সীমান্ত সম্মেলন ফেব্রুয়ারিতে
ভারতের সঙ্গে এবার কথা বলার টোন হবে আলাদা: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা
বিশেষ প্রতিনিধি
প্রকাশ: ৩০ জানুয়ারি ২০২৫, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
ছবি: সংগৃহীত
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেছেন, ১৭ থেকে ২০ ফেব্রুয়ারি ভারতের দিল্লিতে বিজিবি-বিএসএফের মহাপরিচালক পর্যায়ে সীমান্ত সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে। সেখানে সীমান্ত হত্যা ও মাদকের কারবারসহ সব সমস্যা নিয়ে অতীতের তুলনায় ‘ভিন্ন সুরে’ কথা হবে। সীমান্ত হত্যা বন্ধ, ১৫০ গজের মধ্যে স্থাপনা নির্মাণ, নদী সমস্যাসহ বৈঠকে যেসব বিষয়ে আলোচনা হবে সেসব বিষয়ে আমরা কোনো ছাড় দেব না। এবার কথা বলার টোন আলাদা হবে। সীমান্ত সম্মেলন সামনে রেখে বুধবার সচিবালয়ে একটি প্রস্তুতিমূলক সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভা শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা।
জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেন, দুই দেশের সীমান্ত রক্ষীবাহিনীর প্রধান ছাড়াও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধি, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধি, বাংলাদেশ জরিপ অধিদপ্তরের প্রতিনিধি, ভূমি রেকর্ড অধিদপ্তরের প্রতিনিধি, যৌথ নদী কমিশনের প্রতিনিধি সম্মেলনে উপস্থিত থাকবেন। তিনি বলেন, বৈঠকে বিএসএফ এবং ভারতীয় দুষ্কৃতকারী কর্তৃক বাংলাদেশের নিরীহ নাগরিকদের ওপর গুলি চালিয়ে আহত বা সীমান্ত হত্যা বন্ধ করা, বাংলাদেশ কৃষকদের সীমান্ত এলাকা থেকে ধরে নিয়ে যাওয়াার ঘটনা বন্ধ করা, ভারতীয় নাগরিকের সীমান্ত লঙ্ঘন করে দেশে প্রবেশ বন্ধ করা, সীমান্ত এলাকায় ফেনসিডিলসহ মাদক কারখানা বন্ধ করা, সীমান্ত এলাকায় ১৫০ গজের ভেতরে অনুমতি ছাড়া কাজ বন্ধ করার বিষয়ে আলোচনা হবে।
আগরতলা দিয়ে শিল্পবর্জ্য বাংলাদেশে আসা বন্ধ করা, নদীর পানি সুষম বণ্টনের লক্ষ্যে পানি চুক্তি বাস্তবায়ন করা এবং ফেনীর মুহুরীর চরে বর্ডার পিলার স্থাপন করে সীমানা নির্ধারণ করার বিষয়ও আলোচনার টেবিলে থাকবে বলে জানিয়েছেন উপদেষ্টা। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর সরকারে পালাবদলের পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে বাংলাদেশ নিয়ে ভারতীয় সংবাদমাধ্যমে ‘বহু ভুয়া খবর’ প্রচারের বিষয়টি কয়েক মাস ধরে আলোচনায় আছে। এ বিষয়টিও থাকছে আলোচনায়। কো-অর্ডিনেটেড বর্ডার ম্যানেজমেন্ট প্ল্যানও এবারের বৈঠকে আলোচনার এজেন্ডায় রাখা হয়েছে। বাংলাদেশ-ভারতের পারস্পরিক আস্থা বাড়ানোর উপায় নিয়েও আলোচনা হবে বলে জানান উপদেষ্টা।
উপদেষ্টা বলেন, ২০১১ সালে ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের তিনবিঘা ও দহগ্রাম করিডর নিয়ে একটি অসম চুক্তি হয়েছে। তাছাড়া মহিষাশন (ভারত)-কুলাউড়া (বাংলাদেশ) আন্তঃদেশীয় রেলপথের কুলাউড়া রেলস্টেশন সীমান্ত থেকে প্রায় তিন কিলোমিটার ভেতরে অবস্থিত। আমরা তাদের আমাদের বর্ডারের তিন কিলোমিটার ভেতরে আসতে দেব না। সেখানে সীমান্তের কাছে কাস্টমসসহ একটা ইমিগ্রেশন চেকপোস্ট নির্মাণের প্রস্তাব করা হবে।
লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেন, সীমান্তে ১৫০ গজের মধ্যে কোনো কাজ করতে হলে দুই পক্ষের অনুমতি নিতে হয়। এগুলো একপক্ষে করার নিয়ম নেই। উন্নয়নমূলকভাবে একটা মসজিদ বা মন্দির করতে হলে দুই দেশের সম্মতি নেওয়া প্রয়োজন। আগামীতে কিছু করতে হলে যেন তারা সম্মতি নেয় এ বিষয়টিতে গুরুত্ব দেওয়া হবে।
ভারতের সঙ্গে সম্পর্কের আস্থা বাড়াতে বাংলাদেশ কোনো ছাড় দেবে কিনা জানতে চাইলে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে উপদেষ্টা বলেন, শুধু ছাড় দিয়ে কিন্তু আস্থা বাড়ানো যায় না। আলোচনার মাধ্যমেও আস্থা বাড়ানো যায়। তিনি বলেন, সীমান্তবর্তী এলাকায় ভারতীয়রা অনেক সময় ফেনসিডিলসহ বিভিন্ন মাদক তৈরি করে আমাদের দেশে ঢুকিয়ে দেয়। যদিও তারা বলে ফেনসিডিলগুলো ওষুধ হিসাবে তৈরি করছে। আসলে এটা মাদক হিসাবেই ব্যবহৃত হচ্ছে।
ভারতকে কোনো বিষয়ে ছাড় দেওয়া হবে না-বিজিবি প্রধান : বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) মহাপরিচালক (ডিজি) মেজর জেনারেল মোহাম্মদ আশরাফুজ্জামান সিদ্দিকী বলেছেন, ভারতের সঙ্গে যে বিষয়গুলোতে আমরা মনে করছি যে বঞ্চিত হয়েছি, সে বিষয়গুলোতে কোনো ছাড় দেব না। বুধবার সচিবালয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে বিজিবি-বিএসএফ মহাপরিচালক পর্যায়ে সীমান্ত সম্মেলন সংক্রান্ত সংবাদ সম্মেলনে এ কথা বলেন তিনি।
মহাপরিচালক বলেন, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে বলেছি ভারতের সঙ্গে অসম চুক্তিগুলো নিয়ে কাজ করতে। ডিপ্লোম্যাটিক চ্যানেলে এটা সমাধান করা হবে। আমাদের পক্ষ থেকে কোনো ছাড় দেওয়া হবে না। যেগুলোতে আমরা মনে করছি যে আমরা বঞ্চিত হয়েছি, সে বিষয়গুলোতে কোনো ছাড় দেব না।