ডিসি সম্মেলনে অর্থ উপদেষ্টা
গ্রামের ভালো আয়ের ব্যক্তিদের কর দিতে হবে

বিশেষ প্রতিনিধি
প্রকাশ: ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ

মার্চ থেকে পিছিয়ে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) ঋণের চতুর্থ কিস্তি ছাড়ের প্রস্তাব আগামী জুনে সংস্থাটির নির্বাহী পর্ষদে উপত্থাপন হতে পারে। একই সময়ে পঞ্চম কিস্তির প্রস্তাবও আলোচনা হবে। এদিকে গ্রামের চিকিৎসক, ব্যবসায়ী ও আইনজীবীকে কর এর আওতায় আনা হবে। সেখানে অনেকে ভালো আয় করার পরও সরকারকে কর দিচ্ছে না। গ্রামে কর্মসংস্থান বাড়ানোর জন্য জেলা প্রশাসকদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
সোমবার জেলা প্রশাসকদের (ডিসি) সম্মেলন শেষে সাংবাদিকদের এ কথা জানান অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ। তিনি বলেন, তাদের কর এর আওতায় আনতে যোগ্যদের তালিকা তৈরির নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এছাড়া গ্রামে কর্মসংস্থান সৃষ্টি ও এসএমই খাতে ঋণ পেতে সমস্যা দূর করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে সম্মেলনের দ্বিতীয় দিন অন্য মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে অর্থ মন্ত্রণালয় সংক্রান্ত অধিবেশন ছিল। সম্মেলন থেকে বেরিয়ে সাংবাদিকদের উদ্দেশ্যে অর্থ উপদেষ্টা বলেন, অনেক শর্ত মেনে এবং নিজস্ব তাগিদে আইএমএফ থেকে কিস্তি আনতে হয়। আপনারা ভাবেন ভিক্ষা করে নিয়ে আসি। তবে কিছু শর্ত আছে যেগুলো বললেই আমরা পালন করব তা নয়। এখন দেশের সামষ্টিক অর্থনীতি, চলতি ও আর্থিক হিসাব এবং প্রবাসী আয় ভালো আছে। ফলে ঋণ নিয়ে মরিয়া হয়ে উঠছি না। কিস্তি ছাড়ের প্রস্তাব প্রসঙ্গে তিনি বলেন, মার্চে না, আমরা বলছি একটু অপেক্ষা করব। আগামী জুনে চতুর্থ ও পঞ্চম-এই দুই কিস্তির প্রস্তাব একসঙ্গে উঠবে আইএমএফ’র নির্বাহী পর্ষদে। প্রসঙ্গত, ঋণের চতুর্থ কিস্তি ছাড়ের প্রস্তাব এর আগে গত ৫ ফেব্রুয়ারি সভায় উপস্থাপনের কথা থাকলেও পিছিয়ে ১২ মার্চ করা হয়। এখন আরও পিছিয়ে জুনে গেছে।
এদিকে জেলা, উপজেলা ও গ্রামাঞ্চলের ব্যবসায়ী, চিকিৎসক, আইনজীবীসহ সরকারি-বেসরকারি কর্মজীবী যারা কর দেওয়ার যোগ্য তাদের যুক্ত করতে ডিসিদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এসব পেশার অনেকেই আছেন যারা কর দেওয়ার মতো আয় করছেন, কিন্তু কর দিচ্ছেন না। এ জন্য তাদের তালিকা করতে জেলা প্রশাসকদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
উপদেষ্টা বলেন, ব্যবসায়ীরা প্রচুর বিক্রি করেন, চিকিৎসক আইনজীবীরা যে ফি নেন, তাদের রশিদ বা ডিজিটাল পেমেন্ট পদ্ধতির আওতায় আনতে হবে। এখন তারা সরাসরি নগদ টাকায় লেনদেন করছেন। যে কারণে তাদের করের আওতায় আনা যায় না। চিকিৎসকরা যে ফি নিচ্ছে এর রশিদ কোনো মানুষ নেয় না। এই ফি যদি ডিজিটাল মাধ্যমে দেওয়া হয়, তাহলে কিন্তু তার একটা রেকর্ড থাকে। বিদেশে কিন্তু এগুলো সব রেকর্ডেড। এখানে তাদের (চিকিৎসক) যে অ্যাটেনডেন্ট থাকেন, ফি কালেকশন করেন, তাদের রশিদ দিয়ে ফি নেওয়ার ব্যবস্থা করা দরকার। আইনজীবী বা অন্যান্য পেশার জন্যও এমন ব্যবস্থা করতে হবে।
এছাড়া এ সম্মেলনে প্রত্যন্ত অঞ্চলের কর্মসংস্থান বাড়াতে ডিসিদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। আমাদের গ্রামে কর্মসংস্থান বাড়াতে হবে।
সেখানে বাড়ানো সহজ। চীনে গ্রামীণ শিল্পের সঙ্গে গভীর যোগাযোগ। চীনের প্রত্যন্ত একটি গ্রামে তৈরি হওয়া পণ্য আমেরিকার ওয়ালমার্টেও পাবেন। অথচ বাংলাদেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলের এই জিনিসগুলো যোগাযোগের অভাবে উঠে আসে না। যোগাযোগ না থাকলে ব্যালেন্স ডেভেলপমেন্টটা করা সম্ভব হবে না।
উপদেষ্টা আরও বলেন, ডিসিরা যে দুর্গম এলাকা রয়েছেন, সেগুলোতে যোগাযোগ ব্যবস্থা বাড়ানো এবং শিক্ষার্থীদের যাতায়াতের ব্যবস্থার কথা বলেছেন। তারা বলেছেন, এসএমই খাতে ছোট উদ্যোক্তারা ঋণ পান না। সেগুলো আমরা ব্যবস্থা নেব।
উপদেষ্টা আরও বলেন, সরকারের যে কোনো সিদ্ধান্ত আমরা বাস্তবায়ন করি মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের দিয়ে। মাঠ পর্যায়ের অফিসাররা যদি দক্ষ এবং সেবক হন তাহলে জনগণ যে সেবাটা পান সেটা কার্যকর হয়। আমরা সরকারের সঙ্গে ডিসিদের যোগাযোগ বাড়ানোর কথা বলেছি।