
প্রিন্ট: ১৮ এপ্রিল ২০২৫, ১১:৫৬ এএম
হাসিনাকে ফেরানোর বিষয়ে চূড়ান্ত কিছু হয়নি: পররাষ্ট্র উপদেষ্টা

যুগান্তর প্রতিবেদন
প্রকাশ: ০৯ এপ্রিল ২০২৫, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
-67f58bad68f76.jpg)
ছবি: সংগৃহীত
আরও পড়ুন
প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বৈঠকে শেখ হাসিনাকে ফেরত আনার আলোচনা প্রসঙ্গে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন বলেছেন, বিষয়টি উত্থাপিত হয়েছে। কিন্তু এটি নিয়ে চূড়ান্ত কিছু হয়নি। আমি এটুকু বলব। মঙ্গলবার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে বিফ্রিংয়ে তিনি সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন। বৈঠক প্রসঙ্গে তিনি আরও বলেন, ইতিবাচক পরিবেশে সাক্ষাৎটা হয়েছে এবং দুই পক্ষ সম্পর্ক ভালো রাখা ও করার ওপর জোর দিয়েছে।
উত্তেজনাকর বক্তব্য পরিহার করা প্রসঙ্গে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, আমরা নিজেরাও এই পয়েন্টে একমত। এটি আসলে একতরফাভাবে হচ্ছে সে রকম নয়। হয়তো আমাদের কেউ কেউ বলছেন, যেটি তাদের না বলাই ভালো। একই কাজ ভারত থেকেও হয়ে থাকে।
পশ্চিমবঙ্গ থেকে প্রায় প্রতিদিনই শক্ত শক্ত কথাবার্তা শুনতে পাচ্ছেন। কেন্দ্রীয় সরকারের কেউ কেউ এটা করেছেন। সম্পর্ক উন্নয়ন করতে গেলে বরং আপত্তিকর কথাবার্তা কোনো পক্ষ থেকে না বলাই ভালো। আমরা বিষয়টি সেই দৃষ্টিকোণ থেকে দেখছি।
গণতন্ত্র নিয়ে ভারতের তাগিদ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, নির্বাচন নিয়ে কথাবার্তা তারা সব সময় বলে। এই সরকার তো নিজের থেকে বলেছে যে যথাশীঘ্র সম্ভব তাদের দায়িত্ব শেষ করে, যেসব দায়িত্ব এই সরকারের ওপর আছে সেগুলো শেষ করে, যথাশীঘ্র সম্ভব নির্বাচন দিয়ে রাজনীতিবিদদের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করবে, এটি এই সরকারের অঙ্গীকার। তিনি আরও বলেন, নির্বাচনের কথা প্রায়ই উচ্চারিত হয়। এমনকি যেসব দেশে গণতন্ত্র নেই সেসব দেশও জানতে চায়। এক ধরনের প্রেডিক্টিবিলিটি তারা চায়। এখানে বিনিয়োগের প্রশ্ন আছে এবং তারা জানতে চাইতেই পারেন কী হবে বা কখন কোন সরকার আসবে বলে তিনি জানান।
ভারতের ভিসা প্রসঙ্গে আলোচনা হয়েছে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, এটি সম্পূর্ণ তাদের সার্বভৌম অধিকার। তারা যদি না দেয়, তবে আপনি কিছুই করতে পারবেন না। বাংলাদেশও ভিসা বন্ধ করে দিয়েছিল ত্রিপুরাতে-এ তথ্য জানিয়ে তিনি বলেন, জনকেন্দ্রিক সম্পর্কের বিষয়টি একেকজন একেকভাবে নিতে পারেন। নরেন্দ্র মোদি স্পষ্টভাবে বলেছেন যে, বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ক দেশের সঙ্গে, মানুষের সঙ্গে এবং কোনো দলের সঙ্গে নয়। আমি এটিকে ইতিবাচক দিক হিসাবে দেখতে চাই।
তিনি আরও বলেন, ভিসা বিষয়টি তাদের নিজস্ব। এটি যদি না হয়, তবে যেটি হবে কোথাও শূন্যতা থাকে না। যদি ভিসার অভাবে সেখানে লোকজন যেতে না পারে তবে অন্য কোথাও যাবে এবং যাচ্ছেও। আমরা সেটাও সহায়তা করব যে, সমস্যা যাতে না হয়। বাংলাদেশের মানুষ যে যে কারণে ভারতে যেত, সেটি যদি অন্য কোথাও সমাধান করা যায়, আমরা সেটিও চেষ্টা করব। আমরা চাইব, ভারত ভিসা প্রক্রিয়া সহজ করুক এবং এটিতে তাদেরও স্বার্থ উদ্ধার হবে এবং আমাদেরও স্বার্থ উদ্ধার হবে। আমরা জানি যে, কলকাতার অর্থনীতি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে বলে তিনি জানান।
তিস্তা প্রসঙ্গে এক প্রশ্নের জবাবে তৌহিদ হোসেন বলেন, অগ্রগতি সময়সাপেক্ষ ব্যাপার। আমরা ঝট করে কোনো কিছু প্রত্যাশা করছি না যে, কালকেই কেউ তিস্তা সমস্যার সমাধান করে দেবে। চীনের সঙ্গে আমাদের একটি আমব্রেলা চুক্তি আছে নদীর পানি নিয়ে। নদীর পানি একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় সবার জন্য এবং আমাদের জন্য বিশেষ করে। তিনি বলেন, আমরা ওপেন আছি। ভারতের সঙ্গেও সহযোগিতা সম্ভব, চীনের সঙ্গেও সম্ভব। কোনোটাতেই বাধা নেই। আমা দেখব যে, কোন প্রজেক্টে কোথা থেকে সহায়তা নিলে আমাদের সুবিধা হবে। সে অনুযায়ী পানিসম্পদ মন্ত্রণালয় কাজ করবে।
চীন সফরের বিষয়ে তিনি বলেন, চীনে কিছু কিছু বিষয়ে অগ্রগতি হয়েছে। সর্বোচ্চ পর্যায়ে যোগাযোগ হওয়াটা গুরুত্বপূর্ণ। যোগাযোগ সর্বোচ্চ পর্যায়ে থাকলে অন্যান্য পর্যায়ে সম্পর্ক এগোনো সহজ হয়। দুই নেতার মধ্যে পারস্পরিক সম্পর্ক নিয়ে আলোচনা হয়েছে। কিছু কাগজপত্র সই হয়েছে। আমার মনে হয় সফরটি মোটামুটিভাবে একটি প্রভাব রাখতে পেরেছে।
পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সফর প্রসঙ্গে তৌহিদ হোসেন বলেন, পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সফর মোটামুটি প্রায় নিশ্চিত। তিনি যে আসবেন এটা চূড়ান্ত হয়ে গেছে। তবে তারিখটা নিয়ে একটু ফ্লুইড আছে। কিন্তু আমার মনে হয়, আগামী দুই থেকে একদিনের মধ্যে আমরা এটা চূড়ান্ত করে ফেলতে পারব। পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সফরে কোন বিষয়গুলো আলোচনা হবে জানতে চাইলে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, তিনি যেহেতু সফরে আসছেন আলোচনা করার জন্যই আসছেন। আমাদের সম্পর্কের সব দিক নিয়ে আলোচনা করব।
মার্কিন কর্মকর্তাদের সফরে আলোচনার বিষয়ে তৌহিদ হোসেন বলেন, একজন আসছেন এই অঞ্চলের, আরেকজন পাশের অঞ্চলের। যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্কের সব দিক নিয়ে আলাপ-আলোচনা হবে। সরাসরি যে কোনো ইস্যু আসলে আমরা আলোচনা করতে পারি।
রোহিঙ্গাদের ফেরানোর ব্যাপারে তিনি বলেন, থাইল্যান্ডের বৈঠকে এক লাখ ৮০ হাজার রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনযোগ্য, এটা মিয়ানমার পরিষ্কার বলেছে। বাকি তালিকা তারা রিভিউ করছে। আমরা তাদের দাবি জানিয়েছি-বাকি যারা আছে, তাদের ফেরানোর ব্যাপার যেন ত্বরান্বিত করে। এই তালিকা অনুমোদন করা মানে এই নই যে, কালকে তারা চলে যেতে পারবে। রাখাইনের বাস্তব অবস্থা আমরা সবাই জানি। এই অবস্থায় তাদের প্রত্যাবাসন করা সম্ভব নয়।
এক প্রশ্নের জবাবে লুটপাট কোনো প্রতিবাদের ভাষা নয়-উল্লেখ করে তৌহিদ হোসেন বলেন, যারা এমন কাজ করছে, তারা দেশের ভাবমূর্তি নষ্টের ষড়যন্ত্র করছে। দেশে যখন বিনিয়োগ সম্মেলন চলছে, তখন ফিলিস্তিনের পক্ষে আন্দোলনের নামে লুটপাটকে তিনি পরিকল্পিত বলে মনে করেন।