জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে মানবতাবিরোধী অপরাধ
মার্চের মধ্যেই হাসিনার বিরুদ্ধে প্রতিবেদন

যুগান্তর প্রতিবেদন
প্রকাশ: ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
-67b5027b9bb7f.jpg)
ছবি: সংগৃহীত
জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় শেখ হাসিনাসহ অন্য আসামিদের বিরুদ্ধে প্রতিবেদন দাখিলের সময় দুই মাস বাড়িয়ে ২০ এপ্রিল পর্যন্ত নির্ধারণ করেছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুনাল। যদিও ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম মার্চের মধ্যেই প্রতিবেদন দাখিলের আশা প্রকাশ করেছেন। মঙ্গলবার দুটি মামলার শুনানি শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এ তথ্য জানান। তবে এটা কোনো ফাইনাল টাইমলাইন নয় বলেও জানান তিনি। আদালত সূত্র জানায়, মানবতাবিরোধী অপরাধের এক মামলায় শেখ হাসিনা এবং আরেক মামলায় সাবেক সড়ক পরিবহণ ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরসহ বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের ৪৫ জন মন্ত্রী, উপদেষ্টা, সংসদ সদস্য, আমলার বিষয়েও তদন্ত প্রতিবেদনের সময় বাড়িয়ে ২০ এপ্রিল করা হয়েছে। একই সঙ্গে ঢাকা-৭ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য সোলাইমান সেলিমকে ট্রাইব্যুনালে হাজির করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তিনি সাবেক সংসদ সদস্য হাজি মোহাম্মদ সেলিমের ছেলে। সোলাইমান সেলিম এখন অন্য মামলায় গ্রেফতার আছেন। তিনিও ৪৫ আসামির একজন।
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বে তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল মঙ্গলবার এই আদেশ দেন। ট্রাইব্যুনালের অন্য দুই সদস্য হলেন বিচারপতি মো. শফিউল আলম মাহমুদ এবং অবসরপ্রাপ্ত জেলা ও দায়রা জজ মো. মোহিতুল হক এনাম চৌধুরী।
মঙ্গলবার ট্রাইব্যুনালের কাছে সময় বাড়ানোর জন্য আবেদন করেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম। তিনি বলেন, তদন্ত প্রতিবেদনের কাজ শেষ পর্যায়ে আছে। দুই মাস সময় চাইলেও তার আগেই প্রতিবেদন দাখিল করতে পারবেন বলে আশা করছেন তিনি। ট্রাইব্যুনাল বলেন, সময় লাগলে সময় নেন। তবে অপূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন দাখিল করবেন না। পরে দুই মাস সময় মঞ্জুর করেন ট্রাইব্যুনাল।
শেখ হাসিনা ও ওবায়দুল কাদেরসহ ৪৬ জনের বিষয়ে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের সময় এ নিয়ে তিন দফা বাড়ানো হলো। এর আগে প্রথম দফায় এক মাস ও দ্বিতীয় দফায় দুই মাস সময় বাড়ানো হয়। ট্রাইব্যুনালে শুনানির সময় মানবতাবিরোধী অপরাধের আরেক মামলার ১৬ জন আসামিকে হাজির করা হয়। তারা হলেন সাবেক মন্ত্রী আনিসুল হক, সাবেক প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান ও তৌফিক-ই-ইলাহী চৌধুরী, বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের সভাপতি হাসানুল হক ইনু, সাবেক মন্ত্রী আমির হোসেন আমু, মো. আব্দুর রাজ্জাক, কামরুল ইসলাম, মুহাম্মদ ফারুক খান, দীপু মনি, গোলাম দস্তগীর গাজী, শাজাহান খান, সাবেক প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ, কামাল আহমেদ মজুমদার, সাবেক সচিব মো. জাহাংগীর আলম ও অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি এএইচএম শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক।
মাই লর্ড কথাটিতে এক ধরনের ঔপনিবেশিকতার ছোঁয়া আছে : আদালতে সব আসামির পক্ষে ওকালতনামা জমা দেন সুপ্রিমকোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী জেড আই খান পান্না। আদালতকে তিনি বলেন, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আমার মৃত্যুর ভুল খবর ছড়িয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘আমি ট্রাইব্যুনালের প্রথমদিনই বলেছি, ধর্মীয় বিশ্বাসের দৃষ্টিকোণ থেকে লর্ড (প্রভু) একজনই। সেদিক থেকে আমাদের সম্বোধন করতে মাই লর্ড বা ইয়োর লর্ডশিপসই বলতে হবে এমনটি নয়। তাছাড়া কথাটিতে এক ধরনের ঔপনিবেশিকতার ছোঁয়া আছে, কারণ এ সম্বোধনটি সে সময়ে প্রবর্তিত হয়েছিল। আমি মনে করি এর একটি বিকল্প থাকা উচিত। বাংলা ভাষা তো এত দুর্বল নয়, বাংলা ভাষায়ও অন্যকিছু বলা যেতে পারে।’ এরপর বিকল্প হিসাবে তিনি ‘ইয়োর অনার’, ‘ইয়োর ম্যাজেস্টি’ অথবা ‘ইয়োর হাইনেস’ বলার আহ্বান জানান। শুনানির এক পর্যায়ে তিনি বিচারপতিদের ‘মাই লর্ড’ সম্বোধন করতে আপত্তি জানিয়ে বলেন, ‘আমি জানি আমার লর্ড বা প্রভু একজনই। কিন্তু দুঃখের বিষয় আমাকে এই সম্বোধন করতে আপনারা বাধ্য করছেন। বাধ্য যখন করেছেন তখন আর কি, ‘মাই লর্ড’ বলতেই হবে।’ তার এ বক্তব্যের জবাবে ট্রাইব্যুনাল চেয়ারম্যান বিচারপতি গোলাম মর্তূজা মজুমদার তাকে ভিন্ন ও বিকল্প সম্বোধন করতে বলেন।
মার্চের মধ্যে শেখ হাসিনার বিষয়ে গণহত্যার প্রতিবেদন : দুটি মামলার শুনানি শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম। তিনি বলেন, রিপোর্টের বর্তমান স্ট্যাটাস যে কোনো পর্যায়ে তদন্তটা আছে, সেটা আদালতে বলেছি। আগামী মাসের মধ্যে, বিশেষ করে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে যেটা, সেটার তদন্ত রিপোর্ট দাখিল করা সম্ভব হবে বলে আমরা আশা করছি। এটা কোনো ফাইনাল টাইমলাইন নয়।
চিফ প্রসিকিউটর আরও বলেন, আমাদের তদন্ত রিপোর্টের মধ্যে জাতিসংঘের রিপোর্ট ন্যাচারালি অন্তর্ভুক্ত হবে বলে আশা করছি। জাতিসংঘের প্রতিবেদনের উপাদানগুলো চেয়েছি, অনুরোধ করেছি। সেগুলো সংগ্রহের একটা প্রক্রিয়ার মধ্যে আছি। যতটুকু পাওয়া যাবে, সেটাকে তদন্ত প্রতিবেদনে সংযুক্ত করব। এটা মামলা প্রমাণের জন্য বড় এভিডেন্স (প্রমাণ) হিসাবে কাজ করবে। এজন্য দুই মাসের সময় চেয়েছিলাম। আদালত ২০ এপ্রিল পরবর্তী তারিখ রেখেছেন। আমরা আশা করছি এর আগে তদন্ত রিপোর্ট দাখিল করতে পারব। আমরা তদন্তের একটা চূড়ান্ত পর্যায়ে আছি। আশা করছি খুব সহসাই এ রিপোর্টগুলো আমাদের হাতে চলে আসবে।
ট্রাইব্যুনাল থেকে বেরিয়ে পলক বলেন, ‘লড়াই করে বাঁচতে হবে’ : সকাল সোয়া ১০টার দিকে প্রিজনভ্যানে করে আসামিদের ট্রাইব্যুনালে আনা হয়। পরে দুপুরে ট্রাইব্যুনাল থেকে বেরিয়ে যাওয়ার সময় উপস্থিত সাংবাদিকরা তাদের কুশল জানতে চান। কেউ কেউ উত্তর দেন, কেউ কোনো কথা না বলে প্রিজনভ্যানের দিকে চলে যান। এ সময় সাবেক প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক বলেন, ‘লড়াই করে বাঁচতে হবে, বঙ্গবন্ধু শিখিয়ে গেছেন।’ প্রিজনভ্যানে উঠানোর পরও সাংবাদিকদের উদ্দেশে কথা বলার চেষ্টা করেন পলক। এ সময় আবারও তাকে ‘লড়াই করে বাঁচতে হবে’ বলতেও শোনা যায়।