ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচন: চট্টগ্রাম-৪
বিএনপির প্রার্থী আসলাম জামায়াতের আনোয়ার

শহীদুল্লাহ শাহরিয়ার, চট্টগ্রাম ও এসএম ফোরকান আবু, সীতাকুণ্ড
প্রকাশ: ১৮ মার্চ ২০২৫, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ

ছবি: যুগান্তর
আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে প্রার্থীদের তোড়জোড় শুরু হয়েছে। চট্টগ্রাম-৪ (সীতাকুণ্ড, আকবরশাহ ও পাহাড়তলী আংশিক) আসনে বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামীর প্রার্থী প্রায় চূড়ান্ত। বিএনপি থেকে দলের চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা লায়ন মো. আসলাম চৌধুরীর মনোনয়ন অনেকটাই নিশ্চিত এবং তিনি এখানে একক প্রার্থী হিসাবেই আছেন। জামায়াতে ইসলামীর প্রার্থী ঘোষণা করা হয়েছে চট্টগ্রাম উত্তর জেলা জামায়াতের সাংগঠনিক সম্পাদক আনোয়ার সিদ্দিক চৌধুরীকে। এছাড়া জাতীয় পার্টি, বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্ট, বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টিসহ অন্য রাজনৈতিক দলগুলো পরিস্থিতি অনুকূলে থাকলে প্রার্থী দিতে পারে। তবে আপাতত বিএনপি ও জামায়াতের দুই প্রার্থী ইফতার মাহফিল, কর্মী সম্মেলনসহ নানা কর্মসূচির মাধ্যমে নিজেদের উপস্থিতি জানান দিচ্ছেন।
সূত্র জানায়, এ আসনে বিএনপির সাবেক কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিব লায়ন আসলাম চৌধুরী মনোনয়ন চাইবেন এবং হাইভোল্টেজ ও একক প্রার্থী হিসাবে তিনিই মনোনয়ন পাবেন বলে দলীয় সূত্রগুলো নিশ্চিত করেছে। দলীয় কর্মকাণ্ডে স্বোচ্চার থাকার কারণে ২০১২ সাল থেকে অন্তত চারবার কারাবরণ করেন এই বিএনপি নেতা। সর্বশেষ গ্রেফতার হয়ে টানা ৮ বছর ৩ মাস ৫ দিন জেল খাটেন। ৫ আগস্ট রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর তিনি জেল থেকে ছাড়া পান। অতীতে নির্যাতন এবং আগামীর নির্বাচন প্রসঙ্গে বিএনপির এই নেতা যুগান্তরকে বলেন, আমি মানুষের জন্য রাজনীতি করি। আন্দোলন-সংগ্রামে মাঠে ছিলাম। মানুষের পাশে ছিলাম। আগামী দিনেও থাকব, এটাই আমার প্রত্যয়।
সীতাকুণ্ডে সরকারবিরোধী আন্দোলন, সড়ক অবরোধসহ নানা কর্মসূচি পালনে জামায়াতের ভূমিকা ছিল উল্লেখযোগ্য। এই সংগঠনের কেন্দ্র ঘোষিত একক প্রার্থী আনোয়ার সিদ্দিক চৌধুরী যুগান্তরকে বলেন, সাংগঠনিক মতামতের ভিত্তিতেই আমাকে প্রার্থী ঘোষণা করা হয়েছে। আগামী নির্বাচন সামনে রেখে আমি টিমওয়ার্কের মাধ্যমে এগিয়ে যাচ্ছি। এখানে আমাদের সাংগঠনিক অবস্থান বেশ ভালো।
বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি থেকে চটগ্রাম জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর ও সীতাকুণ্ড উপজেলা শাখার সভাপতি জহির উদ্দিন মাহমুদ মনোনয়নপ্রত্যাশী। বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্টের (মোমবাতি) সীতাকুণ্ড উপজেলা শাখার সভাপতি মাওলানা মো. মুজিব উদ্দিন বলেন, দলীয়ভাবে এখনো প্রার্থীর বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়নি। তবে এ আসন থেকে ইসলামী ফ্রন্টের প্রার্থী হিসাবে ষোলশহর জামেয়া আহমদিয়া মাদ্রাসার শিক্ষক মাওলানা আবুল আসাদ মো. জোবাইর রজভীর নাম শোনা যাচ্ছে। সীতাকুণ্ড জাতীয় পার্টির সভাপতি রেজাউল করিম বাহার বলেন, দলীয় সিদ্ধান্তের ওপরই নির্ভর করছে নির্বাচনে তাদের অংশ্রগহণ করা-না-করার বিষয়টি।
এ আসনে স্বাধীনতার পর ১৯৭৩ সালের ৭ মার্চের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ প্রার্থী মোস্তাফিজুর রহমান সিদ্দিকী (এমআর সিদ্দিকী, বর্তমানে প্রয়াত) এমপি নির্বাচিত হন। তিনি স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম বাণিজ্যমন্ত্রী ছিলেন। ১৯৭৯ সালে ১৮ ফেব্রুয়ারি নির্বাচনে জয়ী হন বিএনপির ইঞ্জিনিয়ার লুৎফুল কবির সিদ্দিকী (এল কে সিদ্দিকী)। তিনি এমআর সিদ্দিকীকে পরাজিত করে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। ১৯৮৬ সালের ৭ মের নির্বাচনে এমপি নির্বাচিত হন আইনুল কামাল, ১৯৮৮ সালের ৩ মার্চ নির্বাচনে জয়ী হন মো. আইনুল কামাল। ১৯৯১ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি নির্বাচনে বিএনপির এল কে সিদ্দিকী, ১৯৯৬ সালের ১২ জুনের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ প্রার্থী এবিএম আবুল কাশেম মাস্টার এমপি নির্বাচিত হন। ২০০১ সালের ১ অক্টোবর নির্বাচনে বিএনপির এল কে সিদ্দিকী, ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর নির্বাচনে এমপি নির্বাচিত হন এবিএম আবুল কাসেম মাস্টার। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়ে ‘বিনা ভোটে’ এমপি নির্বাচিত হন মো. দিদারুল আলম। একইভাবে দিনের ভোট রাতে নিয়ে ২০১৮ সালের নির্বাচনে তিনিই এমপি নির্বাচিত হন। ২০২৩ সালে ‘আমি আর ডামি’ নির্বাচনে এমপি নির্বাচিত হয়েছিলেন প্রয়াত আবুল কাশেম মাস্টারের ছেলে এসএম আল মামুন।