Logo
Logo
×

শেষ পাতা

নির্বাচনব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের সুপারিশ

এমপি ঋণখেলাপি হলে পদ হারাবেন

সুপারিশগুলো ইতিবাচক, রাষ্ট্রপতির একটি অধ্যাদেশের মাধ্যমেই বাস্তবায়ন সম্ভব

Icon

যুগান্তর প্রতিবেদন

প্রকাশ: ১০ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

এমপি ঋণখেলাপি হলে পদ হারাবেন

ঋণখেলাপিদের বিষয়ে সংসদ নির্বাচনের ক্ষেত্রে কঠোর বিধানের সুপারিশ করেছে নির্বাচনব্যবস্থা সংস্কার কমিশন। তারা অভ্যাসগত ঋণখেলাপি ও বিলখেলাপিদের সংসদ নির্বাচনে প্রার্থী হওয়া থেকে বিরত রাখার সুপারিশ করেছে। বিশেষত, ঋণখেলাপিদের ক্ষেত্রে মনোনয়নপত্র জমার ছয় মাস আগে তামাদি ঋণ পরিপূর্ণভাবে পরিশোধের বিধান করতে বলা হয়েছে। পাশাপাশি নির্বাচনের পর আবার ঋণখেলাপি হলে সংসদ-সদস্য (এমপি) পদে থাকার যোগ্যতা হারাবেন-এমন বিধান যুক্তের সুপারিশ করা হয়েছে। নির্বাচনের এক মাস আগে বিলখেলাপিদের এক হাজার টাকার অধিক পরিমাণের সব তামাদি বিল শোধ করার বাধ্যবাধকতা আরোপের কথাও বলেছে কমিশন। নির্বাচনব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদনে এসব সুপারিশ করা হয়েছে। শনিবার কমিশন প্রধান উপদেষ্টার কাছে প্রতিবেদনটি জমা দিয়েছে।

কমিশনের সুপারিশ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক প্রধান অর্থনীতিবিদ ও বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের সাবেক মহাপরিচালক ড. মোস্তফা কে মুজেরী বলেন, এগুলো ভালো ও যৌক্তিক সুপারিশ। এগুলো বাস্তবায়ন হলে নির্বাচনে ঋণখেলাপিদের দৌরাত্ম্য কমবে বলে আশা করা যায়। এর বাস্তবায়ন কঠিন কিছু নয়। রাষ্ট্রপতিকর্তৃক একটি অধ্যাদেশ জারির মাধ্যমেই বাস্তবায়ন করা সম্ভব।

এদিকে ব্যাংকাররাও ঋণখেলাপিদের বিষয়ে কমিশনের সুপারিশকে ইতিবাচক হিসাবে মন্তব্য করেছেন। তারা বলেছেন, এসব সুপারিশ বাস্তবায়িত হলে নির্বাচনের আগে খেলাপিদের বিরুদ্ধে লড়াই করার আইনি জটিলতা কমবে। শুধু নির্বাচনের সময়ই নয়, সবসময়ই ঋণ আদায় হবে। এতে খেলাপি ঋণ কমবে। এসব বিধান শুধু সংসদ নির্বাচন নয়, সব ধরনের নির্বাচনের ক্ষেত্রে করা উচিত। স্থানীয় সরকারসহ ট্রেড বডি বা পেশাজীবী সংগঠনগুলোর ক্ষেত্রেও এটি করলে সুফল মিলবে।

সূত্র জানায়, অভ্যাসগত ঋণখেলাপিদের সংসদ নির্বাচনে প্রার্থী হওয়া থেকে বিরত রাখার কথা বলা হয়েছে। অভ্যাসগত বা ইচ্ছাকৃত ঋণখেলাপিদের শনাক্ত করে তাদের বিরুদ্ধে নানা ব্যবস্থা নেওয়ার পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। গত বছরের মার্চে কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে জারি করা এক সার্কুলারে বলা হয়েছে, ইচ্ছাকৃত ঋণখেলাপি হিসাবে চিহ্নিত হলে তিনি নতুন কোম্পানি খুলতে পারবেন ন। জমি রেজিস্ট্রেশন করতে পারবেন না, বিদেশ ভ্রমণে যেতে পারবেন না, রাষ্ট্রীয় অনুষ্ঠানে দাওয়াত পাবেন না। এমন সব কঠোর বিধান করার ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক নীতিমালা অনুযায়ী ইচ্ছাকৃত ঋণখেলাপিদের শনাক্ত করে সেই তালিকা সময় সময় সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলোয় পাঠাবে। ওইসব দপ্তর প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে। গত বছরের ১ জুলাই থেকে ইচ্ছাকৃত ঋণখেলাপি শনাক্ত করার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। কিন্তু প্রক্রিয়াটি খুব বেশি এগোচ্ছে না। ইতোমধ্যে ন্যাশনাল ব্যাংকসহ কয়েকটি ব্যাংক ইচ্ছাকৃত ঋণখেলাপিদের চিহ্নিত করে কেন্দ্রীয় ব্যাংকে তালিকা পাঠিয়েছে।

নির্বাচনব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের সুপারিশ অনুযায়ী, অভ্যাসগত ঋণখেলাপিদের নির্বাচনে অংশগ্রহণ থেকে বিরত রাখলে আরও চাপ সৃষ্টি হবে। কারণ, ঋণখেলাপিদের একটি অংশ নির্বাচনের আগে খেলাপি ঋণ নবায়ন করে জাতীয় নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছে। নির্বাচনে জয়ী হলে বা পরাজিত হলে আর ঋণ শোধ করছেন না। আবার খেলাপি হয়ে যাচ্ছেন। কমিশন বলেছে বিশেষত ঋণখেলাপিদের ক্ষেত্রে তাদের তামাদি ঋণ মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার ছয় মাস আগে পরিপূর্ণভাবে শোধের বিধান করতে। বর্তমান বিধান অনুযায়ী, যদি অন্য কোনো কারণে তার প্রার্থী হতে বাধা না থাকে তবে মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার দিন প্রার্থী খেলাপি মুক্ত থাকলেই তিনি নির্বাচনে প্রার্থী হতে পারেন। এ বিধানের কারণে শেষ মুহূর্তে খেলাপি বাছাই করতে ব্যাংকগুলোর ওপর বাড়তি চাপ পড়ে। 

মনোনয়নপত্র জমার ছয় মাস আগে খেলাপিমুক্ত হওয়ার বিধান কার্যকর হলে ব্যাংকগুলোর জন্য ভালো হবে। এতে ঋণখেলাপিদের শনাক্ত করা সহজ হবে। একই সঙ্গে মাঠ পর্যায়েও পরিষ্কার বার্তা যাবে কে খেলাপি কে খেলাপি নয়। এতে মনোনয়নপত্র জমার আগে খেলাপি ঋণ পরিশোধের চাপ কমবে। 

প্রচলিত বিধান অনুযায়ী, মনোনয়নপত্র দাখিলের আগে খেলাপিমুক্ত হলে নির্বাচন করতে বাধা থাকে না। তেমনই নির্বাচিত হওয়ার পর সংসদ-সদস্য ঋণখেলাপি হলে তার এমপি পদে থাকার ক্ষেত্রেও কোনো বাধা নেই। কিন্তু কমিশন সুপারিশ করেছে, নির্বাচনের পর আবার ঋণখেলাপি হলে সংসদ-সদস্য পদে থাকার যোগ্যতা হারাবেন তিনি। এ প্রসঙ্গে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এক কর্মকর্তা জানান, নির্বাচনে খেলাপিদের ঠেকাতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে বিভিন্ন সময় নানা সুপারিশ করা হয়েছে। সেগুলোর বড় অংশ বাস্তবায়নও হয়েছিল। পরে সেগুলো আবার বাতিল করে রাজনীতিতদের সুবিধামতো বিধান করা হয়েছে। তবে কমিশন যেসব সুপারিশ করেছে, সেগুলো ইতিবাচক। এগুলো বাস্তবায়িত হলে খেলাপি ঋণের চাপ কিছুটা হলেও কমবে। এসব বিধান সব নির্বাচনের ক্ষেত্রে করা উচিত। সংশ্লিষ্টরা জানান, বাংলাদেশের সংবিধানে আগে একটি বিধান ছিল, ‘কোনো ব্যক্তি যেসব কারণে সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণের অযোগ্য হবেন, একই কারণ যদি নির্বাচিত হওয়ার পর ঘটে তবে তিনি সংসদ সদস্য পদ হারাবেন।’ এ বিধানটি পরে সংবিধান সংশোধন করে বাদ দেওয়া হয়েছে। সংশ্লিষ্টরা বলেছেন, এ ধারা আবার পুনর্বহাল করলে সংসদ-সদস্য হওয়ার পর ঋণখেলাপি হলে তিনি আর ওই পদে থাকতে পারবেন না।


Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম