মহান ভাষার মাস
বইমেলা মহিমা হারিয়েছে, পুঁজির দখলে সংস্কৃতি
জাহাঙ্গীর ফিরোজ
প্রকাশ: ০৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
তখন প্রায় দুপুর, তন্দ্রার ঘোরে ডুবে ছিলাম; এরইমাঝে শিয়রে রাখা ফোনের ঘন শিহরণ ঘুমের আমেজটুকু ভেঙে দিল। ফোনের অপর প্রান্ত থেকে এক উচ্ছ্বল কণ্ঠ আমাকে জাগালো। খুব পরিচিত, তবু শনাক্ত করতে না পারায় বিনয়ের সঙ্গে পরিচয় জানতে চাইলাম। আমার অত্যন্ত স্নেহভাজন অনুজ বন্ধুপ্রতিম কবি শুচি সৈয়দ স্বভাবসুলভ হেসে হেসে বলে, এখনও ঘুমোচ্ছেন?
কুশল বিনিময় করে বইমেলা নিয়ে আমার অনুভূতির কথা লিখতে অনুরোধ করল। ওকে বললাম, অনুভূত তো আমি কবিতায় প্রকাশ করি। বইমেলা নিয়ে কবিতা লিখেছি। ওতেই আমার অনুভূতি প্রকাশ করছি। শুচি সৈয়দ বলে, গদ্য চাই, ওই কবিতার বিষয়কে গদ্যে লিখে দিন। বিকালে আবার রিং দেব।
আমি শুয়ে শুয়ে সেলফোনের নোটপ্যাডে লিখতে শুরু করলাম।
একসময় বইমেলার জন্য উন্মুখ হয়ে থাকতাম। সত্তুরের দশক, আশির দশক ও নব্বই দশকেও বইমেলা খুবই টানতো। স্মরণে এখনো রয়েছে একুশের রাতজাগার স্মৃতি। খুব ভোরে হাজির হয়ে যেতাম জগন্নাথ হলের গেট থেকে ২৫ পয়সা দিয়ে লুচি ও ডালনা উদরস্থ করে একাডেমির প্রাঙ্গণে। একাডেমির মঞ্চে কবিতা পড়ে সেই যে আড্ডা শুরু হ’তো, চলতো মেলা শেষ না হওয়া পর্যন্ত। সে-সব আজ শুধুই স্মৃতি।
তখন জাতিকে মুজিব দিয়ে বিভক্ত করা হয়নি। কথায় কথায়, প্রয়োজনে-অপ্রয়োজনে পিতাও বিশেষণ ব্যবহৃত হতে দেখিনি। শেখ হাসিনার অবৈধ শাসন আমলে দেখেছি শেখ মুজিবের নামের আগে ‘জাতির পিতা’ ও ‘বঙ্গবন্ধু’ না বলায় জেলে যেতে। ভীতু ও চাটুকাররা তাই প্রয়োজন-অপ্রয়োজনে শব্দ দুটি ব্যবহার করতে করতে ক্লিশে করে ফেলেছে। ওই সময় মুজিবের নামে হাজারো জঞ্জাল নিয়ে বইমেলায় স্টল দখল করা হয়েছে। বাংলা একাডেমিও অসংখ্য জঞ্জাল তৈরি করেছে। এই সময়ের মধ্যে বইমেলার চরিত্র পালটে যায়। প্রকাশনা জগত মাফিয়া, আমলা লেখক ও বিদেশে ডলার কামানো অলারা এসে দখল করে নেয়।
প্রকাশকরা তাদের টাকাতে বই প্রকাশ করতে অভ্যস্ত হয়ে পড়ে। জাত লেখক কবি অবহেলিত হতে থাকে। আর অবৈধ পুঁজির প্রতাপে বাংলা একাডেমির বইমেলা সম্প্রসারিত হতে থাকে। স্টল বরাদ্দে বাড়তি পয়সাও পকেটে যায়। তাই বাংলা একাডেমির মহাপরিচালকের পদ ধরে রাখার প্রাণান্তকর চেষ্টাও আমরা দেখেছি। যখন থেকে বইমেলা আওয়ামীকরণ শুরু হয় তখন থেকেই বইমেলা তার মহিমা হারিয়ে রূপোপজীবিনীর চাকচিক্য ধারণ করে। ২০২৫ এর বইমেলায় এখনও যাইনি। ওখানে রাখা ডাস্টবিনে ময়লা ফেলার প্রতীকী প্রতিবাদ দেখেছি।