
প্রিন্ট: ১৯ মার্চ ২০২৫, ০৫:৪৭ এএম
স্থানীয় ভোট আগে হলে সংসদ নির্বাচন বিলম্বের শঙ্কা
সংস্কার কমিশনের কিছু সুপারিশে ভিন্নমত ইসির

যুগান্তর প্রতিবেদন
প্রকাশ: ১৮ মার্চ ২০২৫, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ

আরও পড়ুন
নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের কিছু সুপারিশের বিষয়ে আপত্তি জানিয়ে চিঠি দিয়েছে নির্বাচন কমিশন। ওই চিঠিতে ইসি জানিয়েছে, কমিশনের কিছু সুপারিশ বাস্তবায়ন হলে ইসির ক্ষমতা খর্ব হবে। কমিশন প্রতিহিংসার শিকার হতে পারে। এছাড়া জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে স্থানীয় সরকার নির্বাচন আয়োজনে সংস্কার কমিশনের সুপারিশের বিষয়েও ভিন্নমত দিয়েছে। কমিশন মনে করে, স্থানীয় সরকার নির্বাচন আগে করলে জাতীয় সংসদ নির্বাচন বিলম্বিত হতে পারে। সোমবার জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ বরাবর এ চিঠি পাঠানো হয়। নির্বাচন কমিশনের সিনিয়র সচিব আখতার আহমেদ চিঠি পাঠানোর বিষয়টি সাংবাদিকদের কাছে স্বীকার করেছেন।
আখতার আহমেদ বলেন, নির্বাচনব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের ৯-১০টি সুপারিশের বিষয়ে ভিন্নমত জানিয়ে ঐকমত্য কমিশনের কাছে চিঠি দেওয়া হয়েছে। তিনি বলেন, চিঠিতে মতামত দেওয়ার কারণই হচ্ছে ইসির ক্ষমতা খর্ব হওয়া। কমিশনের যেখানে ভিন্নমত প্রকাশ করার সুযোগ আছে, সেখানে মতামত দিয়েছে। যেমন, সংস্কার কমিশনের সুপারিশে সংসদীয় আসনের সীমানা নির্ধারণে একটি স্বতন্ত্র কমিশন করার কথা বলা হয়েছে। নির্বাচন কমিশন বলেছে, এটির প্রয়োজন নেই। এ ছাড়া সংস্কার কমিশনের সুপারিশে আসনের সীমানা পুননির্ধারণের যে ফর্মুলার কথা বলা হয়েছে, সেটি হলে শহর অঞ্চলে আসন বেড়ে যাবে। ইসি মনে করে ভোটারসংখ্যা, জনসংখ্যা এবং আঞ্চলিক অখণ্ডতা বিবেচনা করে সংসদীয় আসনের সীমানা পুননির্ধারণ করা উচিত।
ইসি সচিব আরও বলেন, সংস্কার কমিশন নির্বাচনের পর ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে সার্টিফাই করার বিষয়ে একটি সুপারিশ করেছে। নির্বাচন কমিশন মনে করে, এটির প্রয়োজন নেই। কারণ, ফলাফলের যে গেজেট প্রকাশিত হয়, সেটি সার্টিফিকেশন। নির্বাচন কমিশনের দায়বদ্ধতা ও নির্বাচন কমিশনারদের শাস্তির বিষয়ে সংস্কার কমিশন যে সুপারিশ করেছে, তাতেও ভিন্নমত জানিয়েছে ইসি। ইসি সচিব বলেন, এ জন্য একটি ব্যবস্থা এখনই রয়েছে, সুপ্রিম কাউন্সিল আছে। নির্বাচন শেষ হওয়ার ৫ বছর, ১০ বছর পর নির্বাচন কমিশনারদের আদালতে দৌড়াতে হয়, এটি কি যৌক্তিক হবে-এমন প্রশ্ন রেখে ইসি সচিব বলেন, নির্বাচনে জয়ী হবেন একজন, বাকিরা সংক্ষুব্ধ হয়ে যেকোনো অভিযোগই করতে পারেন। এছাড়া জাতীয় পরিচয়পত্র সেবা নির্বাচন কমিশনের কাছে থাকা উচিত বলেও কমিশন মত দিয়েছে। কেননা, ২০০৭ সাল থেকে আমাদের অভিজ্ঞতা এবং স্কিলড করা হয়েছে। তাহলে এটা কেন নেওয়া হবে? বরং এটাকে আরো কতটুকু শক্তিশালী করা যায়, কলেবরটা কী করে বহুমুখী করা যায়, সেটা করতে হবে।
সূত্র জানিয়েছে, ওই চিঠিতে আরও কিছু বিষয়ে আপত্তির কথা জানিয়েছে ইসি। সাংবিধানিক দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ ও শপথ ভঙ্গ করলে পরবর্তীতে সংসদীয় কমিটি তদন্ত করার বিষয়ে ইসি বলেছে, এটা ঠিক হবে না। কারণ এর ফলে ইসি প্রতিহিংসার শিকার হতে পারে। নির্বাচন কমিশনের কর্মকর্তাদের অগ্রাধিকার ভিত্তিতে রিটার্নিং কর্মকর্তা নিয়োগের সুপারিশের বিষয়েও ভিন্নমত দিয়েছে কমিশন। এ বিষয়ে বলা হয়েছে, নির্বাচন কমিশন তার বিবেচনা অনুযায়ী সিনিয়রিটি, যোগ্যতা ও দক্ষতা অনুযায়ী রিটার্নিং কর্মকর্তা নিয়োগ দেবে। আরও জানা গেছে, আদালত কর্তৃক ফেরারি আসামি হিসাবে ঘোষিত ব্যক্তিদের প্রার্থী হওয়া থেকে বিরত রাখতে সংস্কার কমিশনের সুপারিশের বিষয়ে ভিন্নমত জানিয়েছে ইসি। কমিশন বলেছে, এ বিধান কার্যকর করা হলে অনেকেই আক্রোশের বশে নির্বাচনে অংশ নিতে পারবে না। বাংলাদেশের অভ্যন্তরে আইনি হেফাজতে থাকা ব্যতীত সব প্রার্থীর স্বশরীরে মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার বাধ্যবাধকতার সুপারিশের বিষয়ে ইসি বলেছে, স্বশরীরে অথবা অনলাইনে উভয় পদ্ধতিতে মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার বিধান রাখা যেতে পারে। নইলে ২০১৪ সালের নির্বাচনের মতো বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় অনেকেই জয়ের সুযোগ পাবে।