Logo
Logo
×

শেষ পাতা

ব্যয় হবে ৫০ কোটি ডলার

প্রথমবার বিদেশি ঋণে সার আমদানি

জেদ্দায় আইটিএফসির বৈঠকে ১ বিলিয়ন ডলার ঋণের সিদ্ধান্ত * বাকি ৫০ কোটি ডলার ঋণে জ্বালানি তেল আমদানি

মিজান চৌধুরী

মিজান চৌধুরী

প্রকাশ: ০২ মার্চ ২০২৫, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

প্রথমবার বিদেশি ঋণে সার আমদানি

কৃষকের সার ও জ্বালানি তেল আমদানিতে একশ কোটি (১ বিলিয়ন) মার্কিন ডলার ঋণ নিচ্ছে অন্তর্বর্তী সরকার। ‘ইন্টারন্যাশনাল ইসলামিক ট্রেড ফাইন্যান্স করপোরেশন (আইটিএফসি) এ ঋণ দিতে আগ্রহ প্রকাশ করেছে। দেশীয় মুদ্রায় ঋণের অঙ্ক ১২ হাজার ২০০ কোটি টাকা। যার মধ্যে সার আমদানিতে ৫০ কোটি ডলার এবং জ্বালানি তেল আমদানিতে বাকি অর্থ দেওয়া হবে। তবে এটিই প্রথম সার আমদানির জন্য বিদেশি ঋণ নেওয়া হচ্ছে।

এর আগে ডিসেম্বরে সৌদি আরবের জেদ্দায় আন্তর্জাতিক ঋণ দান সংস্থা আইটিএফসির সঙ্গে একটি বৈঠকে অংশগ্রহণ করে অন্তর্বর্তী সরকারের উচ্চপর্যায়ের প্রতিনিধিদল। সেখানে আগামী অর্থবছরের (২০২৫-২৬) চাহিদা পূরণে সার ও জ্বালানি তেল আমদানির জন্য প্রয়োজনীয় অর্থের পরিকল্পনা তুলে ধরা হয়। আইটিএফসির সঙ্গে বৈঠক শেষে ঋণ পাওয়ার বিষয়ে বাংলাদেশের অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ (ইআরডি) একটি প্রতিবেদন তৈরি করেছে। সেখানে তুলে ধরা হয়েছে সার ও জ্বালানি তেল আমদানির জন্য ঋণ পাওয়ার বিষয়টি।

এ প্রসঙ্গে অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ জানান, সার আমদানির জন্য প্রথমে আইটিএফসি ২০ কোটি মার্কিন ডলার সহায়তা দিতে রাজি হলেও পরবর্তী পুরোটা অর্থাৎ ৫০ কোটি ডলার দেওয়ার প্রতিশ্রুতি পাওয়া গেছে। এটি অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) সচিব মো. শাহরিয়ার কাদের ছিদিক্কী আমাকে অবহিত করেছেন। আশা করছি সংস্থার কাছ থেকে প্রত্যাশা অনুযায়ী ঋণ মিলছে। সার আমদানির জন্য ৫০০ মিলিয়ন ডলার পাওয়া যাবে আইটিএফসির কাছ থেকে।

আন্তর্জাতিক সংস্থা আইটিএফসি হলো ইসলামিক ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক (আইএসডিবি) গ্রুপের একটি স্বায়ত্তশাসিত সত্তা। প্রাথমিকভাবে এটি অরগানাইজেশন অব ইসলামিক কো-অপারেশন (ওআইসি) সদস্য দেশগুলোতে (যেমন বাংলাদেশ) বাণিজ্য অর্থায়ন প্রদান বা ঋণ বিতরণ করে থাকে।

২০২৪ থেকে ২০২৬ সালের মধ্যে আইটিএফসির মাধ্যমে বাংলাদেশকে মোট ৩৬০ কোটি ডলার দেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে। এর মধ্যে ১৬০ কোটি বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশনের (বিপিসি) জন্য এবং ৫০ কোটি ডলার পাবে পেট্রোবাংলা।

সূত্রমতে, ১৪ ডিসেম্বর জেদ্দায় অনুষ্ঠিত বৈঠকে চিফ অপারেটিং অফিসার নাজীম নূরদালি আইটিএফসির পক্ষে এবং ইআরডির সচিব মো. শাহরিয়ার কাদের ছিদিক্কী বাংলাদেশের পক্ষে নেতৃত্ব দিয়েছেন। সেখানে অর্থবছরের (২০২৫-২৬) খাদ্য নিরাপত্তা ও জ্বালানি খাতে অর্থায়নের পরিকল্পনাটি বাংলাদেশের পক্ষ থেকে তুলে ধরে ইআরডির সচিব বলেন, ৪৮ বছরের সম্পর্ক আইটিএফসির সঙ্গে। এ সময় জ্বালানি নিরাপত্তা নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে বাংলাদেশ সরকারকে সহায়তার আহ্বান জানান তিনি।

বৈঠকে আইটিএফসির চিফ অপারেটিং অফিসার নাজীম নূরদালি বলেন, বিগত ৪৮ বছরে সংস্থাটি ২৩ বিলিয়ন ডলার অর্থায়ন করেছে বাংলাদেশ উন্নয়ন এজেন্ডা বাস্তবায়নে। এর মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের সঙ্গে একটি শক্তিশালী সম্পর্কের অবস্থান প্রমাণিত হয়। একই সঙ্গে বাংলাদেশকে দেওয়া অর্থ দিয়ে সুন্দরভাবে কর্মকাণ্ড বাস্তবায়ন এবং ঋণের কিস্তি পরিশোধ করেছে কোনো ধরনের প্রতিবন্ধকতা বা বাধা-বিপত্তি ছাড়াই।

ইআরডির প্রতিবেদনে ঋণসংক্রান্ত বিষয়ে বলা হয়, দেশের খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ৫০ কোটি মার্কিন ডলার ঋণের প্রস্তাব করা হয় আইটিএফসি। এর মধ্যে প্রথমে ২০ কোটি ডলার দিতে রাজি হয় সংস্থাটি। যদিও বৈঠকের পর আরও ৩০ কোটি ডলার দেওয়ার বিষয়টি ইআরডিকে নিশ্চিত করেছে আইটিএফসি। এই ঋণের সুদহার ১ দশমিক ৭৫ শতাংশ।

এর আগে ২১-২৬ অক্টোবর ওয়াশিংটনে অনুষ্ঠিত বিশ্বব্যাংক এবং আইএমএফের বার্ষিক সম্মেলন চলাকালে অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদের সঙ্গে এক পার্শ্ব বৈঠকে (সাইড মিটিং) জ্বালানি ও সার আমদানির জন্য বাংলাদেশকে ২০০ কোটি মার্কিন ডলার ঋণের প্রতিশ্রুতি দেন আইটিএফসি প্রতিনিধিরা।

অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) কর্মকর্তারা জানান, দেশের কৃষি খাতকে টিকিয়ে রাখতে প্রয়োজনীয় সার সরবরাহ নিশ্চিত করতেই সংস্থাটির কাছে এই তহবিল চাওয়া হয়েছে।

বিসিআইসির তথ্য অনুসারে বাংলাদেশে ইউরিয়া, টিএসপি এবং ডিএপিসহ বার্ষিক ৬৮ লাখ টন বিভিন্ন সারের প্রয়োজন হয়। এর মধ্যে ইউরিয়ার বার্ষিক চাহিদা প্রায় ২৭-৩০ লাখ টন যা প্রাথমিকভাবে আমদানির মাধ্যমে পূরণ হয়ে থাকে। যদিও স্থানীয়ভাবে ইউরিয়া উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ১০ লাখ টন, তবে গ্যাস সংকটের কারণে সার কারখানাগুলো নিষ্ক্রিয় অবস্থায় পড়ে থাকায় তা পূরণ করা সম্ভব হয় না।

এদিকে জেদ্দায় অনুষ্ঠিত বৈঠকে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে জানানো হয়, আগামী অর্থবছরে জ্বালানি তেল আমদানির জন্য ২২৫ কোটি মার্কিন ডলারের প্রয়োজন। এর মধ্যে ১৭৫ কোটি ডলার ফাইন্যান্স করবে বাংলাদেশ ব্যাংক। ওই অর্থ দিয়ে বকেয়া ঋণের ৮৭ কোটি ৫০ লাখ ডলার পরিশোধ করা হবে। এর বাইরে আইটিএফসির কাছ থেকে ৫০ কোটি ডলার ঋণ চাওয়া হয়। যা চলতি অর্থবছরের পর্যালোচনা করা হবে। এই ঋণের সুদের হার পড়বে ১.৭৫ শতাংশ। প্রশাসনিক ফি হচ্ছে দশমিক ২ শতাংশ। ঋণটিতে ৬ মাসের এসওএফআর প্লাস সুবিধা রয়েছে।

সংশ্লিষ্টদের মতে, অর্থনীতি সচল রাখতে জ্বালানি তেল ও সার সরবরাহ নিশ্চিত রাখতে হবে। সম্প্রতি সার আমদানিতে একটু বিলম্ব হচ্ছে ডলার সংকটের কারণে। তবে সার আমদানির এলসি খোলার জটিলতা সহজ করতে সংশ্লিষ্ট ব্যাংকগুলোকে নির্দেশ দিয়েছে অর্থ বিভাগ। এছাড়া বিদেশে একাধিক সরবরাহকারী বকেয়া থাকার কারণে সার দিতে আগ্রহ প্রকাশ করছে না। ফলে আইটিএফসির কাছ থেকে সার আমদানির ঋণ পেলে ডলার সংকট দূর হবে। যে কারণে এটি প্রথম যে সার আমদানির জন্য বিদেশি ঋণের দিকে মনোযোগ দেওয়া হয়েছে।

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম