Logo
Logo
×

শেষ পাতা

সংলাপে ড. বদিউল আলম মজুমদার

ইসি সম্পূর্ণরূপে নির্বাহী বিভাগের আজ্ঞাবহ

গণতান্ত্রিক পুনর্গঠন করতে হলে নিয়োগ পদ্ধতি বদলাতে হবে, আইনকানুন পরিবর্তন করতে হবে

Icon

যুগান্তর প্রতিবেদন

প্রকাশ: ৩১ জানুয়ারি ২০২৫, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

ইসি সম্পূর্ণরূপে নির্বাহী বিভাগের আজ্ঞাবহ

ফাইল ছবি

নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের প্রধান ও সুশাসনের জন্য নাগরিক-সুজন সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার বলেছেন, নির্বাচন কমিশন স্বাধীন সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান। কিন্তু আমার কাছে মনে হয়, এটি আজ্ঞাবহ প্রতিষ্ঠান। এই কমিশন বিদ্যমান আইন অনুযায়ী সম্পূর্ণরূপে নির্বাহী বিভাগের ওপর নির্ভরশীল। নির্বাহী বিভাগের আজ্ঞাবহ। তারা (নির্বাচন কমিশন) যে কোনো বাজেটের প্রস্তাব দেবে, সেটা যাবে অর্থ মন্ত্রণালয়ে। অর্থ মন্ত্রণালয় এখানে শেষ কথা। তারা (নির্বাচন কমিশন) যে আইনকানুনের প্রস্তাবনা দেয় সেগুলো যায় আইন মন্ত্রণালয়ে। আইন মন্ত্রণালয় চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়। তাহলে কি তাদের স্বাধীনতা আছে? তারা তো পুরোপুরি নির্বাহী বিভাগের আজ্ঞাবহ। রাজধানীর বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ইন্টারন্যাশনাল অ্যান্ড স্ট্রাটেজিক স্টাডিজ (বিআইআইএসএস) মিলনায়তনে বৃহস্পতিবার এক অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন।

‘গণতান্ত্রিক পুনর্গঠনের জন্য সংলাপ-সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান প্রসঙ্গ’ শীর্ষক সংলাপের আয়োজন করে সেন্টার ফর গভর্ন্যান্স স্টাডিজের (সিজিএস)। সভাপতিত্ব করেন সিজিএসের চেয়ার মুনিরা খান। সঞ্চলনা করেন সংগঠনের নির্বাহী পরিচালক জিল্লুর রহমান। অনুষ্ঠানে বদিউল আলম বলেন, মানুষ শুধু শেখ হাসিনাকেই বিতাড়িত করতে চায়নি, তার যে পদ্ধতি-প্রক্রিয়াসহ যা কিছু রিপ্রেজেন্ট করেছিল তারই অবসান চেয়েছিল। তার জন্য আমি মনে করি, একটা ডাবল আকাঙ্ক্ষা ছিল যে কতগুলো গভীর সংস্কার। যার মাধ্যমে এর যেন পুনরাবৃত্তি না ঘটে। আরেকটা ছিল যারা এসব অন্যায় করেছে, তার বিচার হওয়া। তিনি বলেন, এখন সংস্কার কিভাবে হবে সেটা ভিন্ন বিতর্ক। এই সরকার করবে না পরবর্তী সরকার করবে, নাকি তারা মিলেমিশে করবে সেটা ভিন্ন। কিন্তু আমার মনে হয়, মানুষের মধ্যে পরিবর্তনের এই আকাঙ্ক্ষা সেটা গভীরে পতিত এবং আমার মনে হয় না এ নিয়ে সন্দেহ করার কোনো কারণ আছে।

বদিউল আলম মজুমদার বলেন, আমরা সংসদে ১০০টি আসন নারীদের জন্য সংরক্ষণের প্রস্তাব দিয়েছি, যেন নারীরা বৈষম্যের স্বীকার না হন। নারীরা যদি রাজনীতিতে সক্রিয় থাকেন তাহলে বৈষম্য কমে আসবে। তিনি আরও বলেন, সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানে যেভাবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে, তা ত্রুটিপূর্ণ। এজন্যই নিয়মকানুন ও সংস্কার দরকার এবং নতুন আইনের খসড়া দরকার। গণতান্ত্রিক পুনর্গঠন করতে হলে নিয়োগ পদ্ধতি বদলাতে হবে, আইনকানুন পরিবর্তন করতে হবে।

জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সাবেক চেয়ারম্যান ড. মোহাম্মদ আব্দুল মজিদ বলেন, আমরা স্ববিরোধিতায় সংকুচিত হচ্ছি। স্ববিরোধিতা থেকে বের হয়ে আসতে হবে। সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানের নিয়োগ নিয়মতান্ত্রিক হতে হবে। রাষ্ট্র ও সরকারের মধ্যে পার্থক্য নিশ্চিত করতে হবে। রাষ্ট্র যেন সরকারকে দখল না করে বা সরকার যেন রাষ্ট্রকে দখল না করে। তিনি আরও বলেন, বৈষম্যবিরোধী বাংলাদেশ আমাদের সবার প্রত্যাশা। এ সময় ন্যায়পাল প্রতিষ্ঠা হওয়া দরকার বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

সাবেক রাষ্ট্রদূত এম শফিউল্লাহ বলেন, আমরা দেখেছি যে, প্রধানমন্ত্রী রাষ্ট্রপতিকে নিয়োগ দিয়ে থাকেন। রাষ্ট্রপতিকে জনগণ নিয়োগ দেবে। তাহলে রাষ্ট্রপতি রাজনৈতিক নিয়ন্ত্রণ থেকে মুক্ত হবে।

বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) নির্বাহী পরিচালক ড. ফাহমিদা খাতুন বলেন, সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানগুলো গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য গুরুত্বপূর্ণ। এই প্রতিষ্ঠানগুলো শক্তিশালী করলে গণতন্ত্র শক্তিশালী হবে। জুলাই-আগস্ট আন্দোলন হয়েছে অর্থনীতির জন্য, চাকরির জন্য। সংস্কার করে পরে ক্ষমতা হস্তান্তর করা সম্ভব নয়। তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নিয়ে মানুষের মধ্যে স্বস্তি আনতে হবে। আমাদের বৈদেশিক বিনিয়োগের পরিবেশ নেই। তিনি আরও বলেন, বছরের পর বছর অর্থনৈতিক প্রতিষ্ঠানগুলো নষ্ট করে দিয়েছে। এত সংস্কার করার পর নির্বাচিত সরকার যদি তা না মেনে নেয় তাহলে জনগণ আবার অসহায় হয়ে পড়বে।

বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা জহির উদ্দিন স্বপন বলেন, প্রতিটি বিষয়ে সংলাপ করার সময় মাথায় রাখতে হবে যে, এর যে নির্যাস, তা কাজে লাগানোর জন্য যে কর্তৃত্ব সেটা যদি অন্তর্বর্তীকালীন সরকার যথাযথভাবে সব স্টেকহোল্ডারদের সঙ্গে নিয়ে না চলতে পারে তাহলে হবে না। তবে আশার কথা হচ্ছে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার এ বিষয়ে তুলনামূলকভাবে সজাগ। তিনি আরও বলেন, একতরফা প্রক্লেমেশন, অমুক দাবি, তমুক দাবি-এগুলোতে অন্তর্বর্তী সরকার গা ভাসিয়ে দেয়নি। আমি ড. ইউনূস সাহেবকে ধন্যবাদ জানাই। তিনি বিএনপিসহ সব রাজনৈতিক দলের সঙ্গে কথা বলেছেন। গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক জোনায়েদ সাকি বলেন, যে প্রস্তাবনাগুলো তৈরি হচ্ছে, এর অনেকগুলোর সঙ্গে আমাদের দ্বিমত আছে। অনেক কিছুর সঙ্গে আবার আমরা ঐকমত্য পোষণ করি। আমাদের অনেক প্রস্তাব গ্রহণ করা হয়েছে। সেগুলো নিয়ে আমরা আলোচনা করব। সেখান থেকে একটা মিনিমাম চার্টার তৈরি হবে।

আমার বাংলাদেশ (এবি) পার্টির চেয়ারম্যান মজিবুর রহমান মঞ্জু বলেন, ৫৩ বছরে আমাদের সংবিধান ১৭ বার পরিবর্তন করা হয়েছে। ২৫০ বছরে আমেরিকাতে সংবিধানে তেমন পরিবর্তন আসেনি। সংস্কার কখনোই করা যায়নি আমাদের দেশে, দলের মধ্যেও না। সবকিছু ভেঙে আবার নতুন করে গড়ে তোলা দরকার। এর জন্য দরকার সম্মিলিত প্রচেষ্টা। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক ডা. জাহেদ উর রহমান বলেন, অনেকেই অভিযোগ করেন বিএনপি সংস্কার করতে চাইছে না। আওয়ামী লীগ তো নেই, পালিয়ে গেছে। ছাত্ররা একটা দল করছে, তারা সংস্কারকেই তাদের মূল ম্যানিফেস্টো করুক। তারা কি কি রিফর্ম করতে চায়, সেগুলো মানুষের সামনে আনুক। মানুষ যদি মনে করে বিএনপি সংস্কার চায় না আমি ছাত্রদের ভোট দেব, তারা আসুক, এসে তাদের সংস্কার করুক। আমি মনে করি সংস্কারের ‘ট্যু আর্জ’ মানুষের মধ্যে ঢুকে তাহলে বিএনপিও তা ইগনোর করতে পারবে না।

সিনিয়র সাংবাদিক মাসুদ কামাল বলেন, পরিবর্তন হতে হবে মনস্তাত্ত্বিক জগতে। আইন যারা বানায় তারাই যদি আইন ভাঙে তাহলে সঠিকভাবে আইনের প্রয়োগ হয় না। সরকার শপথ নেওয়ার সময় বলে সংবিধান মেনে চলবে কিন্তু ১০ মিনিট পরেই বলে যে, সে সংবিধান মানে না।

প্রথম আলোর যুগ্ম সম্পাদক সোহরাব হোসেন বলেন, মানুষ পরিবর্তন না হলে প্রতিষ্ঠান পরিবর্তন হবে না। প্রতিষ্ঠান পরিবর্তন না হলে মানুষ পরিবর্তন হবে না। শেখ হাসিনা গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় বাধা দিয়েছে, তাই তার পতন হয়েছে। সরকার ও বিরোধী দলের মধ্যে ঐকমত্য থাকতে হবে।

সেমিনারে আরও বক্তব্য রাখেন সিনিয়র সাংবাদিক আবু সাঈদ খান, গণফোরামের নির্বাহী সভাপতি অ্যাডভোকেট সুব্রত চৌধুরী, সাবেক জেলা জজ ইকতেদার আহমেদ, প্রফেসর ড. নাজমুল আহসান কলিমুল্লাহ, বাংলাদেশ রিকন্ডিশন্ড ভেহিকল্স ইমপোর্টার্স অ্যান্ড ডিলার্স অ্যাসোসিয়েশন- বার্বিদা প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান আব্দুল হক, ইস্ট ওয়েস্ট ইউনিভার্সিটির সহকারী প্রফেসর পারভেজ করিম আব্বাসী, সিনিয়র সাংবাদিক এমএ আজিজ, সুপ্রিমকোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার শিহাব উদ্দিন খান, ছাত্র প্রতিনিধি মুনমুন মাহজাবীন, মুহাম্মদ খালিদ খান প্রমুখ।

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম