Logo
Logo
×

শেষ পাতা

দর্শনায় বিএনপির দুই গ্রুপে সংঘর্ষে নিহত ১

রাজশাহীতে আহত ১০, বই বিতরণ বন্ধ * চট্টগ্রামে নোমানের দোয়া মাহফিলে খাবার নিয়ে হাতাহাতি

Icon

রাজশাহী ব্যুরো ও দামুড়হুদা (চুয়াডাঙ্গা) প্রতিনিধি

প্রকাশ: ০৯ মার্চ ২০২৫, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

দর্শনায় বিএনপির দুই গ্রুপে সংঘর্ষে নিহত ১

সংগৃহীত ছবি

চুয়াডাঙ্গা টিসিবির পণ্যের কার্ড বিতরণকে কেন্দ্র করে সদর উপজেলা ও দর্শনা থানার তিতুদহ ইউনিয়ন বিএনপির দু’গ্রুপের সংঘর্ষে ধারালো অস্ত্রের আঘাতে একজন নিহত এবং গুরুতর আহত হয়েছে বিএনপি ও যুবলীগের অন্তত ১০ জন। শনিবারের এ সংঘর্ষে নিহত রফিকুল ইসলাম রফিক তিতুদহ গ্রামের মৃত আব্দুর রহিমের ছেলে ও তিতুদহ ইউনিয়ন বিএনপির সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক ছিলেন। এদিকে রাজশাহীতে আওয়ামী লীগ ও যুবলীগের তিন নেতার গ্রেফতারকে কেন্দ্র করে শুক্রবার বিএনপির দুই গ্রুপের বোমাবাজি, সংঘর্ষ, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনায় ১০ জন আহত হয়েছেন। নগরীর প্রাণকেন্দ্র রেলগেট, শালবাগান, সপুরা, দড়িখড়বোনা ও উপশহর এলাকার এ সংঘর্ষের সময় কয়েকটি বাড়িতে ভাঙচুরের পাশাপাশি কয়েকটি মোটরসাইকেলেও আগুন দেওয়া হয়।

চুয়াডাঙ্গার স্থানীয় ও পুলিশ সূত্র জানায়, শনিবার দামুড়হুদা উপজেলার দর্শনা থানার তিতুদহ বাজারে টিসিবির পণ্যের কার্ড বিতরণকে কেন্দ্র করে বাজারের পাশে দুপক্ষের সংঘর্ষে ঘটনাস্থলে নিহত হয় রফিকুল ইসলাম। এতে আহত হয় অন্তত ১০ জন।

দর্শনা থানা বিএনপির সহসভাপতি মো. মশিউর রহমান মিলন বলেন, দর্শনা থানার তিতুদহ ইউনিয়নের আওয়ামী লীগের সাবেক চেয়ারম্যান মো. শুকুর আলীর ডান হাত ছিল বর্তমান তিতুদহ ইউনিয়ন বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আবুল হোসেন টোটনের আপন ভাতিজা তিতুদহ ইউনিয়ন যুবলীগের প্রচার সম্পাদক ও ৮নং ওয়ার্ডের সাবেক মেম্বার তসলিমুজ্জামান সাগর। ওই সময় চেয়ারম্যান ও তার সহযোগীরা বিএনপির নেতাদের ওপর জুলুম-অত্যাচার করেছে।

৫ আগস্টের পর তিতুদহ ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি মিলন মিয়া, সাধারণ সম্পাদক আবুল হোসেন টোটনের ভাতিজা তিতুদহ ইউনিয়ন যুবলীগের প্রচার সম্পাদক ও ৮নং ওয়ার্ডের সাবেক মেম্বার তসলিমুজ্জামান সাগর বেশ কয়েকজন আওয়ামী লীগের মেম্বারকে নিয়ে এলাকায় আওয়ামী লীগ, যুবলীগের পুনর্বাসনের নামে চাঁদাবাজি করে আসছিল। এর প্রতিবাদ করায় তিতুদহ ইউনিয়ন বিএনপির সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক রফিকুল ইসলামসহ স্থানীয় প্রবীণ বিএনপি নেতাদের মধ্যে বিরোধের সৃষ্টি হয়। বিষয়টি দলের হাইকমান্ডকে জানানো হয়েছিল। ইউনিয়ন সভাপতি মিলন ও সেক্রেটারি টোটন এককভাবে আধিপত্য বিস্তারের লক্ষ্যে দু’গ্রুপে চরম দ্বন্দ্ব শুরু হয়। এর মধ্যে ঈদের টিসিবির পণ্য বিতরণ করার খবর আসে। ইউনিয়নের বিএনপি ও জামায়াতের সমন্বয়ে টিসিবির পণ্য বিতরণ কার্ড ভাগাভাগি করে বিতরণ করা হয়েছে। কিন্তু মিলন ও টোটন টিসিবির পণ্য বিতরণ কার্ড এককভাবে বিতরণ করবে বলে মহড়া শুরু করে। এতে বিএনপি নেতা রফিকুল ইসলাম নিহত হয়েছে।

দামুড়হুদা উপজেলার দর্শনা থানা বিএনপির সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা খাজা আবুল হাসনাত বলেন, ইউনিয়ন বিএনপির সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক রফিকুল ইসলাম ছিলেন প্রতিবাদী। ওই ইউনিয়ন সভাপতি মিলন মিয়া ও সাধারণ সম্পাদক টোটনের বিভিন্ন অপকর্মের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করায় তাকে জীবন দিতে হলো। এছাড়া রফিকের ভাই শফিকের অবস্থাও আশঙ্কাজনক।

দর্শনা থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) শহীদ তিতুমীর বলেন, ঈদের টিসিবির পণ্যের কার্ড ভাগাভাগি নিয়ে বিএনপির দুই গ্রুপের সংঘর্ষে একজন নিহত হয়েছে। তার লাশ উদ্ধার করে সুরতহাল প্রতিবেদন শেষে পোস্টমর্টেমের জন্য চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।

এদিকে রাজশাহীতে আওয়ামী লীগ ও যুবলীগের তিন নেতার গ্রেফতারকে কেন্দ্র করে বিএনপি দুই গ্রুপের বোমাবাজি, সংঘর্ষ, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের খবর পাওয়া গেছে। শুক্রবার রাতে নগরীর প্রাণকেন্দ্র রেলগেট, শালবাগান, সপুরা, দড়িখড়বোনা ও উপশহর এলাকায় মহানগর যুবদল নেতা মারুফ হোসেন ও মহানগর মহিলা দলের নেত্রী লাভলী খাতুনের সমর্থকদের মধ্যকার এই সংঘর্ষের সময় দায়িত্ব পালনকালে রাজশাহী মহানগর পুলিশের বিশেষ শাখার (সিটিএসবি) কনস্টেবল তোফাজ্জল হোসেনসহ ১০ জন আহত হন। রক্তাক্ত তোফাজ্জলকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। আহত অন্য নয়জন বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মী।

পুলিশ ও এলাকাবাসী সূত্রে জানা গেছে, বৃহস্পতিবার নগরীর কাদিরগঞ্জ এলাকার একটি বহুতল ভবন ঘেরাও করেন মহানগর মহিলা দলের ক্রীড়াবিষয়ক সম্পাদক লাভলী খাতুন। এরপর তিনি পুলিশকে খবর দেন। পুলিশ সেখানে গেলে লাভলী তাদের জানান, ওই ভবনে বোয়ালিয়া থানা আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সম্পাদক মোস্তাক আহমেদ বাবু ওরফে ব্যাটারি বাবুসহ আরও কয়েকজন নেতা ঢুকেছেন। ওই ভবনের সব ফ্ল্যাট তল্লাশি করে পুলিশ মহানগর যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক তৌরিদ আল রনির সহযোগী যুবলীগ নেতা সাব্বির বাবুকে আটক করে।

এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে দড়িখড়বোনা রেলগেট এলাকায় শুক্রবার সন্ধ্যার পর থেকে বিএনপির অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীদের উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। রাত ১০টার দিকে যুবদল নেতা মারুফ হোসেনের নেতৃত্বে নেতাকর্মীরা লাভলী খাতুনের বাড়ির সামনে জড়ো হয়। খবর পেয়ে লাভলীর অনুসারীরাও বিভিন্ন দিক থেকে ছুটে আসে। তখন দুই পক্ষের মধ্যে ধাওয়া-পালটাধাওয়া শুরু হয়। দুই পক্ষই হাত বোমার বিস্ফোরণ ঘটায়। এ সময় মারুফের নেতৃত্বে একদল নেতাকর্মী লাভলীর বাড়িসহ তিনটি বাড়িতে ব্যাপক ভাঙচুর চালায়। এ হামলায় লাভলী, তার মেয়েসহ চারজন আহত হন। লাভলীর অনুসারীরাও পরে মারুফের ব্যক্তিগত চেম্বার ভাঙচুর করে।

এদিকে সংঘর্ষের পর লাভলী খাতুন তাৎক্ষণিক এক সংবাদ সম্মেলনে অভিযোগ করে বলেন, যুবদল নেতা মারুফের নেতৃত্বে তার বাসাবাড়িসহ বিভিন্ন স্থানে হামলার ঘটনা ঘটেছে। মারুফ টাকার বিনিময়ে পলাতক আওয়ামী লীগ ও যুবলীগ নেতাদের আশ্রয় দিচ্ছে।

এ বিষয়ে কথা বলতে মারুফের মোবাইল নম্বরে ফোন করা হলেও তিনি ধরেননি। তবে মারুফ ঘনিষ্ঠ এক যুবদল নেতার নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, মহিলা নেত্রী লাভলী কয়েক মাস ধরে নানান অপকর্মে জড়িয়েছেন। যাকে-তাকে আওয়ামী লীগের দোসর ট্যাগ লাগিয়ে রাস্তাঘাটে হেনস্তা করছেন। তাকে বারণ করলে বিএনপির নেতাকর্মীদের সঙ্গেও খারাপ আচরণ করছেন। এসব কারণে শুক্রবার রাতের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে।

বিএনপির দুই গ্রুপে সংঘর্ষে বই বিতরণ পণ্ড : রাজশাহীতে বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি পদকে কেন্দ্র করে বিএনপির দুপক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ ও ধাওয়া-পালটাধাওয়া হয়েছে। শনিবার পবা উপজেলার বাগসারা উচ্চ বিদ্যালয়ের এ ঘটনায় অন্তত ৫ জন আহত হয়েছেন। এতে বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মাঝে বই বিতরণ কার্যক্রম পণ্ড হয়ে গেছে।

স্থানীয় সূত্র জানিয়েছে, পবার বাগসারা উচ্চ বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি কে হবেন-তা নিয়ে বেশ কিছুদিন ধরেই নওহাটা পৌর বিএনপির দুটি পক্ষের মধ্যে দ্বন্দ্ব বিরাজ করছে। এরই মধ্যে কয়েকদিন আগে ওই বিদ্যালয়ের সভাপতি হিসাবে মনোনীত হন নওহাটা পৌর বিএনপির সভাপতি রফিকুল ইসলাম। নতুন সভাপতি হওয়ায় তাকে নিয়ে শনিবার বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মাঝে আনুষ্ঠানিকভাবে বই বিতরণের আয়োজন করেন প্রধান শিক্ষক।

এ খবর পেয়ে আরেক পক্ষ নওহাটা পৌরসভার সাবেক মেয়র মকবুল হোসেন গ্রুপের নেতাকর্মীরা গিয়ে স্কুলে জড়ো হন। একপর্যায়ে সকাল ১০টার দিকে রফিুকল গ্রুপের সঙ্গে মকবুল গ্রুপের কর্মী-সমর্থকদের মাঝে সংঘর্ষ ও ধাওয়া-পালটাধাওয়ায় অন্তত ৫ জন আহত হন। পরে খবর পেয়ে পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রেণ আনে। এ ঘটনার পর পণ্ড হয়ে যায় নতুন বই বিতরণ কার্যক্রম। এ ঘটনায় স্কুল কমিটির পক্ষ থেকে থানায় অভিযোগ করা হয়েছে।

নোমানের দোয়া মাহফিলে খাবার নিয়ে হাতাহাতি : চট্টগ্রাম ব্যুরো জানায়, বিএনপির কেন্দ্রীয় ভাইস চেয়ারম্যান প্রয়াত আবদুল্লাহ আল নোমানের শোকসভা ও ইফতার মাহফিলে মঞ্চে বসাকে কেন্দ্র করে দুই পক্ষে হাতাহাতির খবর পাওয়া গেছে। শনিবার নগরীর জিইসি কনভেনশন সেন্টারে এ ঘটনার ছবি তুলতে গিয়ে নাজেহাল হয়েছেন যমুনা টেলিভিশন চট্টগ্রাম ব্যুরোর রিপোর্টার মামুনুর রশীদ অভি ও ক্যামেরা পার্সন সুজন চন্দ্রনাথ। যমুনা টিভির ক্যামেরাও এ সময় ছিনিয়ে নেওয়া হয়। তবে পরে সিনিয়র নেতাদের হস্তক্ষেপে পরিস্থিতি শান্ত হয়। জাতীয়তাবাদী শ্রমিক দল চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিটির উদ্যোগে আয়োজিত এ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসাবে বক্তব্য দেন চট্টগ্রাম উত্তর জেলা বিএনপির সভাপতি গোলাম আকবর খোন্দকার। বিশেষ অতিথি ছিলেন বিএনপি চেয়ারপারসনের বিশেষ সহকারী ও জাতীয় শ্রমিক দলের সমন্বয়কারী সামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাস ও সিটি মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন।

মাহফিলে হাতাহাতি ও যমুনা টিভির সাংবাদিকদের লাঞ্ছিত করা প্রসঙ্গে নোমানের একান্ত সচিব নুরুল আজিম হিরু বলেছেন, এটা বিচ্ছিন্ন ঘটনা। খাবার-দাবার নিয়ে কর্মীদের মধ্যে বিশৃঙ্খলা ও হট্টগোল হয়েছে। সিনিয়রদের হস্তক্ষেপে পরিস্থিতি দ্রুত শান্ত হয়েছে।

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম