সংস্কার ছাড়া নির্বাচন গ্রহণযোগ্য হবে না: বদিউল আলম

যুগান্তর প্রতিবেদন
প্রকাশ: ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ

জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের অন্যতম সদস্য ও নির্বাচনব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের প্রধান ড. বদিউল আলম মজুমদার বলেছেন, আমাদের ধর্মীয় স্বাধীনতার পাশাপাশি নাগরিক, রাজনৈতিক ও ভোটের অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে হবে। এজন্য প্রয়োজনীয় সংস্কারগুলো করতে হবে। দুর্বৃত্তায়নের কারণে রাষ্ট্রীয় ও সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানগুলো ভঙ্গুর হয়ে গেছে। এজন্য সংস্কার ছাড়া নির্বাচন গ্রহণযোগ্য হবে না।
সোমবার রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে বেসরকারি সংস্থা দ্য হাঙ্গার প্রজেক্ট-এর আয়োজনে এবং ইউকেএইডের সহযোগিতায় সম্প্রীতি সংলাপে তিনি এসব কথা বলেন।
বদিউল আলম মজুমদার বলেন, আমরা কতগুলো সংস্কার প্রস্তাব উত্থাপন করেছি, এগুলো বাস্তবায়িত হতে হবে। আমাদের নির্বাচনের অঙ্গনটা কিন্তু ভঙ্গুর। নির্বাচনি ব্যবস্থা ভেঙেই গেছে। কারণ, আমাদের সব জায়গায় দুর্বৃত্তায়ন। নির্বাচনি অঙ্গন ও রাজনৈতিক অঙ্গনকে পরিচ্ছন্ন করতে হবে। টাকার খেলা বন্ধ করতে হবে। রাষ্ট্রীয় ও সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান আছে, এগুলোকে কার্যকর করতে হবে, যাতে আমাদের সবার অধিকার প্রতিষ্ঠিত হয়। শুধু ধর্মীয় অধিকারই নয়, নাগরিক অধিকারগুলোও প্রতিষ্ঠিত করতে হতো। আমাদের রাজনৈতিক ও ভোটের অধিকার প্রতিষ্ঠিত হতে হবে।
নির্বাচনব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের প্রধান বলেন, এখন একটা আলাপ-আলোচনা হচ্ছে-নির্বাচন নাকি সংস্কার। এটার মধ্যে আমি তো কোনো দ্বন্দ্ব দেখি না। কোনোরকম একটার বিপরীতে আরেকটা নয়। দুটোই দরকার। আমাদের নির্বাচনও হতে হবে, সংস্কারও হতে হবে। নির্বাচনটা সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য হতে হবে, সবার ভোটাধিকার নিশ্চিত করতে হবে এবং সেজন্যই সংস্কার দরকার।
অনুষ্ঠানে আরও বক্তৃতা করেন দ্য হাঙ্গার প্রজেক্ট-এর ইন্টেরিম কান্ট্রি ডিরেক্টর প্রশান্ত ত্রিপুরা, ইসলামিক ফাউন্ডেশনের পরিচালক মুহাম্মদ রফিক-উল ইসলাম, ঢাকাস্থ ব্রিটিশ হাইকমিশনের কমনওয়েলথ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট অফিসের (এফসিডিও) সোশ্যাল ডেভেলেপমেন্ট অ্যাডভাইজার ড. চার্লস রিড, চার্চ অব ইংল্যান্ড-এর ডিরেক্টর, অপারেশন্স, এজেন্ট অব চেঞ্জ প্রজেক্ট এবং পলিসি অ্যাডভাইজার ড. চার্লস রিড, ব্রিটিশ হাইকমিশনের কমনওয়েলথ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট অফিস (এফসিডিও) সোশ্যাল ডেভেলপমেন্ট অ্যাডভাইজার ফরেন তাহেরা জাবীন, এজেন্টস অব চেঞ্জ : এ বাংলাদেশ ফ্রিডম অব রিলিজিওন অর বিলিফ লিডারশিপ ইনিশিয়েটিভ প্রোগ্রামের অ্যাডভাইজার ড. শাহনাজ করিম প্রমুখ।
ড. চার্লস রিড বলেন, বাংলাদেশে সম্প্রীতি প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে একটি ন্যাশনাল ফোরাম গঠিত হয়েছে, যেখানে আমাদের প্রকল্পের আটটি অঞ্চল থেকে তরুণদের যুক্ত করা হয়েছে। প্রশান্ত ত্রিপুরা বলেন, আমি মনে করি, সম্প্রীতির প্রবণতা সহজাত, যা আমরা শিশুদের মধ্যে বেশি দেখতে পাই। কিন্তু আমরা তা মাঝেমধ্যে ভুলে যাই।
মুহাম্মদ রফিক-উল ইসলাম বলেন, প্রত্যেক ধর্মের মূল বাণী হলো সম্প্রীতি, শান্তি ও ভালোবাসা।
বাংলাদেশ বুড্ডিস্ট ফেডারেশনের রিলিজিয়াস সেক্রেটারি স্বরূপানন্দ ভিক্ষু বলেন, পারিবারিকভাবে বিশেষ করে শিশু-কিশোর মনে সম্প্রীতির বার্তা ছড়িয়ে দিতে হবে।
জেসাস কল চার্চ অব বাংলাদেশের চেয়ারম্যান রেভারেন্ড ডেভিড বৈদ্য বলেন, আমাদের মধ্যে ধর্ম পালনে ভিন্নতা থাকতে পারে; কিন্তু আমাদের মধ্যে লিঙ্গ, জাতি ও বর্ণভেদে কোনো পার্থক্য থাকা উচিত নয়।
বাংলাদেশ জাতীয় হিন্দু সমাজ সংস্কার সমিতির যুগ্মসম্পাদক বিমল চন্দ্র চক্রবর্ত্তী বলেন, আমরা বাংলাদেশিরা একই পরিবারের সন্তান। তাই আমাদের মধ্যে কোনো বিভেদ থাকা উচিত নয়।
আহমদিয়া মুসলিম জামাতের এক্সটারনাল অ্যাফেয়ার্সের ডিরেক্টর আহমেদ তাবসির চৌধুরী বলেন, সাম্প্রতিককালে অসহিষ্ণুতার কারণে আমাদের মধ্যে বিভেদ বাড়ছে। আমরা মনে করি, সংলাপ হতে পারে এই বিদ্বেষ কমানোর একটি বড় উপায়।
অনুষ্ঠানে সম্প্রীতি প্রতিষ্ঠায় তরুণদের সফলতার গল্প নিয়ে প্রকাশিত ‘ঐকতান’ নামের একটি প্রকাশনার মোড়ক উন্মোচন করা হয়। এছাড়া আটটি জেলা থেকে আগত বিভিন্ন ধর্মীয় নেতৃত্ব, নাগরিক সমাজের প্রতিনিধি এবং তরুণদের প্রতিনিধিরা আলোচনায় অংশ নেন।