সোনারগাঁয়ে সারজিস আলম
ক্ষমতার অপব্যবহারের চেষ্টা করলে আরেকটি গণ-অভ্যুত্থান হবে
দেশে চাঁদাবাজি ছিল, হচ্ছে এবং সিন্ডিকেট ছিল, আছে

যুগান্তর প্রতিবেদন, সোনারগাঁ (নারায়ণগঞ্জ)
প্রকাশ: ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ

জাতীয় নাগরিক কমিটির মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম বলেছেন, আগামী নির্বাচন সামনে রেখে কেউ ক্ষমতার অপব্যবহার করার চেষ্টা করলে আরেকটি গণ-অভ্যুত্থান হবে। নির্বাচন স্বচ্ছ ও সুষ্ঠু হতে হবে। এই নির্বাচনে কোনো রাজনৈতিক দল যদি ৩০০টি আসনও পায় তাতে আমাদের কোনো আপত্তি থাকবে না।
সোনারগাঁয়ে রোববার বিকালে রয়েল রিসোর্টে ফ্যাসিবাদী ব্যবস্থার বিলোপ এবং রাজনৈতিক বন্দোবস্ত বাস্তবায়নের লক্ষ্যে জাতীয় নাগরিক কমিটি এবং বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ‘আপনার চোখে নতুন বাংলাদেশ’ শীর্ষক ক্যাম্পেইন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। জাতীয় নাগরিক কমিটি ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন সোনারগাঁ উপজেলা শাখার যৌথ উদ্যোগে এ অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন জাতীয় নাগরিক কমিটির কেন্দ্রীয় সদস্য তুহিন মাহমুদ, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সোনারগাঁয়ের সংগঠক শাকিল সাইফুল্লাহ, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে পুলিশের গুলিতে আহত শাকিল আহম্মেদ, শহিদ মেহেদী হাসানের পিতা সানাউল্লাহ ও শহিদ ইমরান হোসেনের মা কোহিনুর আক্তার প্রমুখ।
সারজিস আলম বলেন, শেখ হাসিনা লেজ গুটিয়ে পালিয়ে গেছে। আত্মীয়স্বজনদেরও সেইফ এক্সজিট দিয়েছেন। হাসিনা নিজে এবং পরিবারকে বাঁচানোর জন্য পালালেও তার নেতাকর্মীদের নিয়ে যাননি, তৃণমূল নেতাকর্মীদের কথা চিন্তাও করেননি। এখন তৃণমূল নেতাকর্মীদের টিস্যুর মতো ব্যবহার করছে। তিনি বলেন, মাঠ পর্যায়ের আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের এ থেকে শিক্ষা নেওয়া উচিত। তাদের ভাবা উচিত তারা কার পেছনে রাজনীতি করেছেন বা করবেন। এখন নেতাকর্মীদের চেনার সুযোগ হয়েছে। শেখ হাসিনা বিদেশে এসি রুমে বসে মোদিকে নিয়ে ষড়যন্ত্র করছেন। দেশের বাইরে বসে নেতাকর্মীদের উসকানি দিচ্ছেন। তারা তার কথা শুনে বিপদে পড়ছেন।
সারজিস আলম আরও বলেন, বাংলাদেশে চাঁদাবাজি ছিল, চাঁদাবাজি হচ্ছে। সিন্ডিকেট ছিল, সিন্ডিকেট আছে। সোনারগাঁয়ে শিল্পনগরীর বিভিন্ন জায়গায় দখলদারিত্ব যা ছিল, তাই আছে। বিভিন্ন স্পট থেকে শুরু করে যত টাকার ভাগবাঁটোয়ারা হতো এখন তার চেয়ে কম হয় না বরং আরও বেশি হয়। এগুলো বন্ধ করতে হলে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। মনে রাখতে হবে আন্দোলনের সময় ৫-৬ জুন আমরা ৫০০ জনও রাজপথে ছিলাম না। কিন্তু ৫ আগস্ট ৫ কোটি মানুষ পুরো রাজপথে নেমেছিলাম।
সারজিস বলেন, আমাদের কাছে খবর আসছে, থানা পুলিশ ও কোর্টের অনেক বিচারক টাকার বিনিময়ে ফ্যাসিবাদের সঙ্গে যুক্তদের সুযোগ দিচ্ছেন। অনেক রাজনৈতিক দলের নেতা ফ্যাসিবাদের দোসরদের কাছ থেকে নানা কিছুর বিনিময়ে শেল্টার দিচ্ছেন। দয়া করে এ কাজটি করবেন না। তাহলে আপনাদের পরিণতি একদিন শেখ হাসিনার মতো হবে। তিনি বলেন, ঐক্যবদ্ধ থাকলে কোনো দেশি-বিদেশি শক্তির শেল্টারের প্রয়োজন হবে না। তিনি বলেন, আমাদের নতুন রাজনৈতিক দল ফেব্রুয়ারির মধ্যে আসছে। আমাদের রাজপথের সহযোদ্ধা নাহিদ ইসলাম যিনি এ অভ্যুত্থানের ঘোষক। তাকে আমরা আহ্বান জানিয়েছি যেন পুরো বাংলাদেশকে আবার আমরা সামনের সারিতে রেখে ঐক্যবদ্ধ করতে পারি। সেজন্য নাহিদ ইসলাম যেন মন্ত্রণালয় ছেড়ে আবারও জনতার কাতারে এসে দাঁড়ান। আমরা বিশ্বাস করি যাদের কাছে ক্ষমতার চেয়ে জনতা আগে ছিল তারা জনতার ডাকে যে কোনো মুহূর্তে ক্ষমতার পথ ছেড়ে আবার জনতার কাতারে আসতে পারে। তিনি বলেন, আমরা অতিদ্রুত সময়ের মধ্যে সবাইকে একসঙ্গে রেখে বাংলাদেশে আবার নতুন একটি দল করতে চাচ্ছি। আমাদের অনেক আশা-আকাঙ্ক্ষা রয়েছে। বিগত ১৬ বছর যে চর্চাগুলো ছিল আমরা এখন আবার সে চর্চাগুলো নতুন করে দেখতে পাচ্ছি। স্পষ্ট কথা যারা এসব চর্চা করে এসেছে তাদের রক্তে ওই চর্চা একদম মিশে গেছে। সেই চর্চা থেকে বের হয়ে আসতে তাদেরই নেতৃত্ব দিতে হবে।