Logo
Logo
×

শেষ পাতা

এজলাসে শিবলী রুবাইয়াতের কান্না

মামলায় সাজা কম হওয়ায় দুর্নীতি বেড়েছে : আদালত

Icon

যুগান্তর প্রতিবেদন

প্রকাশ: ০৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

মামলায় সাজা কম হওয়ায় দুর্নীতি বেড়েছে : আদালত

দুর্নীতির মামলায় সাজা কম হওয়ায় দুর্নীতি বেড়েছে বলে মন্তব্য করেছেন আদালত। বৃহস্পতিবার দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) দুই মামলায় বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) সাবেক চেয়ারম্যান শিবলী রুবাইয়াত উল ইসলাম ও ম্যাক্স গ্রুপের চেয়ারম্যান গোলাম মোহাম্মদ আলমগীরের রিমান্ড শুনানিতে ঢাকা মহানগর দায়রা জজ এ মন্তব্য করেন। জজ জাকির হোসেন গালিব বলেন, দুর্নীতির মামলায় সাজার পরিমাণ বাড়ানো দরকার। সাজা কম হওয়ায় দুর্নীতি বেড়েছে। জামানত ছাড়া একজন ব্যক্তিকে ৫৮ হাজার কোটি ঋণ দিলে দুর্নীতি তো হবেই। আইন সংশোধন করা দরকার এবং সাজার পরিমাণ বাড়ানো দরকার।

আসামিপক্ষের আইনজীবীরা বলেন, আমরাও দুর্নীতির সাজা চাই। যারা এই দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত তাদের সাজা হোক। তবে আলমগীর কোনো দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত না। এদিন তাদের আদালতে হাজির করে প্রত্যেকের ১০ দিন করে রিমান্ড আবেদন করে দুদক। তাদের আইনজীবীরা রিমান্ড আবেদন বাতিল চেয়ে জামিন আবেদন করেন। দুদকের পাবলিক প্রসিকিউটর মাহমুদ হোসেন জাহাঙ্গীর রিমান্ডের পক্ষে শুনানি করেন। পরে আদালত রিমান্ড ও জামিন আবেদন নামঞ্জুর করে তাদের জেলগেটে জিজ্ঞাসাবাদের আদেশ দেন।

শুনানিতে রাষ্ট্রপক্ষে জাহাঙ্গীর বলেন, লন্ডারিংয়ে মাধ্যমে রুবাইয়াতের অ্যাকাউন্টে ১ কোটি ৯২ লাখ টাকা আসে। উপযুক্ত নথিপত্র তিনি দেখাতে পারেননি। আমরা মনে করছি উনি এরকম আরও অনেক লন্ডারিংয়ের সঙ্গে জড়িত আছে। তাই জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তার ১০ দিনের রিমান্ড চাচ্ছি। ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালতের পিপি শুনানিতে বলেন, রুবাইয়াত মানি লন্ডারিংয়ের মাস্টার মাইন্ড। শেয়ার কেলেংকারির হোতা। এসবে তাকে সহযোগিতা করেছে সালমান এফ রহমান। একটা সিন্ডিকেট তৈরি করে তারা হাজার হাজার কোটি টাকা পাচার করেছে। তাকে রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদ করা হলে আরও তথ্য বের হবে। আসামিপক্ষের আইনজীবী বোরহান উদ্দিন বলেন, এ বিষয়ে মামলা চলমান আছে। এটা মানিলন্ডারিং না। এই অভিযোগের সঙ্গে তার কোনো সম্পর্ক নাই। আমরা তার রিমান্ড বাতিলের আবেদন জানাচ্ছি। ম্যাক্স গ্রুপের চেয়ারম্যান আলমগীরের শুনানিতে দুদকের পাবলিক প্রসিকিউটর জাহাঙ্গীর বলেন, তাকে সম্পদ বিবরণী দাখিল করতে বলা হয়েছিল। তিনি যা দাখিল করেছেন তার সাথে অমিল পাওয়ায় মামলা করা হয়েছে। তার কাছে দুটি পাসপোর্ট পাওয়া গেছে। একটা বাংলাদেশের ও আরেকটা বার্মুডার। তাকে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা প্রয়োজন।

আসামিপক্ষের আইনজীবী গোলাম মোস্তফা খান ও খোরশেদ মিয়া আলম বলেন, উনি একজন ব্যাবসায়ী উনাকে হয়রানি করা হলে অর্থনীতি ধসে পড়বে। মানি লন্ডারিংয়ের সঙ্গে উনার কোনো সম্পর্ক নাই। সব অভিযোগ মিথ্যা। এ সময় দুই আসামির উদ্দেশ্যে বিচারক বলেন, আপনারা কিছু বলতে চান? পরে আলমগীর বলেন, আমি একজন সিআইপি, আমার প্রতিষ্ঠান আছে দেশে। আমি এই কিছু টাকা মানি লন্ডারিং কেন করব। প্রতি মাসে ১০ হাজার লোককে ১৩ কোটি টাকা বেতন দিই। বছরে ৩০০ কোটি টাকা সরকারের কোষাগারে ট্যাক্স দিই। আমি ইঞ্জিনিয়ারদের গৌরব। আমার মতো লোককে যদি হেনস্তা করা হয় তা অর্থনীতির জন্য ক্ষতি।

শিবলী রুবাইয়াত বলেন, আমি দুদকে চার মাস দৌড়াদৌড়ি করেছি। দুদক যেসব তথ্য চেয়েছে আমি সব দিয়েছি। আমার ও পরিবারের ব্যাংক অ্যাকাউন্ট বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। উত্তরাধিকার সূত্রে পাওয়া সম্পদ ছাড়া আমার কোনো সম্পদ নেই। আমার পরিবারের নামে কোনো শেয়ার নেই। রেমিট্যান্স আসছে, সেটা নিয়ে দুদক বলছে মানিলন্ডারিং করেছি। পরে আদালত তাদের রিমান্ড ও জামিন আবেদন বাতিল করে একদিন জেলগেটে জিজ্ঞাসাবাদের আদেশ দেন। এ সময় কান্না করে দেন শিবলী রুবাইয়াত। পরে তাদের আদালতের গারদখানায় নিয়ে যাওয়া হয়।

গত মঙ্গলবার রাতে ঢাকার ধানমন্ডি থেকে শিবলী রুবাইয়াতকে আটক করে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশ। পরবর্তীতে দুর্নীতি দমন কমিশনের উপ-পরিচালক মো. মাসুদুর রহমান বুধবার বাদী হয়ে মামলা করেন।

অন্য আসামিরা হলেন-বাংলাদেশ সিকিউরিটি অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের সাবেক চেয়ারম্যান শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম (৫৭), মোনার্ক হোল্ডিং ইনকর্পোরেশনের চেয়ারম্যান জাবেদ এ মতিন, ঝিন বাংলা ফেব্রিক্সের প্রোপাইটর আরিফুল ইসলাম (৭৮), মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের দিলকুশা শাখার ফরেন এক্সচেঞ্জ বিভাগের সাবেক ইনচার্জ এবং বর্তমান এফএভিপি ইসরাত জাহন (৪৬), ব্যাংকটির ভাইস চেয়ারম্যান ইকবাল হোসেন (৫৪) ও মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের দিলকুশা শাখার সাবেক ব্যবস্থাপক সৈয়দ মাহবুব মোরশেদ (৫৬)।

এদিকে মঙ্গলবার (৪ ফেব্রুয়ারি) রাতে বিমানবন্দর থেকে ম্যাক্স গ্রুপের চেয়ারম্যান ইঞ্জিনিয়ার গোলাম মোহাম্মদ আলমগীরকে গোয়েন্দা পুলিশের সহায়তায় গ্রেফতার করা হয়।

ইঞ্জিনিয়ার গোলাম মোহাম্মদ আলমগীরের বিরুদ্ধে গত ৪ ফেব্রুয়ারি মামলা করে দুদক। সংস্থাটির মহাপরিচালক মো. আক্তার হোসেন মঙ্গলবার তার বিরুদ্ধে মামলার তথ্য দেন।

এজাহারে দুদক বলেছে, আলমগীরের নামে এবং পারিবারিক ব্যয়সহ ৮১ কোটি ৩৯ লাখ ৫৭ হাজার ৯৭৫ টাকার সম্পদ অর্জনের তথ্য রয়েছে। বিপরীতে তার গ্রহণযোগ্য আয় পাওয়া গেছে ৫৩ কোটি ৫৩ লাখ ৩৭ হাজার ৬৭ টাকা। সেই হিসাবে আয়ের সঙ্গে সঙ্গতিহীন প্রায় ২৭ কোটি ৮৬ লাখ ২০ হাজার ৯০৮ টাকার সম্পদ অর্জন করেছেন তিনি। গোলাম মোহাম্মদ আলমগীরের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অনিয়ম-দুর্নীতির মাধ্যমে বিদেশে টাকা পাচারের একটি অভিযোগ ২০২৩ সালে অনুসন্ধান শুরু করে দুদক।

Jamuna Electronics
wholesaleclub

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম