
প্রিন্ট: ০৯ এপ্রিল ২০২৫, ০৫:০৮ এএম
জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সংবাদ সম্মেলন
সংস্কারে মতামত জানাতে রাজনৈতিক দলকে চিঠি
ছয় কমিশনের পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন পাঠানো হয়েছে দলগুলোকে * ১৩ মার্চের মধ্যে মতামত দিতে হবে

যুগান্তর প্রতিবেদন
প্রকাশ: ১১ মার্চ ২০২৫, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ

ছয়টি সংস্কার কমিশনের পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদনের ওপর মতামত দিতে ৩৪টি রাজনৈতিক দলকে চিঠি দিয়েছে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন। চিঠিতে ১৬৬টি সুপারিশ তুলে ধরা হয়েছে। সুপারিশগুলো বাস্তবায়নে ছয়টি বিকল্প রয়েছে। সেগুলো হলো-‘নির্বাচনের আগে অধ্যাদেশের মাধ্যমে’, ‘নির্বাচনের আগে গণভোটের মাধ্যমে’, ‘নির্বাচনের সময় গণভোটের মাধ্যমে’, ‘গণপরিষদের মাধ্যমে’, ‘নির্বাচনের পর সাংবিধানিক সংস্কারের মাধ্যমে’ এবং ‘গণপরিষদ ও আইনসভা হিসাবে নির্বাচিত সংসদের মাধ্যমে’। ১৩ মার্চ বৃহস্পতিবারের মধ্যে এসব সুপারিশের বিষয়ে রাজনৈতিক দল ও জোটকে মতামত জানাতে হবে। তাদের মতামত পাওয়ার পর সংস্কার বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা শুরু হবে। সবাই ঐকমত্যে পৌঁছার পর একটি জাতীয় সনদ তৈরি করা হবে। সোমবার জাতীয় সংসদ ভবনে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানিয়েছেন জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি ড. আলী রীয়াজ। এ সময় তিনি বলেন, নির্বাচন ও সংস্কার প্রক্রিয়ার মধ্যে কোনো বিরোধ নেই।
আলী রীয়াজ বলেন, যখন যে দলের মতামত পাওয়া যাবে, সেসময় থেকেই রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা শুরু হবে। আশা করছি, ১৩ মার্চের মধ্যে রাজনৈতিক দলগুলো তাদের মতামত জানাবে। এক্ষেত্রে কোনো প্রশ্ন থাকলে তারা কমিশনের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারে। কমিশন এ বিষয়ে সবসময় প্রস্তুত রয়েছে। সংস্কার কমিশনের ১৬৬টি সুপারিশ রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে পাঠানোর কথা জানিয়ে তিনি বলেন, সুপারিশগুলোর মধ্যে সংবিধান সংস্কার সংক্রান্ত ৭০টি, নির্বাচনব্যবস্থা সংস্কার সংক্রান্ত ২৭টি, বিচার বিভাগ সংক্রান্ত ২৩টি, জনপ্রশাসন সংক্রান্ত ২৬টি এবং দুর্নীতি দমন কমিশন সংক্রান্ত ২০টি সুপারিশ ৩৪টি রাজনৈতিক দলের কাছে পাঠানো হয়েছে। তবে পুলিশ সংস্কার কমিশন মনে করে, তাদের সুপারিশগুলো প্রশাসনিক ব্যবস্থার মাধ্যমে বাস্তবায়ন করা সম্ভব।
ড. আলী রীয়াজ বলেন, প্রতিটি সুপারিশের ক্ষেত্রে দুটি বিষয়ে মতামত চাওয়া হয়েছে। প্রথমটি হলো সংশ্লিষ্ট সুপারিশের বিষয়ে একমত কি না। এতে তিনটি বিকল্প রাখা হয়েছে। সেগুলো হলো ‘একমত’, ‘একমত নই’ এবং ‘আংশিকভাবে একমত’। এ তিনটি বিকল্পের যে কোনো একটিতে টিকচিহ্ন দিয়ে মতামত জানাতে অনুরোধ করা হয়েছে। এছাড়া প্রতিটি সুপারিশের বিষয়ে সংস্কারের সময়কাল ও বাস্তবায়নের উপায়ের বিষয়ে মতামত চাওয়া হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, এই ক্ষেত্রে ছয়টি বিকল্প আছে। এসব ঘরের যে কোনো একটিতে টিকচিহ্ন দিয়ে মতামত দিতে বলা হয়েছে। এর বাইরে প্রতিটি সুপারিশের পাশে দলগুলোর ‘মন্তব্য’ দেওয়ার একটি জায়গাও রাখা হয়েছে। এ সময় রাজনৈতিক দলগুলোর পাশাপাশি গুরুত্বপূর্ণ সুপারিশগুলোর ব্যাপারে নাগরিকদের মতামত জানার ব্যবস্থা করা হবে বলেও জানান ড. আলী রীয়াজ।
তিনি বলেন, নির্বাচনের যে টাইম-টেবিল তৈরির চেষ্টা করা হচ্ছে, এখন পর্যন্ত টাইম-টেবিল দেখিনি। ডিসেম্বরে নির্বাচন করার ব্যাপারে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন। সরকারের পক্ষ থেকে বারবার বলা হয়েছে। আমি ব্যক্তিগতভাবে আশা করি, খুব শিগ্গিরই এ ব্যাপারে (নির্বাচন) আরও সুনির্দিষ্ট পদক্ষেপ আসবে। ফলে ঐকমত্য কমিশনের কাজের কারণে নির্বাচনি প্রক্রিয়া বিঘ্নিত হওয়ার কারণ আমি দেখি না। তিনি বলেন, যে কোনো অবস্থায়ই আমরা রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা করতে আগ্রহী। আনুষ্ঠানিক ও অনানুষ্ঠানিক প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে এ আলোচনা অগ্রসর হবে। সুপারিশের ব্যাপারে রাজনৈতিক দলগুলোর মতামতের পাশাপাশি নাগরিকদের মতামত জানার জন্য শিগ্গিরই ওয়েবসাইটের মাধ্যমে ব্যবস্থা করব। আমরা মনে করি, শুধু রাজনৈতিক দল নয়, এ দেশের প্রত্যেক নাগরিকের এই অধিকার আছে, এসব সংস্কারের বিষয়ে তারা যেন সুস্পষ্ট মতামত দিতে পারেন। অধ্যাদেশের মাধ্যমে সংবিধান সংস্কার করা যায় কি না-এমন প্রশ্নের জবাবে আলী রীয়াজ বলেন, ঐতিহাসিকভাবে বাংলাদেশে যেসব প্রক্রিয়ায় সংবিধান সংশোধন করা হয়েছে, সেটা আমরা বিবেচনায় রেখেছি। পাশাপাশি রাজনৈতিক দলগুলো এবং নাগরিক সমাজের পক্ষ থেকে যেসব প্রস্তাব আমাদের দেওয়া হয়েছে, সেগুলো আমরা সন্নিবেশিত করার চেষ্টা করেছি। অধ্যাদেশের মাধ্যমে সংবিধান সংস্কার করা যায়, এটা বাংলাদেশে হয়েছে। ফলে এটা সঠিক-বেঠিক, আমি একমত, আমি দ্বিমত হতে পারি। তবে বাংলাদেশে এটা অতীতে ঘটেছে যে, একটি অধ্যাদেশের মাধ্যমে সংবিধান সংশোধনী হয়েছে, যা পরবর্তী সময়ে জাতীয় সংসদে সংশোধনী হিসাবে গৃহীত হয়েছে।
গণপরিষদ নির্বাচন প্রসঙ্গে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি বলেন, গণপরিষদের আলোচনা আছে, আপনারা জানেন ন্যাশনাল সিটিজেন পার্টি খুব সুস্পষ্টভাবে বলেছে তারা গণপরিষদ চায়। এর বাইরেও অনেক রাজনৈতিক দল যারা অতীতেও গণপরিষদের কথা বলেছে। শুধু ৫ আগস্ট-পরবর্তী পরিস্থিতিতে নয়। বাংলাদেশে দীর্ঘদিন ধরে যারা সংবিধান নিয়ে আলোচনা করেন, রাষ্ট্র সংস্কারের কথা বলেন, তারা গণপরিষদের মাধ্যমে নতুন সংবিধান প্রণয়নের কথা বলেছেন।