরিবারের সঙ্গে ঈদ করে। ধারণা করা হচ্ছে পুলিশে ধরিয়ে দেওয়ার ক্ষোভ থেকেই ইয়াছিন স্ত্রী, শিশু সন্তান ও প্রতিবন্ধী স্বপ্নকে খুন করেছে। আমরা এর দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই।