সংবাদ সম্মেলনে হাসনাত আবদুল্লাহ
নতুন দল গঠন নিয়ে জনমত জরিপ শুরু
![Icon](https://cdn.jugantor.com/uploads/settings/icon_2.jpg)
ঢাবি প্রতিনিধি
প্রকাশ: ০৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
![নতুন দল গঠন নিয়ে জনমত জরিপ শুরু](https://cdn.jugantor.com/assets/news_photos/2025/02/06/13-67a3fe0614dc2.jpg)
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বায়ক হাসনাত আবদুল্লাহ বলেছেন, শেখ হাসিনা ও ছাত্রলীগ প্রসঙ্গ এ দেশে আর নেই। শেখ হাসিনা বাংলাদেশের কসাই। তার কোনো ভাষণ যদি এখন কোনো গণমাধ্যমে প্রচারিত হয়, তাহলে সে গণমাধ্যম শেখ হাসিনাকে সহযোগিতা করছে বলে ধরে নিতে হবে। বুধবার দুপুরে রাজধানীর বাংলামোটরে রূপায়ণ ট্রেড সেন্টার কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন। এ সময় হাসনাত আবদুল্লাহ জানান, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন এবং জাতীয় নাগরিক কমিটি নতুন রাজনৈতিক দল গঠন করবে। দলের নাম ও প্রতীক নির্ধারণে সর্বস্তরের মানুষের মতামত সংগ্রহের উদ্যোগ নিয়েছে সংগঠন দুটি। হাসনাত আবদুল্লাহ বলেন, ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার রক্তক্ষয়ী অভ্যুত্থানের মুখে গণহত্যাকারী ফ্যাসিস্ট হাসিনা ও আওয়ামী ফ্যাসিবাদী সরকারের পতন ঘটাতে পেরেছি। কিন্তু রাষ্ট্রীয় কাঠামোতে বিদ্যমান ফ্যাসিবাদী উপাদানের বিলোপ ঘটেনি। গণ-অভ্যুত্থানের এক দফা তথা ফ্যাসিবাদী ব্যবস্থার বিলোপ ও নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্ত বাস্তবায়ন, নতুন রাষ্ট্রকাঠামো গঠন, গণতন্ত্রকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ প্রদান এবং সাম্য, মানবিক মর্যাদা ও সামাজিক সুবিচারের বাংলাদেশ গড়ার কাজ এখনো অসমাপ্ত রয়ে গেছে।
তিনি বলেন, এই ভূখণ্ডের মানুষ ১৯৪৭-এর পাকিস্তান আন্দোলন, ১৯৭১-এর মহান মুক্তিযুদ্ধ, ১৯৯০-এর অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে একটি জুলুম-শোষণহীন গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার আকাঙ্ক্ষা বারবার ব্যক্ত করেছে। কিন্তু বিদ্যমান রাজনৈতিক কাঠামো ও দলগুলো এই আকাঙ্ক্ষাকে ধারণ করতে ও বাস্তব রূপ দিতে বারবার ব্যর্থ হয়েছে। ছাত্র-জনতার নেতৃত্বে সংঘটিত অভ্যুত্থানে অংশগ্রহণ করা দেশের সর্বস্তরের নাগরিকদের; বিশেষত, তরুণ জনগোষ্ঠীর নতুন আকাঙ্ক্ষা ও রাষ্ট্রকল্প ধারণ করে ফ্যাসিবাদবিরোধী জনতাকে সঙ্গে নিয়ে আমরা একটি রাজনৈতিক দল গঠনের উদ্যোগ নিয়েছি।
নতুন রাজনৈতিক দলের কাছ থেকে প্রত্যাশা জানতে জনসাধারণের মতামত সংগ্রহ এবং অগ্রাধিকার নির্ধারণ করতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন এবং জাতীয় নাগরিক কমিটি দেশব্যাপী জনমত গ্রহণের প্রক্রিয়া শুরু করেছে বলে জানান হাসনাত আবদুল্লাহ। তিনি বলেন, আপনার চোখে নতুন বাংলাদেশ স্লোগানের আওতায় পরামর্শমূলক উদ্যোগের লক্ষ্যে সারা দেশে সব কমিটি এবং তাদের কর্মীদের বিস্তৃত নেটওয়ার্ককে যুক্ত করা হবে। রিকশাচালক, দোকানদার, দিনমজুর, গৃহকর্মী, শিক্ষক, ঝাড়ুদার এবং সর্বস্তরের এক লাখেরও বেশি মানুষের সঙ্গে যুক্ত হয়ে নতুন রাজনৈতিক দলের ভবিষ্যতের দিকনির্দেশনার বিষয়ে তাদের মতামত চাওয়া এই কর্মসূচির লক্ষ্য।
নতুন দলটি ‘শুধু কিছু মানুষের নয়, অনেকের কণ্ঠস্বর হতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ’ বলে জানান বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের আহ্বায়ক। তিনি বলেন, যারা বিদ্যমান রাজনৈতিক ব্যবস্থার দ্বারা বাদ পড়েছে, এই দল তাদের প্রতিনিধিত্ব করবে। আমরা সব নাগরিকের কথা শোনার মধ্য দিয়ে একটি নতুন রাজনৈতিক সংস্কৃতি গড়ে তোলার আকাঙ্ক্ষা ধারণ করি।
নতুন রাজনৈতিক দল সম্পর্কে মতামত সংগ্রহের জন্য প্রায় এক লাখ মানুষের মতামত সংগ্রহের লক্ষ্য ঠিক করেছে দুই সংগঠন। নতুন দলের জন্য নাম ও প্রতীক প্রস্তাব দেওয়ার জন্যও জনগণকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। হাসনাত আবদুল্লাহ বলেন, বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে এটি একটি অনন্য উদ্যোগ, যেখানে এত ব্যাপক আকারে জনমত সংগ্রহ করা হচ্ছে।
তিনি বলেন, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও জাতীয় নাগরিক কমিটি ‘জুলাই বিপ্লবের চেতনা’ রক্ষার জন্য স্বতন্ত্র রাজনৈতিক প্ল্যাটফর্ম হিসাবে অব্যাহত থাকবে এবং জনগণের প্রতিনিধিত্ব করে এমন একটি রাজনৈতিক দল গড়ে তোলার জন্য একসঙ্গে কাজ করবে।
সংবাদ সম্মেলনে জাতীয় নাগরিক কমিটির আহ্বায়ক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী বলেন, এই ক্যাম্পেইনের মধ্য দিয়ে আমরা অফলাইনে এক লাখ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের কাছে যাব। আমাদের মতামতের ভিত্তিতেই ছাত্রদের নতুন দলের নাম আপনারা নির্ধারণ করবেন। দলের মার্কাটা কী হবে সেটার মতামত আপনারা দেবেন।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মুখ্য সংগঠক আব্দুল হান্নান মাসউদ, জাতীয় নাগরিক কমিটির সদস্য সচিব আখতার হোসেনসহ অন্যান্য নেতাকর্মীরা সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন।