Logo
Logo
×

শেষ পাতা

স্থায়ী কমিটির বৈঠক

বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি সমর্থন করে না বিএনপি

Icon

যুগান্তর প্রতিবেদন

প্রকাশ: ০৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি সমর্থন করে না বিএনপি

সারা দেশে চলমান ‘নৈরাজ্যকর’ পরিস্থিতিকে সমর্থন করছে না বিএনপি। দেশজুড়ে সংঘটিত ভাঙচুরের ঘটনাকে আগামী জাতীয় নির্বাচনকে প্রলম্বিত করার ষড়যন্ত্র বলে মনে করছে দলটি। একইসঙ্গে এ ঘটনাকে এক ধরনের ফাঁদ হিসাবেও মনে করছে। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে সরকারের পাশে থাকার প্রতিশ্রুতির কথা ইতোমধ্যে ড. মুহাম্মদ ইউনূস নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকারের শীর্ষপর্যায়ে জানানো হয়েছে। দলটির নেতাদের অভিমত, গণ-অভ্যুত্থানের ছয় মাস পরে এ ধরনের ঘটনা ঘটার সুযোগ নেই। দেশের বিভিন্ন জায়গায় হামলা, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের কারণে যে পরিস্থিতির উদ্ভব হয়েছে, তার দায় অন্তর্বর্তী সরকারের ওপরও বর্তায়। কারণ, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে তারা ব্যর্থ হয়েছেন। তাই সরকারকেই বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি সামাল দিতে হবে। এর ব্যত্যয় হলে দেশে নৈরাজ্যকর পরিস্থিতির প্রসার ঘটবে। পরিস্থিতির ওপর নিয়ন্ত্রণ আনতে সরকার কোনো সহযোগিতা চাইলে তা দিতেও প্রস্তুত রয়েছে দলটি। এ ইস্যুতে আগামী সোমবার প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে সাক্ষাৎ করে উদ্বেগ ও নিজেদের অবস্থান তুলে ধরার কথা রয়েছে। শুক্রবার রাজধানীর গুলশানে চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির জরুরি বৈঠকে এমন আলোচনা ও সিদ্ধান্ত হয়েছে বলে জানা গেছে।

বৈঠক সূত্রে আরও জানা গেছে, এসব ঘটনায় কাউকে সরাসরি দোষারোপ করবে না বিএনপি। এই ইস্যুতে কোনো কর্মসূচিও দেবে না। কিন্তু বিষয়টিকে যে তারা সমর্থন করে না, সেটি বিভিন্ন সভা-সেমিনারে বক্তব্যের মধ্য দিয়ে তুলে ধরবে দলটি। জানতে চাইলে স্থায়ী কমিটির সদস্য সেলিমা রহমান বলেন, দেশের চলমান অবস্থা নিয়ে আলোচনা করেছি। বর্তমান অবস্থায় আমরা বৃহস্পতিবার রাতে দলীয় অবস্থান (বিবৃতি) জানিয়েছি। আরও যেসব সিদ্ধান্ত সেগুলো সামনে আসবে। বেলা সাড়ে ১১টা থেকে দুপুর সোয়া ১টা পর্যন্ত অনুষ্ঠিত বৈঠকে লন্ডন থেকে ভার্চুয়ালি সংযুক্ত হয়ে সভাপতিত্ব করেন দলটির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। আমেরিকায় অবস্থানরত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও স্থায়ী কমিটির সদস্য আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরীও ভার্চুয়ালি অংশ নেন। আরও ছিলেন-ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, ব্যারিস্টার জমিরউদ্দিন সরকার, মির্জা আব্বাস (অনলাইনে), গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, ড. আব্দুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান, সালাহউদ্দিন আহমেদ, সেলিমা রহমান, ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু (অনলাইনে), হাফিজ উদ্দিন আহমেদ ও অধ্যাপক এজেডএম জাহিদ হোসেন (অনলাইনে)। আগামীকাল রোববার আমেরিকা থেকে দেশে ফিরবেন বিএনপি মহাসচিব।

বৈঠক সূত্রে জানা গেছে, এতে ধানমন্ডি ৩২ নম্বরসহ সারা দেশে ভাঙচুরের ঘটনা, সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদন ও সমসাময়িক রাজনীতি নিয়ে আলোচনা হয়। বৈঠকে নেতাকর্মীদের কোনো ধরনের বিশৃঙ্খলা-হিংসাত্মক কর্মকাণ্ডে জড়িত না হওয়ার বিষয়ে জরুরি নির্দেশনা দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। সূত্রমতে বৈঠকের পরপরই কেন্দ্র থেকে এমন নির্দেশনা তৃণমূলে দেওয়া হয়েছে। নির্দেশনায় বলা হয়েছে, ‘বিদ্যমান পরিস্থিতিতে কোনো বিরোধী পক্ষের বাড়ি-ঘরে অগ্নিসংযোগ, ম্যুরাল ভাঙচুরসহ কোনো হিংসাত্মক কর্মকাণ্ডে দলীয় নেতাকর্মীরা যেন জড়িত না হয়। আমাদের প্রত্যাশা, দেশ ও দলের বৃহত্তর স্বার্থে এই নির্দেশনা দলের প্রতিটি নেতাকর্মী অক্ষর অক্ষরে পালন করবে।’

জানা গেছে, বৈঠকে বিএনপির এক নেতা বলেন, একটি দেশে বিপ্লব, গণ-অভ্যুত্থান হওয়ার পরপরই নানা ঘটনা ঘটতে পারে। কিন্তু এতদিন পরে কেন হামলা, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের মতো ঘটনা ঘটবে। দেশ কি স্থিতিশীল হবে না? নেতারা মনে করেন, গণ-অভ্যুত্থানের এতদিন পর দেশজুড়ে এমন নৈরাজ্যকর পরিস্থিতি সৃষ্টির পেছনে টার্গেট হচ্ছে বিএনপি ও নির্বাচন। একটি রাজনৈতিক দলের ইন্ধনে ছাত্ররা তাদের শক্তি প্রদর্শন করছে। উদ্দেশ্য, নির্বাচনকে প্রলম্বিত করা, যাতে দ্রুত সময়ে রোডম্যাপ ঘোষণা না করা হয়। কারণ, ছাত্ররা নতুন দল গঠন করে সারা দেশে সংগঠনকে সুসংহত করতে যথেষ্ট সময় চায়। অন্যদিকে বিএনপি দ্রুত নির্বাচনের দাবি জানাচ্ছে। নির্বাচন দিতে দেশি-বিদেশি চাপও বাড়ছে। এমন অবস্থায় নির্বাচনকে বিলম্বিত করতে ষড়যন্ত্রের অংশ হিসাবে দেশজুড়ে নৈরাজ্যকর পরিস্থিতি সৃষ্টি করা হচ্ছে বলে মনে করে বিএনপি।

জানা গেছে, বৈঠকে দ্রুত নির্বাচন ও দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণের দাবিতে বিভিন্ন কর্মসূচি নিয়েও আলোচনা হয়। এর মধ্যে আছে বিভাগীয় ও জেলায় সমাবেশ। এই ইস্যুতে রমজানের আগেই কর্মসূচি পালিত হবে। শিগরিগরই এই কর্মসূচি ঘোষণা করা হতে পারে। বিএনপি চলতি বছরের ডিসেম্বরের মধ্যে জাতীয় নির্বাচন দাবি করে আসছে। তবে আগামী জুলাই-আগস্টেও নির্বাচন অনুষ্ঠান সম্ভব বলে মনে করে দলটি।

বিএনপি নেতাদের মতে, চলমান বিশৃঙ্খল পরিস্থিতির উন্নতি না হলে অন্তর্বর্তী সরকারের যে লক্ষ্য সেটি পূরণ হবে না। ন্যূনতম সংস্কার করে একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন করাই এই সরকারের লক্ষ্য; গত এক দশক ধরে যে ধরনের নির্বাচন বাংলাদেশে হয়নি। কারণ, শেখ হাসিনা সরকারের অধীনে দেশে ২০১৪ সালে বিনা ভোটের নির্বাচন, ২০১৮ সালে রাতের নির্বাচন এবং ২০২৪ সালে ডামি নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে; যেখানে মানুষ ভোট দিতে পারেনি কিংবা দেয়নি।

Jamuna Electronics
wholesaleclub

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম