
প্রিন্ট: ১৩ এপ্রিল ২০২৫, ১২:২৯ এএম

যুগান্তর প্রতিবেদন
প্রকাশ: ০৫ এপ্রিল ২০২৫, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ

আরও পড়ুন
রাজধানীর মিরপুর ১১ নম্বর সেকশনের একটি ফ্ল্যাট থেকে এক বৃদ্ধের অর্ধগলিত লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। বৃদ্ধ মাশরুর রহমান দীর্ঘদিন ধরে একাই এক রুমের একটি ভাড়া ফ্ল্যাটে বাস করতেন। সন্তান, স্বজন থাকা সত্ত্বেও মাশরুরকে (৬৫) মৃত্যুর সময় মুখে পানি দেওয়ার জন্যও কেউ ছিল না।
মাশরুরের দুই ছেলে। স্ত্রী অনেক আগেই মারা গেছেন। দুই ছেলে পরিবার নিয়ে অন্যত্র বসবাস করেন। বৃদ্ধ বাবাকে কেউ সঙ্গে নিতে চাননি। এ কারণে মাশরুর একাই মিরপুর-১১ নম্বর সেকশনের এ-ব্লকের ২ নম্বর লেনের ৯ নম্বর সড়কের একটি বাড়ির নিচতলায় এক রুমের একটি ফ্ল্যাটে ভাড়া থাকতেন। শারীরিকভাবে দুর্বল হয়ে পড়লেও সন্তান-স্বজনদের কেউই তার পাশে থাকতেন না। একাকী বৃদ্ধ মাশরুর রহমানের মৃত্যু হয়েছে একদম নিঃসঙ্গ অবস্থায়। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় মাশরুর রহমানের ফ্ল্যাট থেকে দুর্গন্ধ বের হলে প্রতিবেশীরা তার সন্তানদের খবর দেন। এরপর মাশরুর রহমানের ছেলেরা বৃহস্পতিবার রাত ৯টায় জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯-এ ফোন করলে পল্লবী থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছায়। খবর দেওয়া হয় ফায়ার সার্ভিসকে। পুলিশ এবং স্থানীয় ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা মিলে ফ্ল্যাটের দরজা ভেঙে ভেতরে ঢুকে মাশরুরের অর্ধগলিত মৃতদেহ বিছানার ওপর পড়ে থাকতে দেখে। পরে মৃতদেহটি ময়নাতদন্তের জন্য শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজের মর্গে পাঠানো হয়।
পরিবারের সদস্যদের বরাতে পল্লবী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নজরুল ইসলাম যুগান্তরকে বলেন, পবিত্র ঈদুল ফিতরের দিন, অর্থাৎ সোমবার রাত সাড়ে ৯টার দিকে মাশরুরের পরিবারের সদস্যরা তার ফ্ল্যাটে গিয়ে তাকে শেষবারের মতো দেখেন। এসময় ছেলেরা তাকে খাবার দিয়ে আসেন। এরপর আর তার সঙ্গে কেউ যোগাযোগ করেননি। তিনি একাই ওই ফ্ল্যাটে রান্না করে খেতেন। এ ঘটনায় পল্লবী থানায় একটি অপমৃত্যু মামলা হয়েছে। পুলিশ তদন্ত শুরু করেছে। মাশরুরের মৃত্যুর কারণ নিশ্চিত করতে ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন এবং অন্যান্য প্রমাণের অপেক্ষায় রয়েছে। ওসি জানান, মাশরুরের শরীরে কোনো আঘাত বা জখমের চিহ্ন পাওয়া যায়নি।
মাশরুর রহমান যে বাড়িতে ভাড়া থাকতেন ওই বাড়ির এক বাসিন্দা নাম প্রকাশ না করার শর্তে যুগান্তরকে বলেন, একা থাকলেও তিনি কখনো কাউকে তার দুঃখ কষ্টের কথা বলতেন না। তার মৃত্যুর আগে পরিবারের সদস্যরা তার সঙ্গে ঠিকমতো যোগাযোগ রাখেননি। মাশরুর রহমানের মৃত্যু প্রমাণ করল একাকিত্ব কতটা ভয়াবহ হতে পারে।