Logo
Logo
×

শেষ পাতা

ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচন: ফরিদপুর-৪

মাঠে বিএনপির দুই প্রার্থী চূড়ান্ত হয়নি জামায়াতের

Icon

জাহিদ রিপন, ফরিদপুর

প্রকাশ: ০৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

মাঠে বিএনপির দুই প্রার্থী চূড়ান্ত হয়নি জামায়াতের

সদরপুর, চরভদ্রাসন, ভাঙ্গা ও কৃষ্ণপুরের একাংশ নিয়ে ফরিদপুর-৪ আসন। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দিনক্ষণ ঠিক না হলেও এ আসনে বিএনপির দুই প্রার্থী মনোনয়ন পেতে কোমর বেঁধে নেমেছেন। আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর বিএনপি-জামায়াতের নেতাকর্মীরা এলাকায় তাদের উপস্থিতি জানান দিচ্ছেন।

তবে জামায়াতের প্রার্থীর নাম ঘোষণা না হলেও নেতাকর্মীরা বেশ তৎপর রয়েছেন। রাজনৈতিক নানা কর্মসূচিতে যোগদানের পাশাপাশি এলাকায় শীতবস্ত্র বিতরণ, ওয়াজ-মাহফিল, ক্রীড়া ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে অতিথি হয়ে কৌশলে প্রাচার চালাচ্ছেন। এছাড়া যারা জুলাই আন্দোলনে শহিদ কিংবা আহত হয়েছেন, তাদের বাড়িতে গিয়ে বিএনপি ও জামায়াতের নেতাকর্মীরা খোঁজখবর নিচ্ছেন। তাদের আর্থিকভাবে সহযোগিতাও করছেন।

নিজ নিজ নির্বাচনি এলাকায় বেশির ভাগ সময় ব্যয় করছেন নানা সামাজিক কাজে। অবশ্য আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীর কোনো সাংগঠনিক তৎপরতা ফরিদপুরের কোনো নির্বাচনি এলাকায় নেই।

এ আসনের মোট ভোটার ৪ লাখ ৮৮ হাজার ৮৫৬ জন। আগামী নির্বাচনে এ আসন থেকে মনোনয়নপ্রত্যাশীদের মধ্যে রয়েছেন ফরিদপুর জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক, কেন্দ্রীয় আইনজীবী ফোরামের ফরিদপুর বিভাগীয় সহসভাপতি, জেলা আইনজীবী সমিতির পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) অ্যাডভোকেট আলী আশরাফ নান্নু এবং ভাঙ্গা উপজেলা বিএনপির সভাপতি খন্দকার ইকবাল হোসেন সেলিম। তবে জামায়াতে ইসলামী তাদের প্রার্থীর নাম এখনো ঘোষণা করেনি। আগামী দুই এক সপ্তাহের মধ্যে নাম ঘোষণা হতে পারে বলে দলীয় সূত্রে জানা গেছে।

জানা যায়, ১৯৯১ সালে অনুষ্ঠিত পঞ্চম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী অ্যাডভোকেট মোশারফ হোসেন এ আসনে বিজয়ী হন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন বিএনপির চৌধুরী আকমল ইবনে ইউসুফ। ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি ষষ্ঠ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপির চৌধুরী আকমল ইবনে ইউসুফকে বিজয়ী ঘোষণা করা হয়। ১৯৯৬ সালের ১২ জুন সপ্তম সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের অ্যাডভোকেট মোশারফ হোসেন বিজয়ী হন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন বিএনপির চৌধুরী আকমল ইবনে ইউসুফ।

২০০১ সালের পহেলা অক্টোবর অষ্টম সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের আব্দুর রাজ্জাক বিজয়ী হন। ২০০২ সালে আব্দুর রাজ্জাক মারা গেলে উপনির্বাচনে বিএনপির চৌধুরী আকমল ইবনে ইউসুফ সংসদ-সদস্য নির্বাচিত হন। ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত নবম সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য কাজী জাফর উল্লাহর সহধর্মিণী নিলুফার জাফর উল্লাহ বিজয়ী হন।

২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী ঘরানার স্বতন্ত্র প্রার্থী ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের দৌহিত্র মজিবুর রহমান চৌধুরী নিক্সন বিজয়ী হন। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোট ওই নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেনি। ২০১৮ সালে অনুষ্ঠিত একাদশ সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ, বিএনপি, ইসলামী আন্দোলন, সিপিবির মোট ৫ জন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন।

এ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ প্রার্থী কাজী জাফরউল্লাহকে হারিয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী ও বঙ্গবন্ধুর দৌহিত্র এবং আওয়ামী যুবলীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য মজিবুর রহমান চৌধুরী নিক্সন বিজয়ী হন। কারচুপির অভিযোগে বিএনপি নেতৃত্বাধীন জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট নির্বাচন বর্জন ও ফলাফল প্রত্যাখ্যান করে।

পর্যবেক্ষণে দেখা যায়, এ আসনে ষষ্ঠ সংসদে বিএনপি, পঞ্চম, সপ্তম, অষ্টম ও নবম সংসদে আওয়ামী লীগ এবং দশম ও একাদশ সংসদে আওয়ামী ঘরানার স্বতন্ত্র প্রার্থী বিজয়ী হন। তাই আসনটি আওয়ামী লীগের ঘাঁটি হিসাবে পরিচিত। এ আসনের তিনটি উপজেলার মধ্যে ভাঙ্গা ও সদরপুরে আওয়ামী লীগ, অন্যদিকে চরভদ্রাসন উপজেলায় বিএনপির ভোট বেশি। তবে এক দশক ধরে এ আসনে আওয়ামী লীগের দলীয় কোন্দল চরমে পৌঁছেছে। ফলে বিএনপি সুবিধাজনক অবস্থানে রয়েছে। তাছাড়া এখানে বিএনপিতে তেমন অন্তর্দ্বন্দ্বও নেই।

মনোনয়নপ্রত্যাশী অ্যাডভোকেট আলী আশরাফ নান্নু যুগান্তরকে বলেন, প্রায় তিন যুগের বেশি দলের জন্য কাজ করে নেতাকর্মীদের পাশে থেকেছি। আওয়ামী দুঃশাসনের সময় মামলা-হামলার শিকার হয়েছি। এ সময় দলের যারা মামলার শিকার হয়েছেন, তাদের বিনা খরচে মামলার বিষয়ে সহযোগিতা করেছি। এখানে আওয়ামী লীগের দুঃশাসনে মানুষ অতিষ্ঠ। তারা পরিবর্তন চায়। আমি ভাঙ্গা উপজেলার সন্তান হিসাবে এবং দলের দুঃসময়ে যেভাবে মানুষের জন্য কাজ করেছি, সেই মূল্যায়ন থেকে দলের কাছে মনোনয়ন প্রত্যাশা করি।

অন্যদিকে খন্দকার ইকবাল হোসেন সেলিম বলেন, আমি বিএনপির তৃণমূল নেতাকর্মীদের ভাঙ্গা উপজেলায় সুসংগঠিত করেছি। ২০১৮ সালের সংসদ নির্বাচনে ১৮ জন প্রার্থীর মধ্যে বিএনপি আমাকে মনোনয়ন দিলে প্রার্থী হই। কিন্তু আওয়ামী লীগের ব্যাপক কারচুপির কারণে বিজয়ী হতে পারিনি। তারপরও ৯০টি কেন্দ্রের মধ্যে ৩৯টিতে প্রথম হয়ে ৩০ হাজারের বেশি ভোট পেয়েছিলাম। আওয়ামী লীগ আমলে অনেক মামলা-হামলার শিকার হয়েছি। আমার খন্দকার টাওয়ারের পার্টি অফিস ভাঙচুর করা হয়েছে। ঢাকার গার্মেন্টে এবং ব্যবসায়িকভাবে ব্যাপক ক্ষতি করে আমাকে পঙ্গু করে দেওয়ার চেষ্টা চালিয়েছে। আমি মনে করি, দলের জন্য যেভাবে কাজ করেছি, এর মূল্যায়ন হবে।

ফরিদপুর জেলা জামায়াতে ইসলামীর সাবেক আমির প্রফেসর আব্দুত তাওয়াব বলেন, ফরিদপুর-৪ আসনে এখনো জামায়াতের প্রার্থী চূড়ান্ত হয়নি। দলের নীতিনির্ধারণী মহলের ভোট ও মতামতের ভিত্তিতে শিগ্গিরই প্রার্থীর নাম ঘোষণা করা হবে।

ঘটনাপ্রবাহ: ত্রয়োদশ জাতীয় নির্বাচন


আরও পড়ুন

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম