হাসিনার বিরুদ্ধে অনুসন্ধান, বিদেশ সফরে অপচয় ও ভুয়া ডক্টরেট ডিগ্রি
যুগান্তর প্রতিবেদন
প্রকাশ: ০৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
রাষ্ট্রীয় শত শত কোটি টাকা অপচয় করে বিদেশ ভ্রমণ ও ভুয়া ডক্টরেট ডিগ্রি অর্জনের অভিযোগে পলাতক সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে অনুসন্ধান শুরু করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। বৃহস্পতিবার দুদকের প্রধান কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে সংস্থাটির মহাপরিচালক মো. আক্তার হোসেন এ তথ্য জানান। তিনি বলেন, দুদকের গোয়েন্দা অনুসন্ধানে অভিযোগের বিষয়ে প্রাথমিক তথ্য-প্রমাণ পাওয়ায় কমিশন থেকে প্রকাশ্যে অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। দুদক জানায়, সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিদেশ সফরে গেলে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের উড়োজাহাজ ভাড়া করতেন সরকারি টাকায়। সফরসঙ্গীদের বিশাল বহর নিয়ে যেতেন। টানা ১৬ বছর ক্ষমতায় থাকাকালে প্রায় প্রতি জাতিসংঘের অধিবেশনে সরকারপ্রধান হিসাবে যোগ দিয়েছেন তিনি। প্রতিবারই বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার পছন্দের মানুষকে নিউইয়র্ক নিয়ে যেতেন। ২০১৫ সালে ২২৭ জনের একটি দল নিয়ে নিউইয়র্কে যান শেখ হাসিনা। সেখানে জাতিসংঘের ৭০তম সাধারণ অধিবেশন এবং টেকসই উন্নয়নবিষয়ক বিশেষ শীর্ষ সম্মেলনে যোগ দেন। ২০১৪ সালে ৬৯তম সাধারণ অধিবেশনে এই সংখ্যা ছিল ১৭৮ এবং ২০১৩ সালে এই সংখ্যা ছিল ১৩৪।
অভিযোগে বলা হয়েছে, ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশ থেকে বিভিন্ন দেশে বিমানের বোয়িং ৭৭৭ ও ৭৮৭ সিরিজের অত্যাধুনিক উড়োজাহাজে যেতেন। ২০১৯ থেকে ২০২৪ সালের মাঝামাঝি সময় পর্যন্ত (পাঁচ বছরে) রাষ্ট্রীয় উড়োজাহাজ সংস্থাটি ২৫০ কোটি টাকা ব্যয়ে ৪৮টি ভিভিআইপি ফ্লাইট পরিচালনা করেছে। এসব সফরে শেখ হাসিনা ব্যয় করেছেন প্রায় ২০০ কোটি টাকা। ২০২১ সালের ১৮ সেপ্টেম্বর স্থানীয় সময় বিকালে হেলসিংকির ভানতা আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের ভিভিআইপি ফ্লাইট বিজি-১৯০২ যোগে নিউইয়র্কের উদ্দেশে রওনা হন প্রধানমন্ত্রী।
বিমান সূত্রে জানা গেছে, সরাসরি ঢাকা থেকে নিউইয়র্ক যাত্রা না করে ফিনল্যান্ডে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের এই ভিভিআইপি চার্টার্ড ফ্লাইট অবতরণ করে। সেখানে দুদিনের ল্যান্ডিং চার্জসহ সফরসঙ্গীদের যাবতীয় খরচ বহন করতে অতিরিক্ত সাত কোটি টাকার সমপরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা ব্যয় হয়েছে। ২০২৩ সাল পর্যন্ত সরকারের কাছে বিমানের পাওনা আছে প্রায় ৫০ কোটি টাকা।
অন্যদিকে, ছাত্র-জনতার গণ-অভ্যুত্থানে ক্ষমতা ছেড়ে পালানোর আগ পর্যন্ত ধারাবাহিকভাবে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ভুয়া ডক্টরেট ডিগ্রি সংগ্রহ করেছেন। অভিযোগ আছে, সরকারি কোষাগারের অর্থে লবিস্ট ফার্ম নিয়োগ করে এই ডিগ্রি নেন তিনি। যেসব জায়গা থেকে ‘ভুয়া ডক্টরেট’ ডিগ্রি নিয়েছেন তিনি, সেই তালিকায় উল্লেখযোগ্য হচ্ছে-ভারতের ত্রিপুরা বিশ্ববিদ্যালয়, বেলজিয়ামের ক্যাথলিক বিশ্ববিদ্যালয় অব ব্রাসেলস ও ভারতের বিশ্ব-ভারতী বিশ্ববিদ্যালয়।
আরও অভিযোগ আছে, রাষ্ট্রীয় বিপুল অর্থ অপচয় ও জাতীয় স্বার্থের পরিপন্থী চুক্তির বিনিময়ে তিনি নানা পদক ও ডিগ্রি বাগিয়ে নিয়েছেন।