বিশ্ব ইজতেমা
আখেরি মোনাজাতে ঐক্য নিরাপত্তা ও মুক্তি কামনা

টঙ্গী পূর্ব ও শিল্পাঞ্চল (গাজীপুর) প্রতিনিধি
প্রকাশ: ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ

নিজেকে আল্লাহর কাছে আত্মসমর্পণ, বিশ্ব মুসলমানের শান্তি, ঐক্য, নিরাপত্তা, মুক্তি এবং কল্যাণ কামনায় অশ্রুসিক্ত নয়নে তৃতীয় আখেরি মোনাজাতের মধ্য দিয়ে দিল্লি নিজামউদ্দিন মারকাজের তত্ত্বাবধানে রোববার শেষ হলো বিশ্ব ইজতেমার ৫৮তম আসর। ৩০ মিনিটের আখেরি মোনাজাত পরিচালনা করেন বিশ্ব তাবলিগ জামায়াতের দিল্লি মারকাজের শীর্ষ মুরুব্বি মাওলানা সাদের বড় ছেলে ইউসুফ বিন সাদ। সকাল থেকে দিকনির্দেশনামূলক বয়ানের পর লাখো মানুষের প্রতীক্ষার অবসান ঘটে বেলা ১২টা ৩৭ মিনিটে। যে যেখানে ছিলেন সেখানে দাঁড়িয়ে কিংবা বসে হাত তোলেন আল্লাহর দরবারে। আখেরি মোনাজাত ঘিরে সব পথের মোহনা হয়ে ওঠে টঙ্গীর তুরাগ তীরের ইজতেমা ময়দান। ১২টা ৩৭ মিনিট থেকে ১টা ৭ মিনিট পর্যন্ত ৩০ মিনিটের মোনাজাতে মূলত প্রথম পবিত্র কুরআনে বর্ণিত দোয়ার আয়াতগুলো উচ্চারণ মাধ্যমে ও পরে উর্দু ভাষায় দোয়া করা হয়। হেদায়েতি বয়ান ও সমাপনী : বাদ ফজর উর্দুতে বয়ান করেন ভারতের মোরসালিন। এরপর আখেরি মোনাজাতের আগে মাওলানা ইউসুফ বিন সাদ সমাপনী ও হেদায়েতি বয়ান করেন। তার বয়ান বাংলায় ভাষান্তর করেন মাওলানা মনির বিন ইউসুফ। এর পরই আখেরি মোনাজাত পরিচালনা করেন মাওলানা ইউসুফ বিন সাদ।
বিদেশি মেহমান : ইজতেমার দ্বিতীয় পর্বের মিডিয়া সমন্বয়কারী মোহাম্মদ আবু সায়েম জানান, নিজামুদ্দিন মারকাজের এবারের বিশ্ব ইজতেমায় বিশ্বের ৬৪টি দেশের এক হাজার ৫৮৪ জন বিদেশি মেহমান আখেরি মোনাজাতে অংশ নেন।
মুসল্লিদের ঢল : আখেরি মোনাজাতে শরিক হতে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে ধর্মপ্রাণ মুসল্লিরা টঙ্গী অভিমুখে ছুটতে থাকেন শনিবার থেকে। বিশ্ব ইজতেমায় অংশগ্রহণকারীরা ছাড়াও কেবল আখেরি মোনাজাতে শরিক হতে দূর-দূরান্ত থেকে টঙ্গীতে পৌঁছান।
নারীদের অংশগ্রহণ : আখেরি মোনাজাতে আগের তুলনায় নারীদের অংশ গ্রহণ বেড়েছে। পুরুষদের পাশাপাশি বিভিন্ন বয়সি নারী হেঁটে টঙ্গী পৌঁছে মোনাজাতে অংশ নিয়েছেন।
১৪ মুসল্লির মৃত্যু : বিশ্ব ইজতেমায় দিতীয় পর্বে তিন মুসল্লি মারা যান। এরা হলেন-শরিয়তপুরের আব্দুল আজিজ শেখ, বগুড়ার নাজমুল হোসেন ও খুলনার দিদার তরফদার। এছাড়া ইজতেমার প্রথম পর্বের দুই ধাপে ১১ মুসল্লি মারা গেছেন।
যুবলীগ নেতা গ্রেফতার : ইজতেমায় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে হামলার হুমকি দেওয়ার অভিযোগে যুবলীগ নেতা রনি সরকারকে গাজীপুরের কাপাসিয়া থেকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। তিনি গাজীপুরের জয়দেবপুর থানার বাড়িয়া ইউনিয়নের আতুরী গ্রামের গিয়াস উদ্দিন সরকারের ছেলে। তিনি বাড়িয়া ইউনিয়ন যুবলীগের সাবেক সহসভাপতি।
দ্বিতীয় পর্বে দেড় সহস্রাধিক জামাত : বিভিন্ন খিত্তা থেকে বিভিন্ন মেয়াদে চিল্লায় অংশ গ্রহণেচ্ছু মুসল্লিদের জামাতবন্দি করে তাশকিলের কামরায় জায়গা করে দেওয়া হচ্ছে। আখেরি মোনাজাত শেষে এসব মুসল্লি তাবলিগ মুরুব্বিদের দিকনির্দেশনা অনুযায়ী জামাতবন্দি হয়ে দ্বীনের দাওয়াতি মেহনতে দেশ-বিদেশে ছড়িয়ে পড়ছেন। ইজতেমা ময়দান থেকে দেড় সহস্রাধিক জামাত ৪০ দিন, তিন মাস, ছয় মাস, এক বছর ও আজীবনের চিল্লায় বেরিয়ে পড়ছেন।
নতুন ইতিহাস সৃষ্টি করল ৫৮তম বিশ্ব ইজতেমা : ইজতেমার ইতিহাসে এবারের ৫৮তম ইজতেমা একাধিক কারণে নতুন ইতিহাস সৃষ্টি করেছে। ইজতেমা শুরুর আগেই চারজন মুসল্লি নিহত হয়েছেন। এ ঘটনায় ইজতেমায় তিনটি আখেরি মোনাজাতের জন্ম হলো। এবারই প্রথম শবেবরাত পড়ে গেল ইজতেমায়। শবেবরাতের ফলে অনেক মুসল্লি এক সঙ্গে ইজতেমা ময়দানে দুদিন রোজা রেখে ও ইফতার করে নতুন ইতিহাসের জন্ম দিলেন।
তিনটি আখেরি মোনাজাত : পথম পর্বে ৩১ জানুয়ারি থেকে ৫ ফেব্রুয়ারি দুই ধাপে দুটি আখেরি মোনাজাতের মাধ্যমে মাওলানা শূরায়ি নেজাম বা জুবায়েরপন্থিদের ইজতেমা শেষ হয়। এরপর শুক্রবার বিশ্ব ইজতেমার দ্বিতীয় পর্বে মাওলানা সাদ অনুসারী মুসল্লিরা অংশ নেন। রোববার আখেরি মোনাজাতের মধ্য দিয়ে শেষ হয় দ্বিতীয় পর্ব তথা বিশ্ব ইজতেমার ৫৮তম আসর। এ বছর তিনটি আখেরি মোনাজাত হলো।
মুসল্লিদের ঘরে ফেরা : বেলা ১টায় আখেরি মোনজাত চলাকালে জোহরের আজান হয়। মোনাজাত শেষে মুসল্লিরা জোহরের নামাজ ময়দানে আদায় করে একযোগে বাড়ি ফেরা শুরু করেন। ফলে টঙ্গীর আশপাশের সড়ক-মহাসড়কগুলোতে সৃষ্টি হয় যানজটের। তবে তিন দিনের জামাত ও চিল্লায় আসা মুসল্লিরা এখনো ময়দানে আছেন। আজ ও কালকের মধ্যে তারা ময়দান ছাড়বেন।