নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন সংশোধন হচ্ছে
ডিএনএ রিপোর্ট ছাড়াও ধর্ষণ মামলার বিচার করা যাবে

যুগান্তর প্রতিবেদন
প্রকাশ: ১৮ মার্চ ২০২৫, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ

নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের সংশোধনের নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। নতুন আইনে ডিএনএ রিপোর্ট ছাড়াও ধর্ষণ মামলার বিচার করা যাবে। মিথ্যা মামলার ক্ষেত্রেও কঠোর শাস্তির বিধান রাখা হয়েছে। সোমবার রাজধানীর বেইলি রোডের ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে এক সংবাদ সম্মেলনে অন্তর্বর্তী সরকারের আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল এসব কথা বলেন। এতে আরও বক্তব্য দেন বন ও পরিবেশ উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান এবং প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম। সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, নতুন দুটি ডিএনএ ল্যাব প্রতিষ্ঠা এবং শিশু ধর্ষণের মামলা আলাদাভাবে বিচারের জন্য বিশেষ ট্রাইব্যুনাল স্থাপনের উদ্যোগ রয়েছে।
আইন উপদেষ্টা বলেন, প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সভাপতিত্বে এক বিশেষ সভায় আইনটি সংশোধনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এতে ভুক্তভোগীকে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার বিধান রাখা হয়েছে। এর আগে ১২ মার্চ আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল ধর্ষণ মামলার তদন্ত ও বিচারের সময় কমিয়ে অর্ধেক করতে সংশোধিত নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের খসড়া প্রণয়ন করা হয়।
তিনি বলেন, ডিএনএ রিপোর্ট পাওয়ার অপেক্ষায় বছরের পর বছর মামলা ঝুলে থাকত। আমরা এ আইনে বিধান করেছি, ডিএনএ রিপোর্ট ছাড়াই আদালত যদি মনে করে মেডিকেল সার্টিফিকেট এবং পারিপার্শ্বিক সাক্ষীর ভিত্তিতে বিচার সম্ভব, তাহলে সেটা করতে পারে। এছাড়া ভুক্তভোগীদের বিভিন্ন সুরক্ষা দেওয়ার ব্যবস্থা করা হচ্ছে, তাদের ক্ষতিপূরণের ব্যবস্থা করছি। ধর্ষণকালে বা ধর্ষণের উদ্দেশ্যে যদি কোনো জখম করা হয়, সেটাকেও আমরা কঠোর শাস্তির আওতায় আনছি। আসিফ নজরুল বলেন, ধর্ষণের ক্ষেত্রে বিচারকাজের সময়সীমা কমিয়ে আনা হচ্ছে। এছাড়া আইনে শিশু ধর্ষণের মামলা আলাদাভাবে বিচারের জন্য বিশেষ ট্রাইব্যুনাল স্থাপনের বিধান রাখা হয়েছে। এতে সবাই নীতিগতভাবে সম্মত হয়েছেন। সম্মতি ছাড়া ধর্ষণের ঘটনায় বিচার কাজের সময় কমানো হচ্ছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আদালতে মামলার জট লেগে যেত। এখানে দুই ধরনের মামলা আসত। একটা হলো, সম্মতিসহ ধর্ষণের ঘটনা বা বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে ধর্ষণ। এসব মামলার অনেক আধিক্য ছিল। সম্মতি ছাড়া ধর্ষণের ঘটনার মামলাগুলোর বিচার এ কারণে আটকে থাকত। সেজন্য আমরা বিধান করেছি, বিয়ের প্রলোভনে ধর্ষণের ঘটনা, সেটা একটা আলাদা অপরাধ। আর সম্মতি ছাড়া যেসব অপরাধ, সেগুলো আইনে আলাদা অপরাধ হিসাবে চিহ্নিত হয়েছে। সম্মতি ছাড়া যেসব অপরাধ, সেগুলোর বিচারকাজের সময় কমানো হয়েছে। আমরা এটাতে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিচ্ছি।
উপদেষ্টা বলেন, আমরা ধর্ষণের মামলার ক্ষেত্রে কিছু সংজ্ঞাগত পরিবর্তন এনেছি। সংজ্ঞা পরিবর্তন করে শুধু পুরুষের মাধ্যমে না, যে কোনো ব্যক্তির মাধ্যমে ধর্ষণকে শাস্তিযোগ্য করা হচ্ছে। এছাড়া ধর্ষণের সংজ্ঞাকে আরও বিস্তৃত করা হয়েছে, বলাৎকারকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। শুধু পেনিট্রেশন না, যদি অন্য কোনো বস্তু ব্যবহার করা হয়, কিংবা যে কোনোভাবে ধর্ষণ করা হয়, সেসবকে আমরা শাস্তির আওতায় আনছি।
পরিবেশ উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, এ বিষয়ে উপদেষ্টা পরিষদের বিশেষ বৈঠক ছিল। বৈঠকে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন সংশোধনীর প্রস্তাব পাশ হয়েছে। এই যে ধর্ষণগুলো হয়েছে, মাগুরা, বরগুনাসহ দেশের অন্যান্য জায়গার ঘটনাগুলো বিবেচনায় রেখে আজ ‘নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন ২০০০’-এ বেশকিছু গুরুত্বপূর্ণ সংশোধনী আইন মন্ত্রণালয় থেকে উত্থাপন করা হলে উপদেষ্টা পরিষদ নীতিগত অনুমোদন দেয়। ইতোমধ্যে আমরা কিছু মতামত পেয়েছি, সেগুলো কাল বা পরশু যাচাই-বাছাই করব। ২৭ মার্চ এই সংশোধনী চূড়ান্তভাবে উপদেষ্টা পরিষদ অনুমোদন দেবে বলে আশা করছি। তিনি বলেন, ধর্ষণের বিচার বিলম্ব হওয়ার একটা বড় কারণ হলো পর্যাপ্ত ডিএনএ ল্যাব না থাকা। এ মুহূর্তে একটিমাত্র ল্যাব আছে। আজ (সোমবার) সিদ্ধান্ত হয়েছে, দ্রুততার সঙ্গে চট্টগ্রাম এবং রাজশাহীতে দুটি ল্যাব স্থাপন করব। আরেকটি সিদ্ধান্ত হয়েছে, বিশেষ জুডিশিয়াল কমিশনের মাধ্যমে দ্রুত কিছুসংখ্যক বিচারক নিয়োগ দেওয়া শুরু হবে। যাতে ধর্ষণসহ অন্যান্য মামলার বিচার প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত করা যায়। আবার দ্রব্যমূল্য স্থিতিশীল আছে বিবেচনায় নিয়ে এটা যেন স্থিতিশীল থাকে, সেজন্য সবসময় বাজার মনিটর, আমদানি, সরবরাহ খেয়াল রাখতে দায়িত্বপ্রাপ্ত উপদেষ্টাদের প্রধান উপদেষ্টা প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দিয়েছেন।
খসড়া আইন অনুযায়ী, ধর্ষণের মামলা তদন্তের সময় ৩০ দিন থেকে কমিয়ে ১৫ দিন এবং মামলার বিচারকাজ শেষ হওয়ার সময় ১৮০ দিন থেকে কমিয়ে ৯০ দিন করা হয়। বিচারক যদি মনে করেন তবে ডিএনএ রিপোর্ট ছাড়াই মেডিকেল সার্টিফিকেটের ভিত্তিতে মামলার বিচারকাজ ও তদন্তকাজ চালাতে পারবেন।