ফ্যাসিস্ট পতনের পর আশার আলো দেখতে পাচ্ছি: মির্জা ফখরুল

যুগান্তর প্রতিবেদন
প্রকাশ: ২৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ

ছবি: সংগৃহীত
ফ্যাসিস্ট সরকারের পতনের পর নতুন করে দেশ বিনির্মাণে আশার আলো দেখছেন বিএনপির মহাসিচব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেন, ‘আজকে আমরা সবাই অত্যন্ত আশাবাদী। ফ্যাসিবাদের পতন হয়েছে। আন্দোলনের মধ্য দিয়ে পালিয়েছে। দীর্ঘদিন ধরে দেশের রাজনৈতিক দলগুলো যে চেষ্টা করেছে, তারা যে ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে লড়াই-সংগ্রাম করেছে, সর্বশেষে ছাত্র-জনতার সমবেত প্রচেষ্টায় সেটা সম্ভব হয়েছে।’
শনিবার দুপুরে রাজধানীর জাতীয় প্রেস ক্লাবে সাংবাদিক মাহফুজ উল্লাহর মরণোত্তর একুশে পদক প্রাপ্তি উপলক্ষ্যে আয়োজিত আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে বিএনপির মহাসচিব এসব প্রত্যাশার কথা ব্যক্ত করেন।
তিনি বলেন, ‘আজ বাংলাদেশকে নতুনভাবে গড়ে তোলার ক্ষেত্রে আশার আলো সবাই দেখছে। তবে এজন্য সবার আন্তরিক হওয়া প্রয়োজন। সত্যিকার অর্থেই আমরা যেন, ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য একটি নিরাপদ বাসযোগ্য দেশ গড়তে পারি এবং সেই বাসযোগ্য দেশ তৈরির জন্য ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে পারি।’
একজন গুণী, মেধাবী ও দেশপ্রেমিক মানুষকে সরকার একুশে পদকের মাধ্যমে সম্মানিত করেছেন উল্লেখ করে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘২০১৪-এর নির্বাচনের পর, ২০১৮ নির্বাচনের আগের সময়ে মাহফুজ উল্লাহ অনেক কাজ করেছেন। তখন সব দলকে ঐক্যবদ্ধ করার জন্য মাহফুজ উল্লাহ, মাহবুব উল্লাহ ও জাফর উল্লাহর অসাধারণ প্রচেষ্টা ছিল। তারা ছিলেন বলেই ডান, বাম সবাই মিলে একটা জায়গায় আসা সম্ভব হয়। গণতন্ত্রে বিশ্বাসী একজন মানুষ ছিলেন, গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য কাজ করেছেন।’
মাহফুজ উল্লাহর প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করে বিএনপির মহাসচিব বলেন, ‘মাহফুজ উল্লাহর প্রতি আমাদের সম্মান দেখানো তখনই সফল হবে যদি তার আরাধ্য কাজটা শেষ করতে পারি। আমাদের অনেক বয়স হয়েছে। এখন এখানে সব নবীনরা আছেন, তরুণরা আছেন, তারা দেশ নিয়ে নতুন করে চিন্তা করছেন। সেই চিন্তার মধ্যে কিন্তু সব সময়ই একটা জিনিস সবার মনে রাখা দরকার, সেটা হলো-মাহফুজ উল্লাহর যেসব বিষয় অর্থাৎ তারও আগে এ দেশকে সুন্দর করার জন্য যাদের অবদান সেই অবদানগুলো যেন কখনো ভুলে না যাই।’
বিএনপির মহাসচিব বলেন, ‘আজকাল অনেক সাংবাদিক নিজের আখের গোছানোর জন্য দালালি করেন। কথাটা বলা ভালো হলো না, তারপরও বলতে হলো। বাড়িঘর, প্লট সব জোগাড় করেন। মাহফুজ উল্লাহর কথা স্মরণ করে মির্জা ফখরুল বলেন, তার কিছুই ছিল না। তার চিকিৎসার জন্য পরিবারকে বন্ধুদের কাছে হাত পাততে হয়েছে।’
প্রয়াত মাহফুজ উল্লাহকে একজন প্রগতিশীল, দেশপ্রেমিক ও মেধাবী সাংবাদিক হিসাবে অভিহিত করে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘তিনি কালোকে কালো, সাদাকে সাদা বলতে দ্বিধা করতেন না। বিএনপির মহাসচিব অত্যন্ত আবেগাপ্লুত কণ্ঠে বলেন, ‘মাহফুজ উল্লাহকে মিস করি, সত্যিই মিস করি। তাকে হারানোয় সত্যিকার অর্থে আমাদের বিরাট শূন্যতা সৃষ্টি করেছে। খুশি হয়েছি যে, তাকে অন্তত মরণোত্তর রিকগনেশন দেওয়া হয়েছে। এজন্য অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে ধন্যবাদ জানাই। আর আসুন আমরা সবাই মাহফুজ উল্লাহর আত্মার শান্তির জন্য দোয়া করি এবং এই দোয়া করি যেন আমাদের সাংবাদিকরা সবাই চেষ্টা করেন মাহফুজ উল্লাহর মতো হতে।’
প্রয়াত মাহফুজ উল্লাহর বড় ভাই অধ্যাপক মাহবুব উল্লাহর সভাপতিত্বে ও সাবাব রায়হান কবীরের সঞ্চালনায় সভায় আরও বক্তব্য দেন-বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী, ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ইসমাইল জবিহউল্লাহ, নজমুল হক নান্নু, রাষ্ট্রবিজ্ঞানী অধ্যাপক দিলারা চৌধুরী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক রাশেদ আল মাহমুদ তিতুমীর, প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম, বাসসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মাহবুব মোর্শেদ, ওয়াশিংটনের প্রেস মিনিস্টার গোলাম মোর্তোজা, জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক আমিরুল ইসলাম কাগজী ও ডা. বজলুল গণি ভূঁইয়া, প্রয়াত সাংবাদিক মাহফুজ উল্লাহর পুত্র মোস্তফা হাবিব প্রমুখ। অনুষ্ঠানে একুশে পদকপ্রাপ্ত আলোকচিত্র সাংবাদিক শহিদুল আলম ও শিল্পী রোকেয়া সুলতানা উপস্থিত ছিলেন।
অনুষ্ঠানে প্রয়াত মাহফুজ উল্লাহর বন্ধু বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু তার প্রতি স্মৃতিচারণ করে বলেন, মাহফুজ উল্লাহ চলে যাওয়ার পর বড় একা হয়ে গেছি। আমার বন্ধু একজন সাহসী যোদ্ধা ছিলেন।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির আরেক সদস্য আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, বিগত বছরগুলোতে যেভাবে ইতিহাস বিকৃতি হয়েছিল, মাহফুজ উল্লাহ তার লেখনীর মাধ্যমে সঠিক ইতিহাস জাতির সামনে তুলে ধরে গেছেন। বিগত ফ্যাসিস্ট সরকারের আমলের নানা অপকর্ম তার সাহসী সাংবাদিকতার মাধ্যমে প্রকাশ করেছেন।
একই অনুষ্ঠানে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম বলেন, একজন মেরুদণ্ডওয়ালা সাংবাদিক ছিলেন মাহফুজ উল্লাহ। তার মতো একজন ব্যক্তি হয়ে ওঠা জরুরি। তিনি আরও বলেন, জেলে থাকার সময় খালেদা জিয়ার জীবনী নিয়ে লেখায় ফুটে ওঠে বিএনপি নেত্রী কীভাবে আবার সাহস ও শক্তি নিয়ে ফিরে আসবেন। যা তিনি লিখেছিলেন তৎকালীন সরকারের রক্তচক্ষুর সামনেই। নতুন প্রজন্মের সাংবাদিকদের জন্য তিনি অনুপ্রেরণা হয়ে থাকবেন।
জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের কৃতিত্ব সবার : এদিকে একাত্তর সালের মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে দেশ স্বাধীন করা এবং ২০২৪ সালের জুলাই-আগস্টের গণ-অভ্যুত্থানে হাসিনা সরকারের পতনের ইতিহাস দৃঢ়তা, সততা ও সত্যের সঙ্গে লেখার আহ্বান জানিয়েছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। শনিবার নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে এক স্ট্যাটাসে সংশ্লিষ্ট সবার উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘হাসিনার পতন একদিনে ঘটেনি, এর পেছনে অনেক বছরের ত্যাগ ও সংগ্রাম আছে। হাজার হাজার মানুষ মারা গেছেন, আহত হয়েছেন, অপহৃত হয়েছেন। এর ফলস্বরূপ ২০২৪ সালের ৫ আগস্টে হাসিনা পলিয়ে গিয়েছিলেন। কৃতিত্ব সবার-ছাত্র, সাধারণ মানুষ, ডাক্তার, রিকশাচালক, বিক্রেতা, সাংবাদিক, ব্যবসায়ী, শিক্ষক, পেশাদার, প্রবাসী, আমাদের বিদেশি বন্ধু, শিশু, প্রতিরক্ষা কর্মকর্তা এবং অবশ্যই রাজনীতিবিদ।’
স্ট্যাটাসে মির্জা ফখরুল উল্লেখ করেন, ‘১৯৭১ সালে স্বাধীনতাও এক দিনে ঘটেনি। মিলিয়ন মিলিয়ন মানুষ মারা গিয়েছিলেন অথবা আহত হয়েছিলেন, এবং অসংখ্য মানুষ আমাদের স্বাধীনতার জন্য লড়াই করেছেন। তাই, আমরা এটি অর্জন করেছি। কৃতিত্ব সবার।’
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আমরা বিএনপির নেতাকর্মীরা সব সময় খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের নেতৃত্বে বাংলাদেশের জনগণের সঙ্গে ছিলাম এবং থাকব। চলুন, আমাদের এই ইতিহাসটি দৃঢ়তা, সততা এবং সত্যের সঙ্গে লিখি। এখন দেশ পুনর্গঠনের দিকে আমরা মনোনিবেশ করি। সবার আগে বাংলাদেশ। বাংলাদেশ জিন্দাবাদ।