প্রধান উপদেষ্টার প্রতি সালাহউদ্দিন
মার্চেই জাতীয় নির্বাচনের রোডম্যাপ দিন

যুগান্তর প্রতিবেদন
প্রকাশ: ০২ মার্চ ২০২৫, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ

চলতি মাসেই (মার্চ) জাতীয় নির্বাচনের রোডম্যাপ ঘোষণা করতে প্রধান উপদেষ্টার প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ। তিনি বলেন, পরিষ্কার শুনে রাখুন এ মাসের (মার্চ) মধ্যেই প্রধান উপদেষ্টার পক্ষ থেকে জাতীয় নির্বাচনের রোডম্যাপ ঘোষণা করতে হবে। অন্যথায় সব গণতান্ত্রিক শক্তিকে নিয়ে পরবর্তী রাজনৈতিক কর্মসূচির বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। শনিবার রাজধানীর কাকরাইলে ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউটের মুক্তিযোদ্ধা মিলনায়তনে ‘ন্যাশনালিস্ট রিসার্চ ফাউন্ডেশন’র (এনআরএফ) উদ্যোগে এক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। ‘গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার সংগ্রামে দেশনেত্রী খালেদা জিয়া এবং তারেক রহমানের ত্যাগ ও নেতৃত্ব’ শীর্ষক আলোচনা সভা এবং সৈয়দ আবদাল আহমেদ সম্পাদিত ‘নন্দিত নেত্রী বেগম খালেদা জিয়া’ গ্রন্থের মোড়ক উন্মোচন উপলক্ষ্যে এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।
স্থায়ী কমিটির এই সদস্য প্রধান উপদেষ্টার উদ্দেশে বলেন, ‘আপনি বিদেশি গণমাধ্যমকে বলেছেন নির্বাচন ডিসেম্বরে হবে। তবে দেশের গণমাধ্যমে সরাসরি বলার সৎ সাহস দেখানো উচিত। ইনিয়ে-বিনিয়ে কথা বলা ঠিক নয়। বহুদলীয় গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় নতুন দলকে অভিনন্দন জানাই।
আমরা চাই, গণতন্ত্রের শত ফুল ফুটুক।
তরুণদের নতুন রাজনৈতিক দল জাতীয় নাগরিক পার্টির ‘সেকেন্ড রিপাবলিক এবং গণপরিষদ নির্বাচন’ নিয়ে প্রশ্ন তুলে সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘আমি গণমাধ্যমে দেখলাম জাতীয় নাগরিক পার্টির অন্যতম লক্ষ্য সেকেন্ড রিপাবলিক প্রতিষ্ঠায় গণপরিষদ নির্বাচনের মাধ্যমে নতুন সংবিধান প্রণয়ন, এটা তাদের অন্যতম লক্ষ্য বলেছে। আমি সমালোচনা করতে চাই না। প্রত্যেক রাজনৈতিক দলেরই তার নিজস্ব কর্মপন্থা থাকবে, আদর্শ থাকবে। গঠনতন্ত্র এবং ঘোষণাপত্রে এরকম ঘোষণা থাকে। কেউ সমাজতন্ত্র চায়, কেউ অন্য কিছু চায়, কেউ হয়তো ধর্মভিত্তিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করতে চায়। এরকম অনেক কিছু থাকে বিভিন্ন দলের রাজনৈতিক ঘোষণাপত্রে। আমি নতুন বন্ধুদের বলতে চাই, আমাদের বর্তমান রিপাবলিক কি অসুস্থ হয়ে গেছে? সেকেন্ড রিপাবলিক কখন হয়? রিপাবলিকের রিটারেল মানে কি? রিপাবলিক হচ্ছে যেখানে নির্বাচিত প্রতিনিধিরা রাষ্ট্র পরিচালনা করবে, তাদের একটা নমিনাল অথবা ইলেকটেড হেড দ্য স্টেট থাকবে। সেটা কি আমাদের নেই?’
গণপরিষদ দাবির পেছনে অন্য মতলব আছে উল্লেখ করে সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘গণপরিষদ কেন হবে? এর মধ্যে তো আরও একটি উদ্দেশ্য আছে? যারা গণপরিষদের বিষয় সামনে এনেছে, যারা সেকেন্ড রিপাবলিকের বিষয় সামনে এনেছে। হয় তারা বুঝে না অথবা বুঝে আমাদের এই রাষ্ট্র ব্যবস্থাকে আরও দীর্ঘায়িত অগণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় মধ্যে নিয়ে যাওয়ার ষড়যন্ত্র আছে।’
সালাহউদ্দিন বলেন, যারা জাতীয় নির্বাচনের আগে স্থানীয় নির্বাচনের কথা বলছেন, তাদের ভিন্ন উদ্দেশ্য রয়েছে। কারণ, তারা জাতীয় নির্বাচনে নিজেদের অবস্থান নিয়ে ভয় পান। বিএনপির এই নেতা প্রশ্ন রাখেন, চব্বিশের আন্দোলন তো স্থানীয় নির্বাচনের দাবিতে হয়নি। সেটি বিবেচনা করে সবার কথা বলা উচিত।
নতুন দল এনসিপির নবযাত্রাকে স্বাগতম জানিয়ে তিনি বলেন, তাদের (এনসিপি) নবযাত্রাকে স্বাগতম জানাই। কারণ বহুদলীয় গণতন্ত্রের প্রবক্তা তো আমাদেরই দলের প্রতিষ্ঠাতা মহান রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান। গণতন্ত্রের মাঠে শত ফুল ফুটবে, সেটাকে আমরা সব সময় স্বাগত জানাব।
গণপরিষদ প্রসঙ্গে সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘নতুন সংবিধানের জন্য আপনারা (এনসিপি) কথা বলছেন। নতুন সংবিধান যেটা হবে সেটা সংশোধনের মাধ্যমে ব্যাপক সংশোধনী প্রস্তাব আপনারা তো দিয়েছেন সংস্কার কমিশনে, আমরাও দিয়েছি। বর্তমান জনআকাঙ্ক্ষা এবং ৫ আগস্টের ছাত্র-জনতার গণ-অভ্যুত্থানের যে প্রত্যাশা ও গণআকাঙ্ক্ষা নিয়ে আমাদের সন্তানরা রক্ত দিয়েছে সেই আকাঙ্ক্ষাকে ঊর্ধ্বে তুলে ধরে তাদের চাহিদা ও প্রত্যাশাকে তুলে ধরে আমাদের সেই সংশোধনীগুলো আমরা সাজিয়েছি। নতুন স্বাধীনতা এবং নতুন বাংলাদেশের যে তরুণদের চাহিদা সেটাকে সামনে রেখে গুরুত্ব দিয়ে সাজিয়েছে। সেই সংবিধানের নাম যদি আপনারা নতুন সংবিধান দেন ঠিক আছে। কিন্তু গণপরিষদ কেন বললেন আমরা বুঝলাম না। আমাদের এখানে গণপরিষদ নির্বাচনের জন্য আমরা কি নতুনভাবে একটা স্বাধীন রাষ্ট্র পেয়েছি। রাষ্ট্র তো স্বাধীন আছে। আমরা একটি স্বাধীন সার্বভৌম গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র। আমাদের যেভাবেই হোক একটা সংবিধান আছে, যে সংবিধানটাকে এখনো পুরোপুরি ওন করি না বলে ব্যাপক সংস্কারের প্রয়োজন দেখা দিয়েছে।
যে সংবিধানোকে শেখ হাসিনা দলীয়করণ করে গণতন্ত্রের বিপক্ষে নিজেদের পক্ষে সাজিয়ে ছিলেন সেজন্য সেটার সংস্কার দরকার।
সালাহউদ্দিন বলেন, বিএনপির সংস্কারের সঙ্গে সরকারের সংস্কার কমিশনের প্রস্তাবের বেশি অমিল নেই। কিন্তু যেসব বিষয় অমিল আছে সেগুলো নিয়ে কথা বলব। কিন্তু তাতে নির্বাচনের রোডম্যাপ ঘোষণার জন্য অপেক্ষা করতে হবে, সেটা তো মনে হয় না। যদি আপনারা কাউকে সময় দিতে চান, কাউকে অরগানাইজ হতে দিতে চান বা অন্য কোনো উদ্দেশ্য থাকে সেটা অন্য কথা।
ফ্যাসিবাদবিরোধী ঐক্যকে টিকিয়ে রাখতে হবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, যারা সেকেন্ড রিপাবলিকের ঘোষণাপত্র তাদের দলীয় ঘোষণাপত্রে রেখেছেন সেটা ওখানে থাক। যারা গণপরিষদের মধ্যে দিয়ে নতুন সংবিধান প্রণয়ন করতে চান সেটা আপনারা যখন পারবেন করবেন। কিন্তু বাংলাদেশের মানুষের গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় উত্তরণে আর যাতে কোনো বিলম্ব না হয়, সেজন্য আমরা যাতে সমগ্র জাতিকে ঐক্যবদ্ধ রাখি এটাই আমাদের আহ্বান। যে কোনো মূল্যে রাজপথে গড়ে উঠা ফ্যাসিবাদবিরোধী জাতীয় ঐক্যকে আমাদের টিকিয়ে রাখতে হবে। ফ্যাসিবাদবিরোধী জাতীয় ঐক্যে যদি কোনো রকমের ফাটল সৃষ্টি হয়, তাহলে লাভবান হবে পতিত ফ্যাসিবাদ ও তার দোসররা।
বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী বলেন, ‘আজ দু-একজন বুদ্ধিজীবী বলেন, ক্ষমতায় থেকেই তো বিএনপির জন্ম হয়েছে। উনারা ভুলে গেছেন, উনারা রাজনীতিতে একটা নতুন ন্যারেটিভ তৈরি করছেন। কিন্তু জিয়া যে অন্য মাত্রার, অন্যকিছু, জিয়া একটি নতুন দর্শন দিয়েছেন। আজ অনেকে দল করছেন, শুক্রবার নতুন যারা দল করেছেন তাদের ওখানে উপস্থিত ছিলাম। তারা অনেক ভালো ভালো কথা বলেছেন রাষ্ট্র সম্পর্কে, কিন্তু পলিটিক্যাল ফিলোসফি কিন্তু আমি পাইনি।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য ও সাবেক রাষ্ট্রদূত অধ্যাপক ড. আনোয়ারউল্লাহ চৌধুরীর সভাপতিত্বে ও এনআরএফের সদস্য সচিব ফরিদ উদ্দিন আহমেদের সঞ্চালনায় সভায় আরও বক্তব্য দেন-বিশিষ্ট রসায়ন বিজ্ঞানী অধ্যাপক ড. তাজমেরী এসএ ইসলাম, বিএনপির যুগ্ম-মহাসচিব হাবিব-উন-নবী খান সোহেল, ছাত্রবিষয়ক সম্পাদক রকিবুল ইসলাম বকুল, বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের কাদের গণি চৌধুরী, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ বিজ্ঞানের অধ্যাপক ড. জামাল উদ্দিন রুনু, মানবাধিকারবিষয়ক সম্পাদক নাসির উদ্দিন অসিম, সহ-স্বেচ্ছাসেবকবিষয়ক সম্পাদক আব্দুল কাদির ভূঁইয়া জুয়েল, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের উপদেষ্টা ড. মাহাদী আমিন, স্বেচ্ছাসেবক দলের প্রয়াত সভাপতি শফিউল বারী বাবুর সহধর্মিণী বিথীকা বিনতে হোসাইন, এনআরএফের আহ্বায়ক ও ‘নন্দিত নেত্রী খালেদা জিয়া’ গ্রন্থের লেখক সাংবাদিক সৈয়দ আবদাল আহমেদ প্রমুখ।