Logo
Logo
×

শেষ পাতা

দলে দলে আসছেন মুসল্লিরা

বিশ্ব ইজতেমা শুরু কাল

Icon

টঙ্গী পশ্চিম, পূর্ব ও শিল্পাঞ্চল (গাজীপুর) প্রতিনিধি

প্রকাশ: ৩০ জানুয়ারি ২০২৫, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

বিশ্ব ইজতেমা শুরু কাল

ফাইল ছবি

টঙ্গীর তুরাগ তীরে কাল বাদ ফজর আম বয়ানের মধ্য দিয়ে শুরু হচ্ছে বিশ্ব তাবলিগ জামাতের ৫৮তম বিশ্ব ইজতেমা। এবারই প্রথম তিন পর্বে হবে ইজতেমা। প্রথম দুটি-কাল থেকে ২ ফেব্রুয়ারি এবং ৩ থেকে ৫ ফেব্রুয়ারি শুরায়ি নেজাম বা জুবায়েরপন্থিদের। তৃতীয় পর্বে ১৪ থেকে ১৬ ফেব্রুয়ারি ইজতেমা করবেন সাদপন্থিরা। প্রতিটি পর্বেই আলাদা মোনাজাত হবে। 

এদিকে ইজতেমা উপলক্ষ্যে শিল্পনগরী টঙ্গী সেজেছে নতুন সাজে। বুধবার থেকেই মুসল্লিদের পদচারণায় মুখর হয়ে উঠেছে ময়দান। দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চল ও বিদেশ থেকে আসা ধর্মপ্রাণ মানুষ নিজ নিজ খিত্তায় অবস্থান নিচ্ছেন। আনুষ্ঠানিকভাবে কাল ইজতেমা শুরু হলেও আজ ফজর থেকেই শুরু হয়েছে বয়ান। ইজতেমা ময়দান ও আশপাশের এলাকায় নিরাপত্তাব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে। বুধবার ময়দান পরিদর্শন করে পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) বাহারুল আলম বলেন, ইজতেমার নিরাপত্তাব্যবস্থা আগের চেয়ে অনেক উন্নত ও সুদৃঢ় হয়েছে।

সংশ্লিষ্টরা জানান, ইজতেমার সব প্রস্তুতি শেষ হয়েছে। ময়দানে মুসল্লিদের অবাধ প্রবেশ নিশ্চিত করতে সেনাবাহিনীর ইঞ্জিনিয়ারিং কোরের সদস্যরা তুরাগ নদে ৫টি ও বিআইডব্লিউটিএ ১টি ভাসমান পন্টুন সেতু নির্মাণ করেছে। ১৬০ একর জমির ওপর নির্মিত সুবিশাল প্যান্ডেলের কাজ, খুঁটিতে নম্বর প্লেট, খিত্তা নম্বর, জুড়নেওয়ালি জামাতের কামরা, মুকাব্বির মঞ্চ, বয়ান মঞ্চ, তাশকিল কামরা, বধির সাথিদের জন্য বিশেষ কামরা, পাহারা ও এস্তেকবালের (অভ্যর্থনা) জামাত তৈরি, হালকা নম্বর বসানোর কাজও শেষ হয়েছে। 

দেশ-বিদেশের মুসল্লিদের অবস্থান : হবিগঞ্জের বানিয়াচং থেকে জিম্মাদার মো. জামাল হোসেনের নেতৃত্বে ৪৫ জনের একটি জামাত বুধবার ময়দানে এসেছে। তিনি বলেন, দুনিয়া ও আখিরাতের কল্যাণের উদ্দেশ্যে এবং মহান আল্লাহকে রাজি-খুশি করানোর জন্যই এসেছি। আখেরি মোনাজাতের পর ময়দান ত্যাগ করব। পাকিস্তানের লাহোর থেকে এসে বিদেশি খিত্তায় অবস্থান নিয়েছে মোহাম্মদ হানিফ, মোহাম্মদ মোস্তাকসহ ৮ জনের একটি দল। তাদের একজন বলেন, আগেও কয়েকবার এসেছিলাম। আখেরি মোনাজাতের দিন পর্যন্ত ইবাদত-বন্দেগিতে মশগুল থাকব। 

নিরাপত্তা জোরদার : ইজতেমার নিরাপত্তায় ৬ হাজার পুলিশসহ র‌্যাব, সাদা পোশাকধারী বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার প্রায় ১০-১২ হাজার সদস্য মোতায়েন রয়েছে। র‌্যাবের কমিউনিকেশন উইং, পুলিশ ও গোয়েন্দা সংস্থার পক্ষ থেকে ১৭টি প্রবেশপথসহ গুরুত্বপূর্ণ স্থানে চার শতাধিক ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরা বসানো হয়েছে। এছাড়াও রয়েছে মেটাল ডিটেক্টর, নাইটভিশন গগল্স, বাইনোকুলার, বোম্ব ডিসপোজাল টিম, অ্যান্টি টেরোরিজম ইউনিট, ড্রোন ভিউ, হেলিকপ্টার-নৌ টহল ও স্ট্রাইকিং ফোর্স। বুধবার ইজতেমা ময়দান পরিদর্শন করেছেন পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) বাহারুল আলম। পরে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ইজতেমার নিরাপত্তাব্যবস্থা আগের চেয়ে অনেক উন্নত ও সুদৃঢ় হয়েছে। আমরা সবার সহযোগিতায় যে কোনো ধরনের নাশকতা মোকাবিলা করতে পারব। তিনি বলেন, ইজতেমা ময়দানে বিগত দিনের হত্যাকাণ্ডের বিষয়গুলো মাথায় রেখে পাঁচ স্তরের নিরাপত্তাবলয় গড়ে তোলা হয়েছে। 

আইজিপি বলেন, এবারের ইজতেমাটি অন্যরকম। কারণ, বিগত আন্দোলনে পুলিশের বিপুল পরিমাণ অস্ত্র খোয়া গেছে এবং দেশের অনেক জেলখানার অস্ত্র লুট হয়েছে। অনেক অস্ত্র এখনো উদ্ধার হয়নি। এবার পুরো ইজতেমা ময়দান ড্রোনের মাধ্যমে পর্যবেক্ষণে রাখা হচ্ছে। তিনি আরও বলেন, ইজতেমা ময়দানে বিগত দিনে অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটেছে, যা খুবই দুঃখজনক। তারপরও উভয় পক্ষ অত্যন্ত দায়িত্বশীলতার পরিচয় দিয়েছে। কোনো পক্ষের কোনো দ্বন্দ্ব বা মতবিরোধ নেই।

প্রথম পর্বে খিত্তাওয়ারি মুসল্লিদের অবস্থান : গাজীপুর (খিত্তা-১ ও ২), টঙ্গী (৩, ৪ ও ৬), ঢাকার ধামরাই (৫), গাইবান্দা (৭), ঢাকার মিরপুর (৮, ১৩), কাকরাইল (৯-১২, ২০ ও ২১), নাটের (১৪), মৌলভীবাজার (১৫), রাজশাহী (১৬), দোহার (১৭), ডেমরা (১৯), নড়াইল (২২), ঠাকুরগাঁও (২৩), লালমনিরহাট (২৪), নবাবগঞ্জ (২৫), নীলফামারী (২৬), দিনাজপুর (২৭), রংপুর (২৮), বগুড়া (২৯), নারায়ণগঞ্জ (৩০, ৩১), বরিশাল (৩২), ভোলা (৩৩, ৩৪), চুয়াডাঙ্গা (৩৫), কুষ্টিয়া (৩৬), যশোর (৩৭), মাগুরা (৩৮), বাগেরহাট (৩৯), সাতক্ষীরা (৪০), ময়মনসিংহ (৪১, ৪২ ও ৪৩), চট্টগ্রাম (৪৪ ও ৫৫), নেত্রকোনো (৪৫), শেরপুর (৪৬), ফরিদপুর (৪৭), হবিগঞ্জ (৪৮), সুনামগঞ্জ (৪৯), ফেনী (৫০), লক্ষ্মীপুর (৫১), চাঁদপুর (৫২), ব্রাহ্মণবাড়িয়া (৫৩), খুলনা (৫৪), পটুয়াখালী (৫৪/১), কুমিল্লা (৫৬ ও ৫৭), ঝিনাইদাহ (৫৮), চাঁপাইনবাবগঞ্জ (৫৯), পিরোজপুর (৬০), কুড়িগ্রাম (৬১), পঞ্চগড় (৬২), রাজবাড়ী (৬৩)। এ ছাড়া তুরাগ নদের পশ্চিম পাড়ে (১০১-১০৪) পর্যন্ত ৪টি খিত্তা বধির সাথিদের জন্য সংরক্ষিত রাখা হয়েছে। 

চিকিৎসাসেবা কার্যক্রম : মুসল্লিদের চিকিৎসাসেবায় ব্যাপক প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। টঙ্গী শহিদ আহসান উল্লাহ মাস্টার জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক আফজালুর রহমান বলেন, টঙ্গী সরকারি হাসপাতালে ইজতেমা উপলক্ষ্যে অস্থায়ীভাবে শয্যাসংখ্যা বাড়ানো হয়েছে। সেই সঙ্গে মুসল্লিদের স্বাস্থ্যসেবায় ৮টি মেডিকেল ক্যাম্প পরিচালিত হবে। এছাড়াও বক্ষব্যাধি/অ্যাজমা ইউনিট, হৃদরোগ ইউনিট, ট্রমা (অর্থোপেডিক) ইউনিট, বার্ন ইউনিট, ডায়রিয়া ইউনিট, স্যানিটেশন টিম ও ১১টি অ্যাম্বুলেন্সের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে।


Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম