ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচন: যশোর-১
বিএনপির চার নেতা মাঠে একক প্রার্থী জামায়াতের

ইন্দ জিৎ রায়, যশোর
প্রকাশ: ০১ মার্চ ২০২৫, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ

ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফশিল ঘোষণা হয়নি। কবে নির্বাচন সেটিও চূড়ান্ত নয়। তবুও নির্বাচনের হাওয়া বইছে যশোর-১ (শার্শা) আসনে। বিএনপি ও জামায়াতের সম্ভাব্য প্রার্থীদের তোড়জোড় শুরু হয়েছে। বিএনপির চার মনোনয়নপ্রত্যাশীর বিপরীতে মাঠে রয়েছে জামায়াতের একক প্রার্থী। বিএনপিতে দলীয় মনোনয়ন যুদ্ধে কেউ কাউকে ছাড় দিতে নারাজ। সম্ভাব্য প্রার্থীদের ঘিরে তৃণমূলে বিভেদ রয়েছে। আধিপত্য বিস্তার নিয়ে প্রকাশ্যে সহিংসতায় জড়িয়ে পড়ছে তৃণমূল। ফলে দলীয় কোন্দল বিএনপির জন্য বড় চ্যালেঞ্জ। বিএনপি-জামায়াত ছাড়া অন্য রাজনৈতিক দলের প্রার্থীরা মাঠে নেই। ৫ আগস্টের পর মাঠে সাংগঠনিক কার্যক্রম নেই আওয়ামী লীগ ও তাদের মিত্রদের।
জানা যায়, শার্শা উপজেলার ১১টি ইউনিয়ন ও ১টি পৌরসভা নিয়ে যশোর-১ আসন গঠিত। দেশের বৃহত্তম স্থলবন্দর বেনাপোল এই আসনে অবস্থিত। সব রাজনৈতিক দলের কাছে আসনটির গুরুত্ব বেশি। বিগত ১২টি সংসদ নির্বাচনে এই আসনে আওয়ামী লীগ সাতবার, বিএনপি তিনবার, স্বতন্ত্র ও জামায়াত একবার করে বিজয়ী হয়েছে। ১৯৭৩, ১৯৯১ ও ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগের তবিবর রহমান সরদার ও ২০০৮, ২০১৪, ২০১৮ ও ২০২৪ সালে আ. লীগের শেখ আফিল উদ্দিন এমপি নির্বাচিত হন। ১৯৭৯ সালে বিএনপির আলী তারেক, ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি বিএনপির মফিকুল হাসান তৃপ্তি ও ২০০১ সালে বিএনপির আলী কদর এমপি নির্বাচিত হন। ১৯৮৬ সালে জামায়াতের নূর হুসাইন ও ১৯৮৮ সালে স্বতন্ত্র কেএম নজরুল ইসলাম এমপি নির্বাচিত হন। জুলাই অভ্যুত্থানের পর বদলে গেছে রাজনীতির মাঠের হালচাল। আওয়ামী লীগ ও তাদের মিত্ররা ভোটের মাঠে নেই। ফলে ত্রিয়োদশ সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে মাঠ গোছাতে ব্যস্ত বিএনপি, জামায়াত ও সমমনা দলগুলো। দীর্ঘদিনের মিত্র বিএনপি-জামায়াতের মধ্যেই প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে। এমন সমীকরণ সামনে রেখেই প্রস্তুতি নিচ্ছে দল দুটি। এ আসনে বর্তমানে মোট ভোটার ২ লাখ ৯৪ হাজার ৬৯২ জন। পুরুষ ভোটার ১ লাখ ৪৭ হাজার ৫৭৬ জন। মহিলা ভোটার ১ লাখ ৪৭ হাজার ১১৪ জন। হিজড়া ভোটার ২ জন।
এই আসনে বিএনপির মনোনয়নপ্রত্যাশী চার নেতা মাঠে রয়েছেন। সাবেক সংসদ সদস্য ও বিএনপির কেন্দ্রীয় সাবেক দপ্তর সম্পাদক মফিকুল হাসান তৃপ্তি এবারও ধানের শীষের মনোনয়নপ্রত্যাশী। ২০১৮ সালের নির্বাচনে তিনি ধানের শীষের প্রার্থী ছিলেন। তার তিন প্রতিদ্বন্দ্বী হলেন শার্শা উপজেলা বিএনপির প্রধান উপদেষ্টা খায়রুজ্জামান মধু, উপজেলা বিএনপির সভাপতি আবুল হাসান জহির ও সাধারণ সম্পাদক নূরুজ্জামান লিটন। প্রত্যেকেই দলের বার্তা ও নিজের ইশতেহার, প্রতিশ্রুতি নিয়ে জনগণের দোরগোড়ায় যাচ্ছেন। সামাজিক, ধর্মীয় অনুষ্ঠানের পাশাপাশি সাংগঠনিক নানা কর্মসূচিতে অংশ নিয়ে নিজেদের অবস্থান তুলে ধরছেন।
দলের নেতাকর্মীরা বলছেন, আগামী নির্বাচনে বিএনপির চ্যালেঞ্জ দলীয় কোন্দল। বিএনপির রাজনীতিতে কোন্দল প্রকাশ্যে এসেছে ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর। আধিপত্য বিস্তার নিয়ে মফিকুল হাসান তৃপ্তি ও আবুল হাসান জহির সমর্থকদের মধ্যে একাধিকবার সংঘর্ষ হয়েছে। যার প্রভাব পড়ছে দলের তৃণমূলে।
এ বিষয়ে মফিকুল হাসান তৃপ্তি বলেন, জুলুম নির্যাতন ভোগ করে দীর্ঘদিন আন্দোলন সংগ্রামে মাঠে ছিলাম। নেতাকর্মীদের পাশে থেকেছি। ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর এলাকায় আরও সক্রিয় হয়েছি। কোথাও যাতে কোনো বিশৃঙ্খলা না হয়, সে ব্যাপারে জিরো টলারেন্সে আছি। পুজোর সময় প্রত্যেক মণ্ডপে গিয়েছি, সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সাহস দিয়েছি। চাঁদাবাজি, লুটপাট, দখলবাজির প্রশ্রয় দিইনি। দলের মনোনয়নপ্রত্যাশীদের প্রতিদ্বন্দ্বিতা আছে। তবে আদর্শিক বিরোধ নেই। বিএনপি যাকে মনোনয়ন দেবে, সবাই ঐক্যবদ্ধভাবেই কাজ করবে।
হাসান জহির বলেন, ছাত্রজীবন থেকেই জাতীয়তাবাদী আদর্শের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত আছি। দুইবার ইউপি চেয়ারম্যান হয়েছি। বিগত সাড়ে ১৫ বছর আন্দোলন, সংগ্রাম ও নির্যাতনে মাঠে ছিলাম। আমার নামে ৪৪টি নাশকতার মামলা চলমান রয়েছে। আমি কখনো মাঠ ছেড়ে যাইনি। নির্যাতিত নেতাকর্মীদের পাশে ছিলাম। তৃণমূলের নেতাকর্মীরা চায়, যে নেতাকে কাছে পাওয়া যায়, দল তাকেই মনোনয়ন দিক। সেই হিসাবে তৃণমূলের দাবি দলীয় মনোনয়ন যেন আমিই পাই।
খায়রুজ্জামান মধু বলেন, আমার বিরুদ্ধে কোনো সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের অভিযোগ নেই। তৃণমূলের নেতাকর্মীদের সঙ্গে গভীর সম্পর্ক রয়েছে। দল আমাকে মনোনয়ন দিলে কোনো বিভেদ থাকবে না। সবাই ঐক্যবদ্ধভাবে ধানের শীষকে বিজয়ী করবে।
এদিকে এই আসনে ১৯৮৬ সালে জামায়াতের প্রার্থী নূর হুসাইন সংসদ সদস্য হয়েছিলেন। ২০০৮ সালের নির্বাচনে চারদলীয় জোটের প্রার্থী ছিলেন জামায়াত নেতা মাওলানা আজিজুর রহমান। ওই নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী শেখ আফিল উদ্দিনের কাছে প্রায় ৫ হাজার ভোটের ব্যবধানে পরাজিত হয়েছিলেন। সেই মাওলানা আজিজুর রহমান আগামী সংসদ নির্বাচনে জামায়াতের প্রার্থী হিসাবে মাঠে আছেন। তিনি যুগান্তরকে বলেন, আওয়ামী লীগের শাসনের সাড়ে ১৫ বছরে আমরা প্রকাশ্যে সাংগঠনিক কার্যক্রম চালাতে পারিনি। কিন্তু পুলিশ ও আওয়ামী লীগের অগোচরে জুলুম-নির্যাতন সহ্য করে আমরা কার্যক্রম পরিচালনা করেছি। আগামী নির্বাচন সামনে রেখে আমরা মানুষের কাছে যাচ্ছি। জামায়াতের প্রতি সমর্থনের জন্য আহ্বান জানাচ্ছি। ভালো সাড়া পাচ্ছি। জামায়াতে ইসলামীর প্রতি অতীতের চেয়ে মানুষের ভালোবাসা বেড়েছে। মানুষ চায়, দুর্নীতিমুক্ত সমাজ। এজন্য জামায়াতের প্রতি মানুষের আগ্রহ বেড়েছে।