Logo
Logo
×

শেষ পাতা

ময়মনসিংহ গীতিকার নরসুন্দা নদী

শতকোটি টাকা পানিতে

Icon

এটিএম নিজাম, কিশোরগঞ্জ

প্রকাশ: ০৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

শতকোটি টাকা পানিতে

অযত্ন-অবহেলা ও অব্যবস্থাপনায় কিশোরগঞ্জ শহরের মাঝ দিয়ে প্রবাহিত এককালের স্রোতঃস্বিনী নরসুন্দা নদী এখন দখল-দূষণ অস্তিত্ব সংকটে পড়েছে। একশ্রেণির অপরিণামদর্শী লোকজন এ নদীতে ময়লা-আবর্জনা ফেলে ভরাট করে ফেলছেন। দ্রুত খননকাজের পাশাপাশি অবৈধ দখলমুক্ত করে নদীটিকে রক্ষার আকুতি পরিবেশবাদী সংগঠন ও সাধারণ মানুষের। এমন অবর্ণনীয় দশা কাটিয়ে স্বপ্নের পরিবেশ বাস্তবায়নে আশার বাণী শুনিয়েছে পানি উন্নয়ন বোর্ড।

জানা গেছে, কিশোরগঞ্জের হোসেনপুর ও ময়মনসিংহের গফরগাঁও উপজেলার মধ্যবর্তী স্থান দিয়ে প্রবাহিত ব্রহ্মপুত্র নদ থেকে নরসুন্দা নদীর উৎপত্তি। নদীটি হোসেনপুর থেকে কিশোরগঞ্জ শহরের মাঝপথ দিয়ে করিমগঞ্জ উপজেলার ওপর দিয়ে ৯৭ কিলোমিটার পথ বহমান থেকে করিমগঞ্জে গিয়ে ধনু নদীতে গিয়ে পড়েছে। এ নদীটির তীরে এক সময় গড়ে ওঠে প্রাচীন ও ইতিহাস-ঐতিহ্যে সমৃদ্ধ জনপদ কিশোরগঞ্জের নগর-সভ্যতা। এ নদীর নাম ময়মনসিংহ গীতিকায়ও রয়েছে।

স্বাধীনতা উত্তর আশির দশক পর্যন্ত নরসুন্দা নদীতে ছোট-বড় নৌযান চলাচল করে। বাণিজ্য পরিবহণ ও যোগাযোগ এমনকি পরিবেশ-প্রতিবেশ রক্ষার ক্ষেত্রে কিশোরগঞ্জবাসীর সামনে স্রোতঃস্বিনী থেকে অসামান্য অবদান রেখে আসছিল এই নদী। কিন্তু; নব্বই দশকের শুরু থেকে অপরিণামদর্শী লোকজনের লোলুপ দৃষ্টির শিকার হয় নরসুন্দা নদী। অবশ্য, পরিবেশবাদী লোকজনের দাবি ও আন্দোলনের মুখে সরকার ২০১২ সালে ১০৬ কোটি টাকার নরসুন্দা নদী খনন ও সৌন্দর্যবর্ধন প্রকল্প হাতে নেয়। অনেক বাধাবিপত্তি পেরিয়ে ২০১৬ সালে এ প্রকল্পের কাজ শেষ হয়। মর্যাদা পায় নরসুন্দা লেকসিটির। নদী দখলবাজদের চিহ্নিত করে অভিযানও শুরু হয়। তবে, সে উদ্যোগ বেশিদিন স্থায়ী হয়নি। কিছুদিনের মধ্যেই সে অভিযান থমকে দাঁড়ায়।

আর এ সুযোগে নতুন করে সক্রিয় হয়ে ওঠে নদীখেকো চক্রের লোকজন। মাটি-আবর্জনা ফেলে ভরাট করে স্থাপনা নির্মাণ ও অবৈধভাবে বাঁধ দিয়ে মাছচাষের ফিশারি তৈরি করা হয়। এতে কিছুদিনের মধ্যেই ম্লান হয়ে পড়ে নরসুন্দা নদী খনন ও সৌন্দর্যবর্ধন প্রকল্পের নান্দনিক সব আয়োজন এবং লেকসিটির তকমা। স্থানে স্থানে নদী পরিণত হয়েছে মরা খালে। এমন দশায় আষাঢ় মাসে ভরা বর্ষায়ও মরা খালের দশায় নিপতিত কিশোরগঞ্জবাসীর এক কালের আশীর্বাদ স্রোতস্বিনী নরসুন্দা নদী।

কিশোরগঞ্জ পানি উন্নয়ন বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলীর কার্যালয় যুগান্তরকে জানায়, হোসেনপুরে উৎস পথ ব্রহ্মপুত্র নদ থেকে করিমগঞ্জ উপজেলার ধনু নদী পর্যন্ত ৯৭ কিলোমিটার দীর্ঘ নরসুন্দা নদীপথ খননের পাশাপাশি দুই পাশে ওয়াকওয়ে তৈরি ও তীর বাঁধাইয়ের পরিকল্পনা এবং সমীক্ষার কাজ শেষ পর্যায়ে। এই সমীক্ষার ভিত্তিতে খুব শিগগির প্রকল্প প্রস্তাব দাখিল করা হবে। আর ওই প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হলে নরসুন্দা নদীতে পানি প্রবাহ ফিরে আসবে।

বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের (বাপা) কিশোরগঞ্জ শাখার সাধারণ সম্পাদক মো. সাইফুল ইসলাম জুয়েল বলেন, আশির দশকের দিকে হোসেনপুরের কাওনা এলাকায় একটি অপরিকল্পিত বাঁধ নির্মাণ করা হয়। এতে এককালের স্রোতস্বিনী নরসুন্দা নদীর প্রাণ প্রবাহ বলতে গেলে বন্ধ হয়ে যায়। তারপর থেকেই মৃত্যু দশায় নিপতিত হতে থাকে নদীটি। শুকনো মৌসুমে এখন নরসুন্দায় পানি নেই। ভরা মৌসুমে নেই প্রবাহ। নদীটিকে রক্ষা করতে হলে উৎসমুখে কাওনার বাঁধ খুলে দিতে হবে ও ব্রহ্মপুত্র নদের সঙ্গে সংযোগ পুনঃস্থাপন করতে হবে। তিনি আরও বলেন, সিএস মূলে নদীর সীমানা নির্ধারণ করে সঠিক স্থানে পিলার স্থাপন করতে হবে। আংশিক নয়, সম্পূর্ণ নরসুন্দা খনন করতে হবে। ইতঃপূর্বে নরসুন্দার ওই খনন কাজে ব্যাপক দুর্নীতির তদন্ত করে সংশ্লিষ্টদের বিচারের আওতায় আনতে হবে।

কিশোরগঞ্জ পানি উন্নয়ন বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. সাজ্জাদ হোসেন বলেন, নরসুন্দা নিয়ে পরিকল্পনা ও সমীক্ষার কাজ চলমান রয়েছে। এই সমীক্ষার ভিত্তিতে খুব শিগগির প্রকল্প প্রস্তাব দাখিল করা হবে। আর ওই প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে নরসুন্দা নদীতে পানির প্রবাহ ফিরে আসবে।

Jamuna Electronics
wholesaleclub

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম