পালিয়েছিল যুবকের সঙ্গে
নিখোঁজ সেই কিশোরী সুবা নওগাঁয় উদ্ধার

মোহাম্মদপুর (ঢাকা) ও নওগাঁ প্রতিনিধি
প্রকাশ: ০৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ

রাজধানীর মোহাম্মদপুর থেকে নিখোঁজের দুদিন পর ১১ বছরের কিশোরী আরাবি ইসলাম সুবাকে উদ্ধার করা হয়েছে। মঙ্গলবার নওগাঁর আরজি মধ্যপাড়ার একটি বাসা থেকে পুলিশের সহায়তায় র্যাব-৫ তাকে উদ্ধার করে।
মায়ের ক্যানসারের চিকিৎসা করাতে ঢাকায় এসে মোহাম্মদপুর থেকে রোববার সন্ধ্যায় নিখোঁজ হয় সুবা। এ ঘটনায় আদাবর থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করেন তার বাবা ইমরান রাজিব। টিকটক অ্যাপের মাধ্যমে নওগাঁ সদরের মোমিন হোসেন নামে এক যুবকের সঙ্গে পরিচয় হয় সুবার। এরপর সেই পরিচয় গড়ায় প্রণয়ে। তাদের পরিকল্পনা অনুযায়ী মোমিন ঢাকায় এসে রোববার সন্ধ্যায় সুবাকে নিয়ে পালিয়ে যায়।
পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, ফুসফুসের ক্যানসারে আক্রান্ত মায়ের চিকিৎসার জন্য দুই মাস আগে বরিশাল থেকে পরিবারের সঙ্গে ঢাকায় আসে সুবা। সে বরিশালে একটি বিদ্যালয়ের ষষ্ঠ শ্রেণির ছাত্রী। রোববার সন্ধ্যা ৬টায় সুবা বয়সে ছোট ফুপাতো ভাইয়ের সঙ্গে বাসা থেকে বের হয়। এরপর প্রথমে আদাবরের জাপান গার্ডেন সিটির পাশে টোকিও স্কয়ার শপিং কমপ্লেক্সে ঘোরাঘুরি করে। মার্কেট থেকে বের হয়ে রাস্তা পার হতে গিয়ে সুবা নিখোঁজ হয়। এ ঘটনায় তার বাবা ইমরান রাজিব আদাবর থানায় সাধারণ ডায়েরি করলে তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তায় নওগাঁ সদর উপজেলা থেকে তাকে উদ্ধার করে আদাবর থানা পুলিশ। পুলিশের দাবি, সুবাকে উদ্ধারের পর থেকে তার পরিবারের সদস্যরা পুলিশের সঙ্গে কোনো যোগাযোগ করছেন না। পুলিশের পক্ষ থেকে যোগাযোগের চেষ্টা করলেও তারা ফোন ধরছেন না।
নওগাঁ সদর থানার ওসি নূরে আলম সিদ্দিকী বলেন, ‘ঢাকা থেকে সুবা মিসিং হয়েছে-এমন একটি তথ্য আমাদের কাছে ছিল। তথ্যপ্রযুক্তির মাধ্যমে নিশ্চিত হই সুবা নওগাঁয় অবস্থান করছে। এরপর নওগাঁ শহরের আরজি মধ্যপাড়া এলাকায় তার কথিত প্রেমিক মোমিনের বাসায় অভিযান চালানো হয়। প্রথমে মোমিনের বাবাকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করা হলে তিনি স্বীকার করেন সুবা তাদের কাছে রয়েছে। এরপর প্রতিবেশীর বাড়ি থেকে সুবাকে উদ্ধার করা হয় এবং মোমিনকে আটক করে হেফাজতে নেওয়া হয়। এখন তারা র্যাব-৫ জয়পুরহাট ক্যাম্পের হেফাজতে রয়েছে।’
সুবার বাবা ইমরান রাজিব বলেন, ‘সুবা বরিশালের একটি স্কুলে ষষ্ঠ শ্রেণিতে পড়ে। স্ত্রীর ক্যানসারের চিকিৎসার জন্য দুই মাস ধরে ঢাকায় আমার বোনের বাড়িতে আছি। রোববার সন্ধ্যায় ফুপাতো ভাইয়ের সঙ্গে সে বাইরে বের হয়। রাস্তা পার হওয়ার সময় ফুপাতো ভাই কিছুটা আগে চলে যায়। পরে সে পেছন ফিরে দেখে সুবা নেই। এ বিষয়ে আমি আদাবর থানায় একটি জিডি করেছি। এরপর পুলিশ তাকে উদ্ধার করে।’
এদিকে টোকিও স্কয়ারের সিসি ক্যামেরার ফুটেজে দেখা যায়, সুবার ফুপাতো ভাই ছাড়া তার সঙ্গে আরেক যুবক রয়েছে। সে ওই যুবকের সঙ্গে পাশাপাশি হাত ধরে হাসতে হাসতে হেঁটে মার্কেট থেকে বের হচ্ছে। পুলিশ সুবাকে উদ্ধারের পর জানতে পারে সিসি ফুটেজে হাত ধরে বের হওয়া যুবকের সঙ্গে তার প্রেমের সম্পর্ক ছিল। এছাড়াও সুবার বাবা থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করার সময় মেয়ে এবং ছেলের মেসেঞ্জারে কথোপকথনের স্ক্রিনশট প্রিন্ট করে সংযুক্ত করে দিয়েছিলেন। তবে সুবার বয়স ১১ বছর দাবি করলেও তার জন্মনিবন্ধন বা স্কুলের কোনো কাগজপত্র থানায় দেওয়া হয়নি।
এ বিষয়ে তেজগাঁও বিভাগের অতিরিক্ত উপপুলিশ কমিশনার (এডিসি) জুয়েল রানা বলেন, ‘নিখোঁজ সুবাকে তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তায় নওগাঁ সদর এলাকা থেকে ইতোমধ্যে উদ্ধার করা হয়েছে। ঘটনাস্থলে আমাদের টিমের সঙ্গে নওগাঁ সদর থানার ওসি গিয়ে তাকে উদ্ধার করেছেন। এখন সে ঢাকার পথে আছে। আদাবর থানায় পৌঁছানোর পর আমরা তাকে পরিবারের কাছে হস্তান্তর করব।’
তিনি আরও বলেন, ‘এটি কোনো অপহরণের ঘটনা নয়। সিসিটিভি ফুটেজে দেখা যায়, সে নিজ ইচ্ছায় চলে গেছে। ওই কিশোরী যে ছেলের সঙ্গে গেছে, সে তার পূর্বপরিচিত এবং তাদের মধ্যে সম্পর্ক রয়েছে। এ ঘটনায় ভুক্তভোগীর পরিবার আইনি যে ব্যবস্থা নেবে, সে অনুযায়ী আমরা কাজ করব।’