টেকনাফ থানার এসআই বদিউল
এসপি নেন ১০ লাখ, আমি নিই এক কোটি!
জসিম উদ্দিন, কক্সবাজার
প্রকাশ: ০৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
কক্সবাজারের টেকনাফ থানার উপপরিদর্শক বদিউল আলমের বিরুদ্ধে ঘুস, মাদক কারবার ও সাধারণ মানুষকে হুমকি দিয়ে টাকা আদায়ের অভিযোগ উঠেছে। সম্প্রতি তার অপকর্মের একাধিক অডিও ও ভিডিও প্রতিবেদকের হাতে এসেছে, যেখানে তিনি নিজের ক্ষমতা ও ঘুসের কারবার নিয়ে বক্তৃতা দেন। একটি অডিও ক্লিপে তিনি চট্টগ্রামের আঞ্চলিক ভাষায় বলেন, ‘এসপি-তেসপি’দের কার সঙ্গে কি সম্পর্ক, আমি জানি। তিনি বলেন-এসপি মাসে ৫ থেকে ১০ লাখ নেন, আর আমি এক কোটি টাকা পাই।’ টেকনাফ থানায় বদিউলের যোগদানের পর থেকেই পুরো আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি পরিবর্তিত হয়। সাধারণ ডায়েরি (জিডি), জমির বিরোধ, দাম্পত্য কলহ কিংবা পারিবারিক সালিশ-সবকিছুতেই তার হস্তক্ষেপ লক্ষ্য করা যায়। এসব সমস্যার মাধ্যমে তিনি শুধু টাকা আদায় করেননি, বরং সাধারণ মানুষের জীবনে এক ধরনের আতঙ্কের পরিবেশ সৃষ্টি করেছেন। অভিযোগ উঠেছে যে, তিনি টেকনাফের বিভিন্ন পরিবারকে মাদক কারবারি কিংবা মানব পাচারকারী হিসাবে চিহ্নিত করে তাদের থেকে টাকা আদায় করেন।
বদিউলের বিরুদ্ধে অভিযোগ যে শুধু ঘুসের বাণিজ্য পর্যন্ত সীমাবদ্ধ নয়, তার সঙ্গে দাগি অপরাধীদের সম্পর্কের কথাও উঠে এসেছে। মাদক ব্যবসায়ী, ছিনতাইকারী ও ডাকাতদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গড়ে তোলেন এবং তাদের সহযোগিতা করেন বলে স্থানীয়রা দাবি করছেন। অভিযোগ উঠেছে, তিনি কোনো মামলা ছাড়াই টাকার বিনিময়ে অপরাধীদের সহযোগী হয়ে ওঠেন এবং তাদের থেকে ঘুস আদায় করেন। এ ছাড়া স্কুলছাত্রকে অস্ত্র দিয়ে ফাঁসানোর ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগও উঠেছে।
গত ২৮ অক্টোবর টেকনাফের হ্নীলা ইউনিয়নের লেদায় ‘জেটএনবি’ ব্রিকস নামের একটি ইটভাটার ম্যানেজার আব্দুল হককে অপহরণ করে থানায় নিয়ে যান বদিউল। তার বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ না থাকা সত্ত্বেও তাকে বনকর্মী অপহরণ মামলায় অভিযুক্ত করা হয় এবং আদালতে পাঠানো হয়। ভুক্তভোগী আব্দুল হকের ভাই ফাহাদ জানিয়েছেন, তার ভাই পাঁচ বছর ধরে ইটভাটার ম্যানেজারের দায়িত্ব পালন করছেন, কিন্তু তার বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ ছিল না।
বদিউলের বিরুদ্ধে স্থানীয় গণমাধ্যম কর্মীরা জানিয়েছেন, তিনি তার ব্যক্তিগত গাড়ি ব্যবহার করে নিরীহ মানুষকে ভয়ভীতি দেখিয়ে টাকা আদায় করেন। এমনকি তিনি নিজেকে ‘সিভিল টিম’ হিসাবে পরিচয় দেন। এসব অভিযোগ সম্পর্কে জানতে চাইলে, বদিউল সবকিছু অস্বীকার করেছেন এবং দাবি করেছেন যে, তিনি কোনো বাড়িতে অভিযান করতে যাননি এবং মাদক কারবারিদের কাউকে হুমকি দেননি। কক্সবাজার পুলিশ সুপার মুহাম্মদ রহমত উল্লাহ বলেন, বদিউলের বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ উঠেছে, তা তদন্ত করে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।