অর্থনৈতিক শুমারি প্রতিবেদন প্রকাশ
শিক্ষকদের সঞ্চয় ৬ হাজার কোটি টাকা গায়েব
যুগান্তর প্রতিবেদন
প্রকাশ: ৩০ জানুয়ারি ২০২৫, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
ড. ওয়াহিদ উদ্দিন মাহমুদ
এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের জমানো ৬ হাজার কোটি টাকা যে ব্যাংকে রাখা হয়েছিল সেটি দেউলিয়া হওয়ায় তাদের সঞ্চয়ের কোনো টাকাই এখন আর নেই। শিক্ষকদের কষ্টার্জিত টাকা ব্যাংকটিতে রাখা হয়েছিল। পরস্পর যোগসাজশে এটি করা হয়। এই (৬ হাজার কোটি) টাকা কম নয়। এই অর্থ হলে আমরা শিক্ষকদের পেনশনসহ সব দায়দেনা মেটাতে পারতাম। বুধবার অর্থনৈতিক শুমারি ২০২৪-এর প্রাথমিক প্রতিবেদন প্রকাশ অনুষ্ঠানে এই তথ্য জানান পরিকল্পনা ও শিক্ষা উপদেষ্টা ড. ওয়াহিদ উদ্দিন মাহমুদ। আগারগাঁওয়ে বাংলাদেশ পরিসংখ্যা ব্যুরোর (বিবিএস) সম্মেলন কক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসাবে উপস্থিত ছিলেন তিনি।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) জরিপে উঠে আসে, দেশে গত ১১ বছরে অর্থনৈতিক ইউনিট বেড়েছে ৪০ লাখ ৫৮ হাজার ৭৯৯টি। ২০২৪ সালে সারা দেশে মোট অর্থনৈতিক ইউনিটের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে এক কোটি ১৮ লাখ ৭৭ হাজার ৩৬৪টি। এর মধ্যে স্থায়ী হচ্ছে ৬২ লাখ ৮৮ হাজার ২১৪টি, অস্থায়ী ৫ লাখ ৭৬ হাজার ৬২১টি এবং অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে নিয়োজিত পরিবারের সংখ্যা ৫০ লাখ ১২ হাজার ৫২৯টি। ২০১৩ সালে মোট অর্থনৈতিক ইউনিট ছিল ৭৮ লাখ ১৮ হাজার ৫৬৫টি। এর মধ্যে স্থায়ী ৪৫ লাখ ১৪ হাজার ৯১টি, অস্থায়ী ৪ লাখ ৮২ হাজার ৯০৩ এবং অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে নিয়োজিত পরিবার ছিল ২৮ লাখ ২১ হাজার ৫৭১টি।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন অর্থনৈতিকসংক্রান্ত টাস্কফোর্সের সভাপতি ড. কেএএস মুর্শিদ। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর মহাপরিচালক মোহাম্মদ মিজানুর রহমান। বক্তব্য রাখেন প্রকল্পটির প্রকল্প পরিচালক এসএম শাকিল আখতার এবং পরিসংখ্যান ও তথ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের যুগ্ম সচিব ড. দীপঙ্কর রায়।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে ড. ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ বলেন, জরিপে দেখা গেল গ্রামে উদ্যোক্তা সবচেয়ে বেশি। এদের মধ্যে ৮৬ শতাংশই বলেছেন তাদের মূলধন নেই। তারা ঋণ পাচ্ছেন না, সামান্য মূলধন যোগান দিতে পারছে না। অথচ শহরে হাজার হাজার কোটি টাকা ব্যাংক থেকে চলে যাচ্ছে। কোনো কোনো ব্যাংকে কিছুই নেই। আছে খালি প্রতিষ্ঠান। অনেক সময় হিসাবও করা যাচ্ছে না। অনেক প্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। বিশেষ করে যারা রাতারাতি প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেছিলেন। হঠাৎ বড় হওয়া এসব প্রতিষ্ঠানের আছে শুধু লোন আর লোন। আমি বেক্সিমকোর কথা বলছি। সরকার শ্রমিকদের বেতন দিচ্ছে। কিন্তু প্রতিষ্ঠান চালানোর মতো কিছুই নেই। নিদারুণ কষ্টের কথা হলো, গ্রামের এত প্রতিষ্ঠান সামান্য মূলধনের জোগান পাচ্ছে না। শহরে রাতারাতি গড়ে উঠছে প্রতিষ্ঠান।
তিনি আরও বলেন, ভালো কথা হলো রেমিট্যান্স বাড়ছে। এই রেমিট্যান্স প্রবৃদ্ধি আশা জাগাচ্ছে। রেমিট্যান্সের অর্থ গ্রামে যাচ্ছে। ফলে সেখানে সেবা খাত চাঙা হচ্ছে। তিনি আরও বলেন, আগে পরিসংখ্যান তৈরিতে রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ ছিল। কিন্তু এখন সে পথ বন্ধ করা হচ্ছে। পরিসংখ্যান আইন সংশোধনের মাধ্যমে এটি করা হবে। এর আগেই আমি প্র্যাকটিস শুরু করেছি। জিডিপি প্রবৃদ্ধি, মূল্যস্ফীতিসহ বিভিন্ন তথ্য প্রকাশে এখনকার নিয়ম অনুযায়ী আমার স্বাক্ষর লাগে। আমি চোখ বন্ধ করে সই করে দিই। পরের দিন পত্র-পত্রিকায় দেখি কি তথ্য দিয়েছে বিবিএস। এছাড়া ডিজিটাল প্রযুক্তির এই সময়ে অন্তত ভুয়া তথ্য দেওয়ার সুযোগ নেই। কোনো লুকোচুরিও সম্ভব নয়।
বিবিএসের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দেশের মোট অর্থনৈতিক ইউনিটের মধ্যে শহরে রয়েছে ৫৫ লাখ ৩১ হাজার ২০৩টি। ১১ বছর আগে ছিল ২২ লাখ ২৯ হাজার ৫৪৬টি। এক্ষেত্রে ১১ বছরের ব্যবধানে ইউনিট বেড়েছে ১৩ লাখ এক হাজার ৬৫৭টি। এদিকে গ্রামে ২০২৪ সালের শুমারিতে অর্থনৈতিক ইউনিটের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৮৩ লাখ ৪৬ হাজার ১৬১টি। ২০২৩ সালের জরিপে ছিল ৫৫ লাখ ৮৯ হাজার ১৯টি। এক্ষেত্রে বেড়েছে ২৮ লাখ ৫৭ হাজার ১৪২টি। অর্থনৈতিক ইউনিটের বৃদ্ধি শহরের চেয়ে গ্রামে বেশি হারে বেড়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মোট অর্থনৈতিক ইউনিটের মাত্র ৮ দশমিক ৭৭ ভাগ শিল্প খাতের। বাকিগুলো সেবা খাতের ইউনিট। ৯৩ দশমিক ৫৩ ভাগ বা এক কোটি ১১ লাখ ৯ হাজার ২টি ইউনিটের পরিচালিত হয় পুরুষদের মাধ্যমে। নারী পরিচালক রয়েছেন ৭ লাখ ৬৮ হাজার ৪২টি ইউনিটে। হিজড়া ৩২০টি অর্থনৈতিক ইউনিট পরিচালনা করছে। দেশের অর্থনৈতিক ইউনিটগুলোতে কাজ করছে ৩ কোটি ৭ লাখ ৬১ হাজার ৩৪ জন। যার মধ্যে ৫৬ দশমিক ৮২ ভাগ গ্রামীণ। এর আগে ২০১৩ সালে করা অর্থনৈতিক শুমারিতে মোট ইউনিট ছিল ৭৮ লাখ ১৮ হাজার ৫৬৫টি।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, উৎপাদনশীল খাতে প্রবৃদ্ধি যথেষ্ট কম। অপরপক্ষে সেবা খাতের ব্যাপক প্রবৃদ্ধি ঘটেছে। মোট অর্থনৈতিক ইউনিটের মধ্যে ৯১ শতাংশ সেবা খাত প্রাধান্য বিস্তার লাভ করেছে। এছাড়া কর্মসংস্থানে মহিলাদের সংখ্যা কমেছে। ব্যবসা-বাণিজ্যের ক্ষেত্রে প্রধান যেসব চ্যালেঞ্জ রয়েছে সেগুলোর মধ্যে প্রধান হলো পুঁজির সমস্যা। এছাড়া ঋণ প্রাপ্তির কম সুযোগ, অবকাঠামোগত সমস্যা, উৎপাদন ব্যয় বৃদ্ধি, দক্ষ জনশক্তির অভাব, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি সংকট, বাজার ব্যবস্থাপনার সমস্যা এবং কাঁচামালের অপ্রতুলতা ইত্যাদি।