রসে ভরা অতুলনীয় বাটার মোড়ের জিলাপি

রাজশাহী ব্যুরো
প্রকাশ: ১৮ মার্চ ২০২৫, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ

ছবি: যুগান্তর
মচমচে ও রসে ভরা জিলাপি। সম্পূর্ণ কেমিক্যাল-রংমুক্ত। স্বাদে-গন্ধে অতুলনীয়। রোজাদারের কাছে ইফতারিতে এ জিলাপির কদর আকাশছোঁয়া। অথচ রাজশাহী মহানগরীর ছোট একটি দোকানে তৈরি হয় এই জিলাপি। বিজ্ঞাপন বা প্রচারে নেই কোনো বাহুল্য। দোকানের সামনেও নেই সাইনবোর্ড। ৬৫ বছর ধরে দুই প্রজন্ম থেকে চলছে জিলাপির এ ব্যবসা। বছরের পর বছর রোজার দিনে দুপুরের পর থেকেই এই দোকানে জিলাপি কিনতে ক্রেতাদের উপচে পড়া ভিড়।
এবারও ব্যতিক্রম হয়নি। দোকানের নাম নেই বলে এ জিলাপি পরিচিত ‘বাটার মোড়ের জিলাপি’ নামে। এই জিলাপি শুধু একটি খাবারই নয়, এটি এখন রাজশাহীর একটি ঐতিহ্যের নাম। এ জিলাপি ছাড়া ইফতারি কল্পনাও করতে পারেন না রাজশাহীর মানুষ। তাই এর খ্যাতি ছড়িয়ে পড়েছে দূরদূরান্তেও।
সোয়েব উদ্দিন নামের এক ব্যক্তি ১৯৬০ সালে এই জিলাপি ব্যবসার শুরু করেছিলেন। তখন থেকে ধীরে ধীরে এটি স্থানীয়দের কাছে পরিচিত হয়ে ওঠে। কারিগর জামিলী সাহার হাত ধরে শুরু হয় জিলাপি তৈরির যাত্রা। পরে তার ছেলে কালিপদ সাহা বাবার সঙ্গে যোগ দিয়ে এই ঐতিহ্য ধরে রাখেন। ২০১৭ সালে কালিপদ সাহার মৃত্যুর পর তার দুই শিষ্য সাফাত আলী ও শফিকুল ইসলাম এই বিশেষ জিলাপি তৈরির কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন। ২০০২ সালে সোয়েব উদ্দিনের মৃত্যুর পর তার চার ছেলে সোহেল, শামীম, নাইট ও নাহিদ বাবার ব্যবসার হাল ধরেন।
শুরু থেকেই বাটার মোড়ের জিলাপির স্বাদ একই। মচমচে ও রসে ভরা এই জিলাপির বিশেষত্ব হলো-এটি সম্পূর্ণ কেমিক্যালমুক্ত এবং কৃত্রিম রংমুক্ত। এর উপাদানের মধ্যে রয়েছে আটা, ময়দা ও মাষকলাই ডালের সংমিশ্রণ, যা ৬ থেকে ৮ ঘণ্টা পানিতে ভিজিয়ে রেখে জিলাপি বানানো হয়।
নগরীর হেতমখাঁ এলাকার বাসিন্দা মনিরুল ইসলাম সোমবার দুপুরে জিলাপি কিনতে এসেছিলেন। তিনি বলেন, এ জিলাপির স্বাদই আলাদা। বছরের পর বছর স্বাদ একই রকম। তাই এটি আমাদের ইফতারিতে থাকেই। এই জিলাপি ছাড়া মনে হয় ইফতারি পরিপূর্ণ হয় না।
জিলাপির কারিগর সাফাত আলী বলেন, এ জিলাপি শুধু একটি ব্যবসা নয়। এটি একটি ঐতিহ্য, যা সোয়েব উদ্দিনের পরিবার ধরে রেখেছে। আর তারা একইভাবে ধরে রেখেছেন স্বাদ। তাদের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা হলো এই বিশেষ স্বাদকে আগামী দিনেও একই রকম রাখা।
দোকান মালিকদের একজন নাহিদ বলেন, প্রতিবছর রমজানে জিলাপির কদর বেড়ে যায়। সাধারণ দিনে ৯০-১০০ কেজি জিলাপি বিক্রি হয়, তবে রমজানে তা ২০০ কেজিরও বেশি হয়ে যায়। তিনি জানান, তারা দাম বাড়াতে চান না। কিন্তু দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির কারণে এবার প্রতি কেজি জিলাপির দাম ২২০ টাকা, যা আগের বছরের তুলনায় ২০ টাকা বেশি।