Logo
Logo
×

শেষ পাতা

আশুলিয়ায় বাসায় গ্যাস বিস্ফোরণ

হাসপাতালে মৃত্যুমুখে শিশুসহ ১১ জন

৮ জনেরই শ্বাসনালি পুড়ে গেছে * চুলা ছেড়ে রাখায় জমে থাকা গ্যাস থেকে বিস্ফোরণ

Icon

যুগান্তর প্রতিবেদন ও আশুলিয়া প্রতিনিধি

প্রকাশ: ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

হাসপাতালে মৃত্যুমুখে শিশুসহ ১১ জন

সাভারের আশুলিয়ায় বাসায় গ্যাসের বিস্ফোরণে দগ্ধ ১১ জনের ৮ জনেরই শ্বাসনালি পুড়ে গেছে। তাদের মধ্যে দুজনের অবস্থা বেশি আশঙ্কাজনক। তাদেরকে আইসিইউতে রাখা হয়েছে। অন্যদেরও এই হাসপাতালে রেখেই চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। শুক্রবার রাত ৯টার দিকে আশুলিয়ার ইয়ারপুর ইউনিয়নের বাংলাবাজার গুমাইল এলাকায় এ দুর্ঘটনা ঘটে। ডিইপিজেড ফায়ার সার্ভিসের সিনিয়র স্টেশন অফিসার প্রণব চৌধুরী বলেন, ঘটনাস্থলে গিয়ে তদন্ত করে জানা গেছে, জমে থাকা গ্যাস থেকে এই বিস্ফোরণ হয়েছে।

জানা গেছে, ওই এলাকার আমজাদ ব্যাপারীর বাড়ির দ্বিতীয় তলার একটি ফ্ল্যাটে স্ত্রী সন্তান নিয়ে ভাড়া থাকেন শরীয়তপুরের মো. সুমন। শবেবরাত উপলক্ষ্যে তার বাসায় বেড়াতে যান বড় ভাই, বোন, ভগ্নিপতি, ফুফুসহ অন্য স্বজনরা। সবাই একত্রিত হওয়ায় সেখানে ছিল এক আনন্দঘন মুহূর্ত। অতিথিদের আগমনে সুমনের স্ত্রী পিঠা বানানোর আয়োজন করেছিলেন। বাসায় রান্নার কাজ করা হতো সিলিন্ডার গ্যাস দিয়ে। শুক্রবার রাত ৯টার দিকে রান্না ঘরে বসে পিঠা বানাচ্ছিলেন সুমনের স্ত্রী শারমীন আক্তার ও বোন শিউলী আক্তার। সুমন তাদেরকে সহযোগিতা করছিলেন। পাশের রুমে খাটের ওপর মশারি টানিয়ে ঘুম পাড়ানো হয়েছিল তাদের তিন মাসের শিশুকন্যা সুরাহাকে। অসাবধানতাবশত তাদের কেউ একজন চুলার একটি চাবি দিয়ে রাখেন, তবে আগুন ধরাননি। কিছুক্ষণ পর শিউলি আক্তার আগুন ধরাতে দিয়াশলাই জ্বালাতেই বিকট শব্দে পুরো ফ্ল্যাটে ছড়িয়ে পড়ে আগুন। দরজাগুলো ভেঙে পড়ে যায়। দগ্ধ হন বাসায় থাকা চার শিশুসহ ১১ জন। আনন্দঘন সময় মুহূর্তেই রূপ নেয় বিষাদে। প্রতিবেশীরা এগিয়ে এসে আগুন নেভান। দগ্ধদের প্রথমে নেওয়া হয় স্থানীয় নারী ও শিশু হাসপাতালে। সেখানে প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে তাদের আনা হয় রাজধানীর জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে।

দগ্ধরা হলেন-সুমন মিয়া (৩০), তার মা মোছা. সূর্য বানু (৫৫), বড় ভাই সোহেল মিয়া (৩৮), ফুফু জহুরা বেগম (৭০), সুমনের স্ত্রী শারমিন আক্তার (২৫), দুই সন্তান সুয়ায়েদ (৪) ও তিন মাসের কন্যাশিশু সুরাহা। এ ছাড়া দগ্ধ হন সুমনের বড়বোন শিউলী আক্তার (৩২), তার স্বামী মনির হোসেন (৪৫) ও তাদের দুই সন্তান ছামিন মাহমুদ (১৫) ও মাহাদী হাসান (৭)।

জাতীয় বার্ন ইনস্টিটিউট সূত্রে জানা গেছে, দগ্ধদের মধ্যে সুমনের শরীরের ৯৯ শতাংশ এবং তার বোন শিউলীর শরীরের ৯৫ শতাংশ পুড়ে গেছে। তাদেরকে আইসিইউতে রাখা হয়েছে। এছাড়া শারমীনের শরীরের ৪২ শতাংশ, মনির হোসাইনের শরীরের ২০ শতাংশ, জহুরা বেগমের ৫ শতাংশ, সোহেলের ১০ শতাংশ, সূর্য বানুর ৭ শতাংশ, তিন মাসের শিশু সুরাহার ৯ শতাংশ, সুয়ায়েদের ২৭ শতাংশ, ছামিন মাহমুদের ১৪ শতাংশ এবং মাহাদী হাসানের ১০ শতাংশ পুড়ে গেছে।

জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটের আবাসিক চিকিৎসক শাওন বিন রহমান যুগান্তরকে বলেন, দগ্ধ ১১ জনের মধ্যে ৮ জনের শ্বাসনালি পুড়ে গেছে। এর মধ্যে একজনের ৯৯ শতাংশ ও একজনের ৯৫ শতাংশ শরীর পুড়ে গেছে। তাদের রাখা হয়েছে আইসিইউতে। তারা খুবই গুরুতর অবস্থায় আছেন। দগ্ধ তিনজন আশঙ্কামুক্ত। বাকিদের অবস্থা শঙ্কামুক্ত নয়। সুমন ও তার স্ত্রী শারমীনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। ছোট শিশুটির অবস্থাও ভালো নয়।

সুমন আউটসোর্সিংয়ের কাজ করেন। আর সোহেল একটি লেবেল ফ্যাক্টরিতে কাজ করেন।

বার্ন ইনস্টিটিউটের ষষ্ঠ তলার মেঝেতে পড়ে আহাজারি করছেন দগ্ধ শারমীন আক্তারের মা রাশিদা বেগম। তিনি জানান, খবর পেয়ে সকালে তারা শরীয়তপুর থেকে হাসপাতালে আসেন। বার বার মূর্ছা যাচ্ছিলেন তিনি।

শনিবার সকালে গুমাইল এলাকায় সুমনের বাসায় গিয়ে দেখা গেছে, বাসায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে পোড়া জিনিসপত্র। ফ্ল্যাটের প্রধান ফটকের দরজা ভেঙে গেছে। ভেতরের বিভিন্ন কক্ষের দরজাও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তবে রান্নাঘরের গ্যাস সিলিন্ডারটি এবং পাইপ অক্ষত রয়েছে।

সুমনের প্রতিবেশী ভাড়াটিয়া জাহিদ ভূঁইয়া পেশায় ভেকু চালক। তিনি শনিবার যুগান্তরকে বলেন, রাত ৯টার দিকে হঠাৎ বিকট শব্দ হলো। ঝাঁকুনিতে মনে হলো ভূমিকম্প হয়েছে। সঙ্গে সঙ্গেই সুমনের ফ্ল্যাটে বাঁচাও বাচাও আর্ত-চিৎকার। এগিয়ে গিয়ে দেখি ফ্ল্যাটের প্রধান দরজাটি ভেঙে সিঁড়িতে পড়ে আছে। ভেতরে একটি কক্ষে মশারিতে আগুন জ্বলছে। মশারি গলে গলে ছোট্ট শিশুর ওপরে পড়ছে। দ্রুত মশারি সরিয়ে শিশুটিকে উদ্ধার করে বাইরে অন্য প্রতিবেশীদের হাতে তুলে দিই। এভাবে খাটের নিচ থেকে একটি শিশুকে বের করি। অন্যদেরও উদ্ধার করে হাসপাতালে পাঠাই।

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম